স্থলপথে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য আমদানি বন্ধ করলো ভারত

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ০১: ৫০
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১২: ০৪

স্থলপথে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের আমদানি বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। ঘোষণা মতে- পাট ও পাটজাতীয় পণ্যের কাপড়, পাটের দড়ি বা রশি, পাটজাতীয় পণ্য দিয়ে তৈরি দড়ি বা রশি, করডেজ, টুইন এবং পাটের স্যাক ও ব্যাগ এখন থেকে বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত দিয়ে আমদানি করা যাবে না। তবে এসব পণ্য শুধু মহারাষ্ট্রের নাভাশেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করতে হবে বলে এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়।

এর আগে জুন মাসে ভারত কিছু পাটজাত পণ্যের স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল। গত কয়েক মাসে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য কিছু পণ্যের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, পাশাপাশি ট্রানজিশিপমেন্ট সুবিধাও বাতিল করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উত্তেজনা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির একটি ইঙ্গিত। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের কিছু বক্তব্য এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গ দুদেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে।

২০২৩–২৪ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ভারতের রপ্তানি দাঁড়ায় প্রায় ১১.৪৬ বিলিয়ন ডলার এবং আমদানি প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য ভারতের এই নতুন বিধিনিষেধ কয়েকটি সরাসরি ও পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পার— বিশেষ করে যারা পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেন।

পরিবহন খরচ বৃদ্ধি: আগে সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর (যেমন বেনাপোল–পেট্রাপোল) দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে পণ্য পাঠানো যেত। এখন শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রের নাভা শেবা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে হবে, যা জাহাজে পাঠাতে হয় এবং সময় ও খরচ দুই-ই বাড়াবে। সমুদ্রপথে পাঠাতে হলে শিপিং চার্জ, হ্যান্ডলিং ফি, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি মিলিয়ে খরচ অনেক বেড়ে যাবে।

ডেলিভারি টাইম দীর্ঘ হবে: স্থলপথে কয়েক দিনে ডেলিভারি সম্ভব হলেও সমুদ্রপথে ২–৩ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। ভারতীয় ক্রেতারা দ্রুত সাপ্লাই পেতে চাইলে তারা বিকল্প সরবরাহকারী বেছে নিতে পারে।

অর্ডার কমে যেতে পারে: দাম বাড়া ও সময় বেশি লাগার কারণে ভারতীয় আমদানিকারকরা স্থানীয় উৎপাদক বা অন্য দেশের সরবরাহকারীর দিকে ঝুঁকতে পারেন। এতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের অর্ডার ভলিউম কমে যেতে পারে।

লজিস্টিক জটিলতা: নাভা শেবা বন্দর বাংলাদেশের সব রপ্তানিকারকের কাছে লজিস্টিক্যালি সহজ নয়। তাদের পণ্য আগে চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দরে নিতে হবে, সেখান থেকে সমুদ্র পথে মহারাষ্ট্রে পাঠাতে হবে।

প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল হওয়া: ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাটজাত পণ্যের বাজার। স্থল রুট বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশি পণ্য ভারতের বাজারে দাম ও সময়ের দিক থেকে কম প্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়বে।

বাজার বহুমুখীকরণের চাপ: এই ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় রপ্তানিকারকদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে— যেমন ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য বা এশিয়ার অন্য দেশগুলো। কিন্তু নতুন বাজারে প্রবেশ করা সময়সাপেক্ষ ও বিনিয়োগ-নির্ভর।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত