ফরেনসিক অডিটের ভিত্তিতে ৩৫ কোটি ডলার ফেরত চেয়েছে ইউসিবি

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ২০: ১৫

ফরেনসিক অডিটের অকাট্য তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের কোম্পানিজ হাউসে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন ৩৫ কোটি ডলার ফেরত চেয়েছে ইউসিবি। এই অর্থ ইউসিবির ফরেনসিক অডিটের তথ্য অনুযায়ী ইউসিবি থেকে পাচার করা।

বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইউসিবি যুক্তরাজ্যের কোম্পানিজ হাউসে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রায় ২৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৩৫ কোটি ডলার) ফেরতের দাবি জানিয়েছে তারা।

বিজ্ঞাপন

গত সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফে। প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন তিন শতাধিক প্রপার্টি, যার মূল্য প্রায় ১৭ কোটি পাউন্ড, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে যা কেনা হয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের গ্র্যান্ট থর্নটন প্রশাসকরা এসব সম্পদের একটি অংশ বিক্রি করে ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। ঋণদাতাদের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুরের ডিবিএস ব্যাংক, ব্রিটিশ আরব কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং বাংলাদেশের ইউসিবি।

উল্লেখ্য, গত কয়েকমাস ধরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ইউসিবির সাবেক পরিচালনা পর্ষদের ব্যাপক দুর্নীতি, বড় অঙ্কের অর্থপাচার এবং অনৈতিক লেনদেনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পুরনো পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করলে এই প্রভাবশালী মহল বাদ পড়ে।

এরই মধ্যে ইউসিবির নিজস্ব ফরেনসিক অডিট, দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে প্রাক্তন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম পাওয়া যায়। বেনামি, কাগুজে কোম্পানির মাধ্যমে লোন পাস করিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে টাকা সরানোর প্রমাণ মেলে। এসব অর্থ দেশের বাইরে পাচার করে লন্ডন-দুবাইয়ে বাড়ি কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউসিবি সেই অর্থই ফেরত চেয়ে আবেদন করেছে।

এরই মধ্যে গত জুলাই মাসে দুদকের দায়ের করা মামলায় আদালতের নির্দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও সাবেক ইউসিবি চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, তার স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ সাত সাবেক পরিচালকের মোট ৫৭০ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। এ তালিকায় বশির আহমেদ, আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এম এ সবুর, বজল আহমেদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী এবং রুক্সানা জামানও রয়েছেন।

কিন্তু শেয়ার বাজেয়াপ্ত হওয়া ও ব্যাংকটিকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করা কয়েকজন সাবেক পরিচালক আদালতে আবেদন করে ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বন্ধের চেষ্টা চালান, যদিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বশির আহমেদ যিনি একাধিক অর্থপাচারের মামলায় অভিযুক্ত, বিদেশ ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছেন, শওকত আজিজ রাসেল, যিনি গুরুতর আর্থিক সংকটে রয়েছেন, তার ঋণের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা অতিক্রান্ত অবস্থায় এবং আরও প্রায় ১,৯০০ কোটি টাকার ঋণ আদালতের স্টে অর্ডারের কারণে ডিফল্টার হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে এবং এম এ সবুর, যিনি সাবেক পরিচালনা পর্ষদের ঘনিষ্ঠ, দুর্বল প্রশাসন ও ভেতরের স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ তৈরির অভিযোগে অভিযুক্ত।

বর্তমান ইউসিবি কর্তৃপক্ষ অতীতের সব অনিয়মকে পেছনে ফেলে তারা গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই দৃঢ় পদক্ষেপের ফলস্বরূপ ইউসিবির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরে এসেছে। ২০২৪ সালের পুরো বছরের তুলনায় ২০২৫ সালের প্রথম ৭ মাসেই ব্যাংকটির নেট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি ২০০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ গ্রাহকের আমানত রক্ষার্থে তাদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ইউসিবিতে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। সংকট মোকাবিলায় এবং ব্যাংককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে যে সাহসী সিদ্ধান্ত ও সংস্কার প্রয়োজন, তা তারা গ্রহণ করছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত