আমেরিকার পণ্য আমদানি

গড় শুল্ক ৭৪ শতাংশের দাবি কতটা সঠিক

কাওসার আলম
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৩: ২১

আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে গড়ে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন কোন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা আছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই গড়হার ৭৪ শতাংশ হবে না, বরং এ হার অনেক কম। ফলে গড় ৭৪ শতাংশ শুল্কহার ধরে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমেরিকার ৩৭ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণের বিষয়টির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

তবে ট্যারিফ নির্ধারণে প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করেছে আমেরিকা। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাণিজ্য ঘাটতিকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ দিয়ে ভাগ করে যা পাওয়া যায়, তা শতাংশ ধরে ট্যারিফ নির্ধারণ করেছে দেশটি। বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬.২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে তার চেয়ে ৬.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে। বিপরীতে বাংলাদেশ আমেরিকায় রপ্তানি করেছে ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যঘাটতি এবং আমেরিকায় বাংলাদেশের রপ্তানির অনুপাত দাঁড়ায় ৭৩.৮০ শতাংশ। এ হিসাব ধরেই আমেরিকা গড় শুল্ক হিসাব করেছে ৭৪ শতাংশ। তবে হিসাবের এ পদ্ধতি নিয়ে নানা মহলেই প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানিতে ২০২২-২৩ সালে গড় শুল্কের হার ছিল ১৫.০৯ শতাংশ। গড় প্রতিরক্ষণ শুল্কের হার ছিল ৩০.৫৮ শতাংশ। এর আগের বছর গড় শুল্কের হার ছিল ১৪.৭৫ শতাংশ এবং গড় প্রতিরক্ষণ শুল্ক হার ছিল ২৯.৪২ শতাংশ। তবে ১৯৯১-৯২ সালে গড় শুল্কহার ছিল ৭০.৬৪ শতাংশ এবং গড় প্রতিরক্ষণ শুল্ক ছিল ৭৩.৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ তিন দশক আগে আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানিতে গড় শুল্কের হার ৭০ শতাংশের বেশি ছিল। কিন্তু এরপর গড় শুল্কের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। গত দুই দশকে গড় শুল্কহার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশের ঘরেই অবস্থান করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি করে আয়রন। প্রকারভেদে আয়রন আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আছে। এরপর তুলার ক্ষেত্রেও ট্যারিফের হার ৪০ শতাংশেরও কম। বাংলাদেশ আয়রন ও তুলা ছাড়াও শিল্পের জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি, অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে। কিন্তু আমদানিকৃত এসব পণ্যের কোনোটিরই উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা নেই। ফলে আমেরিকা গড় আমদানি শুল্ক ৭৪ শতাংশ নির্ধারণ করলেও তা বাস্তবসম্মত নয়।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমার দেশকে বলেন, আমেরিকা যে পদ্ধতিতে ট্যারিফ হিসাব করেছে, সেটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এখন তারা ট্যারিফ কমানোর বিষয়ে যেসব মূল্যায়ন করেছে সেগুলোর ভিত্তিতে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাণিজ্যের খরচ কমাতে হবে। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমেরিকার বায়াররা পণ্যের দর কমানোর জন্য বার্গেইন করতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই এটা করা উচিত হবে না। একই সঙ্গে ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে যদি সরকার আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে সেটি আত্মঘাতী হবে। বরং আমাদের কপি রাইট, পেটেন্ট আইন, ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসহ যেসব আইন রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত