অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি

কাওসার আলম

এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ), মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এসব আলোচনায় প্রতিনিধি প্রেরণ, তাদের দক্ষতা-যোগ্যতাসহ সব ধরনের প্রস্তুতিতে বড় ঘাটতি লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব না দেওয়া হলে বাংলাদেশ এসব বিষয় থেকে লাভবান হতে পারবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ চুক্তিতে উপনীত হতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ছয় রাউন্ডের বৈঠক হয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইপিএ বা এফটিএ নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিংবা শুরু হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তবে এসব অর্থনৈতিক চুক্তিতে অংশগ্রহণে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ দেশের সঙ্গে দরকষাকষিতে কতটা সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে কিংবা কতটা প্রস্তুতি নিয়ে দরকষাকষিতে অংশ নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এফটিএ অথবা সিইপিএ সম্পাদনে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তুতকৃত খসড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে গত ১৬ অক্টোবর কর্মশালার আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এফটিএ অনুবিভাগ। মূলত এ বিভাগটিই অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর বা সংস্থার প্রতিনিধিদের ওই কর্মশালায় অংশ নেওয়ার জন্য ৯ অক্টোবর একটি চিঠি ইস্যু করে এফটিএ শাখা। অর্থাৎ, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ওই চিঠিটি ইস্যু করা হয়। কোনো ধরনের সংযুক্তি (ডকুমেন্ট) ছাড়াই ইস্যু করা ওই চিঠিতে মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থা মিলিয়ে ৪২ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য বলা হয়। মন্ত্রণালয় ঘুরে সেই চিঠি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছাতে পার হয়ে যায় চার-পাঁচ দিন। ফলে কর্মশালা শুরুর একদিন বা দুদিন আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থা থেকে একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু সে কর্মশালায় কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এবং তাতে দপ্তরের পক্ষ থেকে কী ধরনের মতামত দিতে হবে—সে বিষয়ে কারো কোনো ধারণা ছিল না। ফলে ওই কর্মশালাটি কেবল আনুষ্ঠানিকতা বা রুটিন ওয়ার্ক বলেই মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও দপ্তরের কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা বলেন, কোনো সংযুক্তি না থাকায় প্রস্তুতি ছাড়াই কর্মকর্তাদের কর্মশালায় অংশ নিতে হয়েছে। এ ধরনের কর্মশালার আলোচ্য বিষয় এক মাস আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে লিখিত মতামত নেওয়া যেত। ওইসব লিখিত মতামত সমন্বয় করে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হলে এটি ফলপ্রসূ হতে পারত।
অপরদিকে কর্মশালায় অংশগ্রহণে মনোনীত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘উপযুক্ত প্রতিনিধি’ প্রেরণের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তার কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে, সে বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ ছিল না। কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি মনোনয়নের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে। ফলে অনুপযুক্ত কর্মকর্তাও মনোনয়ন পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দরকষাকষিতে আমাদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু আমরা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করছি, এটি এক বড় প্রশ্ন।
প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয়ে ওই কর্মশালার আরো একটি উদাহরণ তুলে ধরা যেতে পারে। ওই কর্মশালায় একটি দপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হন উপপরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। কিন্তু ওই কর্মশালায় অংশগ্রহণে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি পাননি তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আমার দেশকে বলেন, সচিবালয়ে প্রবেশে অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পাঠিয়েছি এবং তিনি সেটা দেখেছেন; কিন্তু উত্তর দেননি। ফলে ওই কর্মশালায় আমি যেতে পারিনি এবং এটি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। শুধু একটি সংস্থার ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে কি না—সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, সব সংস্থার প্রতিনিধি কিন্তু সব সময় উপস্থিত থাকেন না।
কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের বৃহৎ রপ্তানি বাজার। রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানি করতে পারছি। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশ সে সুবিধা পাবে না। এখন বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের মুক্তবাণিজ্য চুক্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চুক্তি করতে হবে। এ ধরনের চুক্তি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে প্রস্তুতিতে যাতে কোনো ধরনের ঘাটতি না থাকে, সে বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে প্রস্তুতিতে বড় ধরনের ঘাটতি আছে বলেই মনে হচ্ছে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে অতিরিক্ত সচিব ও এফটিএ অনুবিভাগের প্রধান আয়েশা আক্তারের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ চুক্তিতে উপনীত হতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ছয় রাউন্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওইসব বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, নেগোসিয়েশনের প্রতিটি পর্বে জাপানের পক্ষে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা ছিলেন খুবই পেশাদার। যথেষ্ট হোম ওয়ার্ক করেই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তারা। সিস্টেমেটিক ওয়েতে এবং বিষয়বস্তুর ওপর ফোকাস রেখে তারা আলোচনা করেছেন। টিম লিডার আলোচনার সূত্রপাত করেন এবং প্রতিনিধিদলের কোন ব্যক্তি কি বিষয়ে আলোচনা করবেন, তা নির্দিষ্ট করে দেন। একজন যখন আলোচনায় অংশ নেন, তখন অন্য সদস্যরা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন; প্রয়োজনীয় রেফারেন্স উপস্থাপন করেন। কেউবা নোট নেন এবং টিমের প্রত্যেক সদস্য নানাভাবে সম্পৃক্ত থাকেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের প্রতিনিধিদের তুলনা করে কর্মকর্তারা জানান, জাপানের যেসব প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন, নেগোসিয়েশনে তাদের অনেকেরই ২০-২৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে তারা খুবই অভিজ্ঞ। তারাই সাধারণত গ্রুপগুলোতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। অভিজ্ঞদের পাশাপাশি আরো দুই স্তরের কর্মকর্তা থাকেন ওই প্রতিনিধিদলে।
এর ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। কর্মকর্তারা বলেন, অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। ফলে এখানে অভিজ্ঞতার যেমন ঘাটতি রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রস্তুতির অভাবও। বাংলাদেশের যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের মধ্যে এক ধরনের গাছাড়া ভাবও দেখা গেছে। হয়তো দেখা যায়, একটি ইস্যুতে গ্রুপের একজন বা দুজন সদস্য আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন, বাকিরা অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউ কেউ আবার ব্যস্ত মোবাইল ফোন নিয়ে। কেউ অপ্রয়োজনীয়ভাবে আলোচনার টেবিল ছেড়ে উঠে যাচ্ছেন; কিংবা অন্যদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে ওঠেন। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগ কর্মকর্তার মধ্যে এমন প্রবণতাই দেখা গেছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান নেই—এমন কর্মকর্তাও এসব আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
আবার দেখা যাচ্ছে, আলোচনার শুরুতে যারা অংশ নিচ্ছেন, মাঝপথে তাদেরই একটি বড় অংশ আর আলোচনায় থাকছেন না। তাদের অনেকে হয়তো অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন কিংবা অন্য কোনো কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ফলে আলোচনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে না।
কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে—এটা সত্য। কিন্তু আমাদের যারা প্রতিপক্ষ, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। আমাদের সে শেখার আগ্রহও নেই।
অংশীদারত্বমূলক আলোচনা হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে হয়ে থাকে। বাংলাদেশে যখন আলোচনা হয়, তখন যেসব কর্মকর্তা অংশ নেন, তার খুব কমসংখ্যকই অ্যাওয়ে রাউন্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। বাংলাদেশে যদি কোনো একটি গ্রুপে ১০ জন আলোচক অংশ নেন, অ্যাওয়ে আলোচনায় হয়তো দুজন অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু জাপানের যতজন হোমে অংশ নিচ্ছেন, ততজন অ্যাওয়েতেও অংশ নেন। ফলে অ্যাওয়ে রাউন্ড আলোচনায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমানতালে পেরে ওঠা কঠিন হয়। বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিনিধি জুমে অংশ নিলেও এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের প্রস্তুতি এবং এ বিষয়ে করণীয় জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী প্রধান ড. এম মাসরুর রিয়াজ আমার দেশকে বলেন, বর্তমানে যেসব দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার রয়েছে এবং ভবিষ্যতে সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, এ ধরনের দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি করতে হবে। কিন্তু যেনতেনভাবে এটি করা হলে তার সুফল পাওয়া নাও যেতে পারে। এ ধরনের চুক্তির জন্য কৌশল লাগবে। বিভিন্ন দেশে এফটিএ পলিসি রয়েছে। সেই পলিসির আলোকে সরকারগুলো কাজ করে থাকে। আমাদেরও এ ধরনের পলিসি তৈরি করতে হবে, যাতে সরকারের সংস্থাগুলো তাদের করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি আমাদের নেগোসিয়েশন ও টেকনিক্যাল ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। নেগোসিয়েশনের জন্য একটি এক্সপার্ট পুল থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এতে সরকারের বাইরে যেসব এক্সপার্ট রয়েছেন, তাদেরও পুলে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ), মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এসব আলোচনায় প্রতিনিধি প্রেরণ, তাদের দক্ষতা-যোগ্যতাসহ সব ধরনের প্রস্তুতিতে বড় ঘাটতি লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব না দেওয়া হলে বাংলাদেশ এসব বিষয় থেকে লাভবান হতে পারবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ চুক্তিতে উপনীত হতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ছয় রাউন্ডের বৈঠক হয়। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইপিএ বা এফটিএ নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিংবা শুরু হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তবে এসব অর্থনৈতিক চুক্তিতে অংশগ্রহণে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ দেশের সঙ্গে দরকষাকষিতে কতটা সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে কিংবা কতটা প্রস্তুতি নিয়ে দরকষাকষিতে অংশ নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এফটিএ অথবা সিইপিএ সম্পাদনে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তুতকৃত খসড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে গত ১৬ অক্টোবর কর্মশালার আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এফটিএ অনুবিভাগ। মূলত এ বিভাগটিই অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর বা সংস্থার প্রতিনিধিদের ওই কর্মশালায় অংশ নেওয়ার জন্য ৯ অক্টোবর একটি চিঠি ইস্যু করে এফটিএ শাখা। অর্থাৎ, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ওই চিঠিটি ইস্যু করা হয়। কোনো ধরনের সংযুক্তি (ডকুমেন্ট) ছাড়াই ইস্যু করা ওই চিঠিতে মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থা মিলিয়ে ৪২ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য বলা হয়। মন্ত্রণালয় ঘুরে সেই চিঠি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছাতে পার হয়ে যায় চার-পাঁচ দিন। ফলে কর্মশালা শুরুর একদিন বা দুদিন আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থা থেকে একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু সে কর্মশালায় কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এবং তাতে দপ্তরের পক্ষ থেকে কী ধরনের মতামত দিতে হবে—সে বিষয়ে কারো কোনো ধারণা ছিল না। ফলে ওই কর্মশালাটি কেবল আনুষ্ঠানিকতা বা রুটিন ওয়ার্ক বলেই মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও দপ্তরের কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা বলেন, কোনো সংযুক্তি না থাকায় প্রস্তুতি ছাড়াই কর্মকর্তাদের কর্মশালায় অংশ নিতে হয়েছে। এ ধরনের কর্মশালার আলোচ্য বিষয় এক মাস আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে লিখিত মতামত নেওয়া যেত। ওইসব লিখিত মতামত সমন্বয় করে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হলে এটি ফলপ্রসূ হতে পারত।
অপরদিকে কর্মশালায় অংশগ্রহণে মনোনীত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘উপযুক্ত প্রতিনিধি’ প্রেরণের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তার কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে, সে বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ ছিল না। কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি মনোনয়নের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ইচ্ছাধীন হয়ে থাকে। ফলে অনুপযুক্ত কর্মকর্তাও মনোনয়ন পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দরকষাকষিতে আমাদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু আমরা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করছি, এটি এক বড় প্রশ্ন।
প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয়ে ওই কর্মশালার আরো একটি উদাহরণ তুলে ধরা যেতে পারে। ওই কর্মশালায় একটি দপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হন উপপরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। কিন্তু ওই কর্মশালায় অংশগ্রহণে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি পাননি তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আমার দেশকে বলেন, সচিবালয়ে প্রবেশে অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পাঠিয়েছি এবং তিনি সেটা দেখেছেন; কিন্তু উত্তর দেননি। ফলে ওই কর্মশালায় আমি যেতে পারিনি এবং এটি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। শুধু একটি সংস্থার ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে কি না—সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, সব সংস্থার প্রতিনিধি কিন্তু সব সময় উপস্থিত থাকেন না।
কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের বৃহৎ রপ্তানি বাজার। রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানি করতে পারছি। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশ সে সুবিধা পাবে না। এখন বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের মুক্তবাণিজ্য চুক্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চুক্তি করতে হবে। এ ধরনের চুক্তি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে প্রস্তুতিতে যাতে কোনো ধরনের ঘাটতি না থাকে, সে বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে প্রস্তুতিতে বড় ধরনের ঘাটতি আছে বলেই মনে হচ্ছে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে অতিরিক্ত সচিব ও এফটিএ অনুবিভাগের প্রধান আয়েশা আক্তারের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ চুক্তিতে উপনীত হতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ছয় রাউন্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওইসব বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, নেগোসিয়েশনের প্রতিটি পর্বে জাপানের পক্ষে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা ছিলেন খুবই পেশাদার। যথেষ্ট হোম ওয়ার্ক করেই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তারা। সিস্টেমেটিক ওয়েতে এবং বিষয়বস্তুর ওপর ফোকাস রেখে তারা আলোচনা করেছেন। টিম লিডার আলোচনার সূত্রপাত করেন এবং প্রতিনিধিদলের কোন ব্যক্তি কি বিষয়ে আলোচনা করবেন, তা নির্দিষ্ট করে দেন। একজন যখন আলোচনায় অংশ নেন, তখন অন্য সদস্যরা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন; প্রয়োজনীয় রেফারেন্স উপস্থাপন করেন। কেউবা নোট নেন এবং টিমের প্রত্যেক সদস্য নানাভাবে সম্পৃক্ত থাকেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের প্রতিনিধিদের তুলনা করে কর্মকর্তারা জানান, জাপানের যেসব প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন, নেগোসিয়েশনে তাদের অনেকেরই ২০-২৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে তারা খুবই অভিজ্ঞ। তারাই সাধারণত গ্রুপগুলোতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। অভিজ্ঞদের পাশাপাশি আরো দুই স্তরের কর্মকর্তা থাকেন ওই প্রতিনিধিদলে।
এর ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। কর্মকর্তারা বলেন, অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। ফলে এখানে অভিজ্ঞতার যেমন ঘাটতি রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রস্তুতির অভাবও। বাংলাদেশের যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের মধ্যে এক ধরনের গাছাড়া ভাবও দেখা গেছে। হয়তো দেখা যায়, একটি ইস্যুতে গ্রুপের একজন বা দুজন সদস্য আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন, বাকিরা অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউ কেউ আবার ব্যস্ত মোবাইল ফোন নিয়ে। কেউ অপ্রয়োজনীয়ভাবে আলোচনার টেবিল ছেড়ে উঠে যাচ্ছেন; কিংবা অন্যদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে ওঠেন। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগ কর্মকর্তার মধ্যে এমন প্রবণতাই দেখা গেছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান নেই—এমন কর্মকর্তাও এসব আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
আবার দেখা যাচ্ছে, আলোচনার শুরুতে যারা অংশ নিচ্ছেন, মাঝপথে তাদেরই একটি বড় অংশ আর আলোচনায় থাকছেন না। তাদের অনেকে হয়তো অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন কিংবা অন্য কোনো কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ফলে আলোচনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে না।
কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে—এটা সত্য। কিন্তু আমাদের যারা প্রতিপক্ষ, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। আমাদের সে শেখার আগ্রহও নেই।
অংশীদারত্বমূলক আলোচনা হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে হয়ে থাকে। বাংলাদেশে যখন আলোচনা হয়, তখন যেসব কর্মকর্তা অংশ নেন, তার খুব কমসংখ্যকই অ্যাওয়ে রাউন্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। বাংলাদেশে যদি কোনো একটি গ্রুপে ১০ জন আলোচক অংশ নেন, অ্যাওয়ে আলোচনায় হয়তো দুজন অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু জাপানের যতজন হোমে অংশ নিচ্ছেন, ততজন অ্যাওয়েতেও অংশ নেন। ফলে অ্যাওয়ে রাউন্ড আলোচনায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমানতালে পেরে ওঠা কঠিন হয়। বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিনিধি জুমে অংশ নিলেও এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের প্রস্তুতি এবং এ বিষয়ে করণীয় জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী প্রধান ড. এম মাসরুর রিয়াজ আমার দেশকে বলেন, বর্তমানে যেসব দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার রয়েছে এবং ভবিষ্যতে সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, এ ধরনের দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি করতে হবে। কিন্তু যেনতেনভাবে এটি করা হলে তার সুফল পাওয়া নাও যেতে পারে। এ ধরনের চুক্তির জন্য কৌশল লাগবে। বিভিন্ন দেশে এফটিএ পলিসি রয়েছে। সেই পলিসির আলোকে সরকারগুলো কাজ করে থাকে। আমাদেরও এ ধরনের পলিসি তৈরি করতে হবে, যাতে সরকারের সংস্থাগুলো তাদের করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি আমাদের নেগোসিয়েশন ও টেকনিক্যাল ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। নেগোসিয়েশনের জন্য একটি এক্সপার্ট পুল থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এতে সরকারের বাইরে যেসব এক্সপার্ট রয়েছেন, তাদেরও পুলে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

যমুনা ব্যাংক পিএলসি-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিওও মো. আব্দুস সালামের উপস্থিতিতে উপ-ব্যবস্থপনা পরিচালক এবং সিবিও নূর মোহাম্মদ এবং ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
১৩ মিনিট আগে
রূপালী ব্যাংক পিএলসি’র পরিচালনা পর্ষদের সাথে ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম (এসএমটি) এর সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার দিলকুশাস্থ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পর্ষদ কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২২ মিনিট আগে
ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) ও পিএসপির মধ্যে আন্তঃলেনদেন সেবা চালু হয়েছে। এ সেবায় অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হলেও শীর্ষ স্থানীয় এমএফএস বিকাশ নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্ত হয়নি। আর নগদকে যুক্ত হওয়ার অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এনিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন সেবা নগদ গত অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড করেছে। ওই মাসে প্রতিষ্ঠানটি ৩৪ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছে।
৪ ঘণ্টা আগে