রপ্তানিতে বিপুল সম্ভাবনার হাতছানি বাংলাদেশের

তিন বছরে ইউরোপে ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে হালাল কসমেটিকস বাজার

অর্থনীতি ডেস্ক
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৯: ৫৯

বিশ্বব্যাপী হালাল কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ শিল্পের বাজার বর্তমানে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। এই বাজারের অগ্রগতি বিশেষত মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, দুবাই, তুরস্ক এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব দেশে হালাল কসমেটিকস পণ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যার ফলে এ শিল্পে নতুন উদ্যোক্তারা প্রবেশ করছেন এবং প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত বর্তমানে এই বাজারের শীর্ষে অবস্থান করছে এবং বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। তবে, হালাল কসমেটিকস ব্যবহার ও বাজারের প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশ এখনও আমদানি নির্ভর, যেখানে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভেজাল বলে অভিযোগ উঠছে। এসব ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে ত্বকের ক্যানসারসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

দেশীয় উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ইউরোপের বাজারে আগামী তিন বছরে হালাল কসমেটিকস বাজার সৃষ্টি হবে প্রায় ১২.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিশাল বাজার টার্গেট নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কাজ শুরু করেছে। ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের বিশাল চাহিদা রয়েছে। এটি মাথায় রেখে হালাল কসমেটিকস পণ্যের রপ্তানির ওপর জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সম্প্রতি শত বিলিয়ন ডলারের হালাল কসমেটিকস বাজারে প্রবেশ করেছে, যা দেশের জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত রিমার্ক ব্র্যান্ডের পণ্য ইতিমধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সৌদি আরব ও আজারবাইজানে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছে। রিমার্ক কসমেটিকস বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) থেকে হালাল সার্টিফিকেট পেয়েছে এবং শীঘ্রই তাদের আরও শতাধিক পণ্য হালাল সার্টিফিকেট পাবে। রিমার্ক-এর লিলি ও অলিন ব্র্যান্ড বাংলাদেশের কসমেটিকস শিল্পে একটি ইতিবাচক ও বিশাল সম্ভাবনার সূচনা করেছে।

বিশ্বব্যাপী হালাল কসমেটিকস বাজার: বিশ্বব্যাপী হালাল কসমেটিকস উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম। এই দেশগুলোর হালাল কসমেটিকস পণ্য বিশ্বব্যাপী রপ্তানি করা হয়, যার মাধ্যমে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।

ইউরোপীয় হালাল কসমেটিকস বাজারের প্রবৃদ্ধি: ইউরোপীয় হালাল কসমেটিকস বাজারও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে ১২.৮৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস রয়েছে। ২০২২ সালে বাজারের আয় ছিল ৫,৮৯২.৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগামী কয়েক বছরে প্রায় ১৩.৮% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

এই বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হিসেবে সিন্থেটিক কসমেটিকসের ক্ষতিকারক প্রভাব এবং ইউরোপে মুসলিম জনগণের বৃদ্ধি বিশেষভাবে কাজ করছে। এছাড়া, নৈতিক ও রাসায়নিক-মুক্ত সৌন্দর্য পণ্যের প্রতি অমুসলিম গ্রাহকদের আগ্রহও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপীয় বাজারে নতুন স্টার্টআপগুলি প্রবেশ করছে এবং পুরনো ব্র্যান্ডগুলো তাদের পণ্য পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যময় করছে। ইন্টারনেট প্রবৃদ্ধি এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে অনলাইন খুচরা বিক্রয়ও হালাল কসমেটিকস ব্র্যান্ডগুলোর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে।

ইউরোপীয় হালাল কসমেটিকস বাজারটি বিভিন্ন ধরণে বিভক্ত—স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার, মেকআপ এবং অন্যান্য বিভাগে। ২০২২ সালে স্কিন কেয়ার ছিল বাজারের শীর্ষস্থানীয় বিভাগ। শ্রেণিভিত্তিক, বাজারটি পুরুষ, নারী এবং ইউনিসেক্স বিভাগে বিভক্ত। নারীদের মধ্যে বিশেষ করে হালাল কসমেটিকসের চাহিদা বেশি। দেশভিত্তিক, ইউরোপীয় বাজারটি জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে বিভক্ত। ২০২২ সালে রাশিয়া বাজারের সবচেয়ে বড় শেয়ার ধারণ করেছিল।

বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা: বাংলাদেশের বাজারে হালাল কসমেটিকস পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং রিমার্ক-এর মতো দেশীয় উদ্যোগের মাধ্যমে এই বাজারে রপ্তানি সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে, স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে পারে। বিশেষভাবে, বাংলাদেশি হালাল কসমেটিকস পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য স্থানীয় উদ্যোগগুলোর গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে।

হালাল কসমেটিকস বাজারের সম্প্রসারণে প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্থানীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী বিপণন কৌশল গ্রহণ করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে, ফ্রান্সে হালাল নেইল পলিশ এবং জার্মানিতে সুগন্ধি-মুক্ত বিকল্পের দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া, ই-কমার্স এবং খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে পার্টনারশিপ বাড়াতে হবে এবং পরিচিত হালাল সার্টিফিকেশন পাওয়ার মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সব মিলিয়ে, হালাল কসমেটিকস বাজারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৃদ্ধির সম্ভাবনা উজ্জ্বল এবং এর প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

তুরস্কের অবস্থান ও পরামর্শ: তুরস্কের একটি কসমেটিকস কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী মেহমেত আকিফ জানিয়েছেন, তুরস্ক ইতিমধ্যে বিশ্বের কসমেটিকস বাজারে তাদের আধিপত্য তৈরি করতে পেরেছে। মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্কের পণ্যের প্রতি মুসলমানদের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। আর হালাল কসমেটিকস পণ্যের বিষয়টি আরও গুরুত্ববহ।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক ও পাটপণ্যের ব্যাপক পরিচিতি আছে। বাংলাদেশ চাইলে ইউরোপের কসমেটিকস বাজারে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে। আর এটি হবে রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত