১ বছরের ব্যবধানে ই-কমার্সে লেনদেন বেড়েছে ৬৪ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১২: ১০

অনলাইনে পণ্য কেনাকাটায় ই-কমার্সের ওপর আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। টালমাটাল অর্থনীতি থেকে স্থিতিশীল অর্থনীতির কারণে দেশের এ গুরুত্বপূর্ণ খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের মাসিক অর্থনৈতিক আপডেটের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে ই-কমার্স লেনদেন বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ই-কমার্স লেনদেনের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ই-কমার্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লেনদেন তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল। ওই অর্থবছর ই-কমার্সের লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪২৬ কোটি থেকে ১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার মধ্যে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। মে মাসে এ লেনদেন দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৬৫ কোটিতে। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬৪ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

জিইডির এ বিশ্লেষণ বলছে, এই ঊর্ধ্বমুখী গতিপথ চিহ্নিত করে দেখা যায়, ই-কমার্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে সেপ্টেম্বর মাস থেকে। ওই মাস থেকে পরবর্তী সব মাসে গড়ে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটির ওপর লেনদেন হয়েছে।

দারাজ, ইভ্যালি (পুনর্গঠিত), চালডালের মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং ফ্যাশন, ইলেকট্রনিক্স ও মুদি পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম এই উত্থানের সুবিধা পেয়েছে। বিশ্লেষকরা এই বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করেছেন। বিশেষ করে বিশাল সংখ্যক গ্রাহক এ মুহূর্তে ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করেছে। দেশের ১৩ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক এ জগতে প্রবেশ করায় আরো বেশি পরিবার অনলাইন কেনাকাটায় জড়িত হচ্ছে। উন্নত সরবরাহ-ডেলিভারি কোম্পানি এবং কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর নেটওয়ার্ক আরো বেড়েছে।

এমনকি আধা-শহুরে এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোকেও ডেলিভারি সার্ভিসের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আরেকটি বড় সুবিধা হলো- ই-কমার্সগুলো মোবাইল লেনদেনের (এমএফএস) সঙ্গে একীভূত হয়েছে। ফলে অধিকাংশ গ্রাহক এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করে কেনাকাটা করছেন।

চলতি অর্থবছর অনলাইনে পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাটের হার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে অবশ্য চিন্তা বেড়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে ই-কমার্সে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ক্ষতির শঙ্কাই বেশি। ভ্যাট বাড়ানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় আছেন তারা।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে এখনো বিনিয়োগকারী কম, বাজারও দুর্বল। পাশাপাশি ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগও কম। এ খাতে ভ্যাট বাড়িয়ে সরকার কতটা রাজস্ব পাবে, তা-ও খুব একটা স্পষ্ট নয়। তারা বলেন, বাজেটে বিভিন্ন খাতে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সে তুলনায় এ খাত থেকে খুব নগণ্য অর্থ আদায় হবে। আর লোকসানে চলা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগের টাকা থেকেই বাড়তি ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।

আগে ই-কমার্স ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রেতারা ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) দিতেন। অর্থাৎ কোনো পণ্য বিক্রি করে ১০০ টাকা মুনাফা হলে ৫ টাকা ভ্যাট দিতে হতো; কিন্তু এখন সেই বিক্রেতাকে ভ্যাট দিতে হবে ১৫ টাকা।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ১২ কোটিরও বেশি নিবন্ধিত এমএফএস অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং সক্রিয় ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোও দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, অনলাইন বাণিজ্য একটি নতুন সীমানা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

বাংলাদেশে ই-কমার্স বাজার এখনো তুলনামূলক ছোট হলেও প্রবৃদ্ধির হার এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে যেমন অনলাইন খুচরা বাজারে আগেই বিপ্লব হয়েছে, বাংলাদেশ এখন সেই ধাপে প্রবেশ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ই-কমার্স বাজারের আকার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

সম্ভাবনার পাশাপাশি এ খাতের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষ করে এ খাতের বড় সমস্যা সময়মতো পণ্য ডেলিভারি। গ্রামীণ পর্যায়ে এখনো সময়মতো পণ্য পৌঁছে দেওয়া বড় সমস্যা। নকল ও নিম্নমানের পণ্য ই-কমার্সে অহরহ হওয়ায় অনেক গ্রাহক এখনো অনলাইন শপে আস্থা রাখতে পারছেন না। তা ছাড়া প্রতারণা, ফিশিং ও সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। রিটার্ন নীতি অস্পষ্টতা থাকায় ক্রেতারা সহজে পণ্য ফেরত দিতে না পারায় অসন্তুষ্ট হন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত