ট্রেজারি বিল-বন্ডে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে

রোহান রাজিব
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ২৯

নিরাপদ বিনিয়োগের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড। সঞ্চয়পত্রের মতো বিল ও বন্ড দিয়ে সরকার ঋণ নিয়ে থাকে। ব্যাংকের সুদহার বাড়তে থাকায় এসব পণ্যেরও সুদহার এখন ঊর্ধ্বমুখী। ব্যাংকের চেয়েও বেশি সুদ মিলছে বিল-বন্ডে। ফলে এ খাতে গত অর্থবছরে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৫১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ সময় ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ স্থিতি ছিল পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল চার লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত অর্থবছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে তিন হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা মোট বিনিয়োগের শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১০২ কোটি টাকা, যা মোট বিনিয়োগের শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি ব্যাংকের একজন এমডি বলেন, সাধারণত ট্রেজারি বিল-বন্ডের চেয়ে ব্যাংক আমানতে সুদহার ৫০ পয়সা বা এক টাকা বেশি থাকে। এখন ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার অনেক বেড়ে গেছে। তাই ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে এখনো ট্রেজারি বিল-বন্ডে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাইমারি ডিলার (পিডি) ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল ৩৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। নন-প্রাইমারি ডিলার (নন-পিডি) ব্যাংকের ২৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে এ বিনিয়োগ ছিল ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকায়, যা মোট বিনিয়োগের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। আমানত বিমা ট্রাস্টের বিনিয়োগ রয়েছে দুই দশমিক ৮৭ শতাংশ, সাধারণ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ, লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পাঁচ দশমিক ৫০ শতাংশ, করপোরেট সংস্থার দুই দশমিক ১৩ শতাংশ, বিনিয়োগ কোম্পানির শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ, প্রভিডেন্ট/পেনশন/ট্রাস্ট ও গ্র্যাচুইটি তহবিলের চার দশমিক ৫৩ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ডের শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ রয়েছে শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ।

গত অর্থবছরে সরকারের ঋণ চাহিদা বেশি থাকায় ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। প্রায় ১২ শতাংশে উঠে গিয়েছিল এ সুদহার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের ঋণের চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়ায় এবং ব্যাংকগুলোর আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সুদহার কমছে। এখন সুদের হার ১০ শতাংশে রয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এক লাখ ৭৩৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছিল ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।

ট্রেজারি বিল ও বন্ড হলো একটি স্বল্পমেয়াদি আর্থিক ঋণপত্র, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার জারি করে। সাধারণত এগুলো এক বছর বা এর কম মেয়াদি হয়ে থাকে। এটি একটি নিরাপদ এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবেও পরিচিত। কারণ এর ওপর সুদপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকে এবং সরকারের পক্ষে ইস্যু করা হয়। ট্রেজারি বিল ও বন্ড সাধারণত যেকোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি কিনতে পারে। তবে গত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের অতিরিক্ত তারল্য ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। ফলে বেসরকারি খাতে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ ছাড় হচ্ছে না।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার বেশি ঋণ নেওয়ায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বেশিরভাগ সময়ই বেসরকারি খাতে কমেছে ঋণ প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরেও একই ধারা বহাল রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে সার্বিকভাবে ব্যাংকের আমানত খুব বেশি না বাড়লেও ভালো ব্যাংকগুলোয় আমানতের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে অনেকে ভালো ব্যাংকে রাখছেন। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও কমে আসছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোয় তারল্য বাড়ছে। আর এ তারল্য ব্যাংকগুলো ঝুঁকিবিহীন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এখন সরকারের চাহিদা কিছুটা কমায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে চাইলেও বেশি বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও বেশি লাভের আশায় বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে ব্যাংকগুলো।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত