হঠাৎ অস্থির চালের বাজার, দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫, ২৩: ১৭

সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে গিয়েছে চালের দাম। ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে সিন্ডিকেটের কারসাজি বলছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। তবে মিলমালিকরা বলছেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের খুচরা বিক্রেতা ইমাম উদ্দিন বাবলু বলেন, ঈদের পর সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত। দাম বাড়ার কারণ মিলমালিকরা বলতে পারবেন। আমরা বাড়তি দামে কিনে বাড়তি দামেই বিক্রি করছি।

তিনি বলেন, ঈদের পরও খুচরায় তীর, রশিদ, সাগর কোম্পানির মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৭৫ টাকায়, কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই এসব কোম্পানির দাম এখন ৮০ টাকা। এ ছাড়া মোজাম্মেল ৮০-৮৫ টাকা, আটাশ চাল ৬০-৬৫ টাকা, পাইজাম ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য চালের দামও একই হারে বেড়েছে।

রাজধানীর বাবুবাজারের ইসলাম রাইস এজেন্সির আমজাদ হোসেন বলেন, কোম্পানিগুলো বস্তাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে মিলমালিকরা বলছেন ধানের দাম বাড়তি তাই দাম বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বাড়ানো অস্বাভাবিক বলে ক্রেতারা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাইকারি বাজারে বর্তমানে আটাশ চাল প্রতি বস্তা দুই হাজার ৮৫০ টাকা, সাগর মিনিকেট তিন হাজার ৭৫০ টাকা, মোজাম্মেল চার হাজার টাকা, তীর তিন হাজার ৬৫০ টাকা, মঞ্জু তিন হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পাইজাম ও নাজিরশাইল চালের দামও কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা হারে বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের চাঁদপুর রাইস এজেন্সির বাচ্চু মিয়া বলেন, মিলমালিকরা ধানের দাম বাড়তির কথা বলে হঠাৎ করে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা বৃদ্ধি করেছেন, এটা খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। মিলমালিকরা তো আর এখন ধান কিনছেন না, তারা অনেক আগেই ধান কিনে গোডাউন ভর্তি করে রেখেছেন। এটাকে তিনি মিলমালিকদের কারসাজি বলে আখ্যায়িত করেন। সেই সঙ্গে সরকারকে দ্রুত চাল আমদানির পরামর্শ দেন।

কারওয়ান বাজারে সবচেয়ে চালের পাইকারি বিক্রেতা জনতা রাইস এজেন্সির রাসেল মিয়া বলেন, ঈদের আগে মিলমালিকরা চাল নেওয়ার জন্য ফোন দিয়ে অনুরোধ করতেন, কিন্তু এখন ফোন দিলেও তারা রিসিভ করছেন না। ধানের দাম বাড়তির কথা বলছেন মিলমালিকরা।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম আকাশচুম্বী, কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও মুরগির ডিমের দাম কমেছে ডজনে ১০ টাকার মতো।

আজ রাজধানীর নয়াবাজার, কেরানীগঞ্জের বউবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার ওপর। যদিও কয়েকদিন আগে অধিকাংশ সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে ছিল।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা জাকিয়া বলেন, বেশ কিছুদিন সব ধরনের সবজির দাম কম থাকার পর হঠাৎ করেই দাম ঊর্ধ্বমুখী। তিনি বলেন, সারা দেশে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবজির আমদানি কমেছে। তাই দাম বাড়ার কথা বলছেন আড়তদাররা।

কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি পটোল, বরবটি, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, শসা, করলা, টমেটো, লাউ, ঝিঙে, ধুন্দুল, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকার ওপর বিক্রি হয়েছে। বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ -৯০ টাকা কেজি দরে, টমেটো কেজি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু ২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া সব ধরনের শাকের দামও কিছুটা বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের আড়তদার বাবুল মিয়া বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবজি সরবরাহ আগের তুলনায় কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এ অবস্থা আরো কিছুদিন থাকতে পারে।

বাজারে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬০ টাকায়। রসুন (দেশি) ১২০ টাকা, আদা ১০০-১২০ টাকা, আমদানি রসুন ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সপ্তাহের মধ্যে মুরগির ডিমের (লাল) দাম ডজনে ৫-১০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে এক ডজন ডিম বিক্রি হয় ১৩০ টাকায়, যা বর্তমানে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৫০–২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম কেজিতে ৩০-৫০ টাকা হারে বেড়েছে। তবে গরু ও খাসির গোশতের দাম ৫০-১০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত