পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে প্রস্তাবিত একীভূত ব্যাংক

কাওসার আলম ও রোহান রাজিব
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪৯

ইসলামি ধারার দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে শরিয়াহভিত্তিক একটি ব্যাংক গঠিত হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবার পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে নতুন ব্যাংক করার প্রস্তাবটি সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর নতুন ব্যাংক গঠনে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আর নতুন ব্যাংকটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। তবে দুর্বল এ পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নতুন ব্যাংকে কোনো অংশীদারিত্ব থাকছে না। তবে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

নাম প্রকাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী অবসায়ন বা একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। সম্প্রতি এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিএসইসিকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। সেখানে ওই পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের কোনো শেয়ার থাকবে না। এ ব্যাংকের শেয়ার নতুন করে ইস্যু করা হবে।

এই কর্মকর্তা জানান, উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হলে সরকারের পক্ষ থেকে একটি শরিয়াহ ব্যাংক গঠন করা হবে। এই ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন কত হবে তা নির্ধারণ করবে সরকার। সবকিছু ঠিক করেই রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নেবে। এরপর লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করবে তারা।

অন্যদিকে বিএসইসির একজন অতিরিক্ত পরিচালক আমার দেশকে বলেন, যদি কোনো সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করতে হয় তাকে অবশ্যই কিছু দিতে (ক্ষতিপূরণ বা শেয়ারের অংশ) হবে। কিন্তু সেটা না করে যদি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হয় তাহলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে। এক্ষেত্রে তারা আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ থাকবে। তিনি বলেন, যেসব উদ্যোক্তা ও পরিচালক ব্যাংকের অর্থ লোপাট করেছে তারা চিহ্নিত। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারী তো কোনো অপরাধ করেনি তাদের শেয়ার কেন বাজেয়াপ্ত করা হবে।

তিনি আরো বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। সেই চিঠিতে একজন সাধারণ শেয়ায়হোল্ডারের যত ধরনের অধিকার পাওয়ার বিষয়টি আইনে বলা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ও এসআইবিএল মার্জ হতে আপত্তি জানিয়েছে। দুটো ব্যাংকের পরিচালকরা মনে করছেন, সময় দিলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। প্রতিটি ব্যাংকেই রয়েছে উদ্যোক্তা, পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক, সাধারণ ব্যক্তি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর শেয়ার।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তন হলে ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে আলোচিত পাঁচ ব্যাংকে আসে নতুন পর্ষদ। তার আগে এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে। বাকি চার ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী এস আলমের হাতে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৫৩ দশমিক ১১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর শেয়ার রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীর ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৮ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার, ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ পাবলিক শেয়ার এবং শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ বিদেশি শেয়ার রয়েছে।

এক্সিম ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, জনসাধারণের ৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং বিদেশিদের শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার রয়েছে ৬৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীর ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে ১৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক, ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ পাবলিক এবং শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বিদেশি।

গতকাল বাজারদর অনুযায়ী, এক্সিম ব্যাংকের সর্বশেষ শেয়ার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৮০ পয়সা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামীর ৩ টাকা, গ্লোবাল ইসলামীর ২ টাকা, ইউনিয়ন ২ টাকা ২০ পয়সা এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৫ টাকা ২০ পয়সা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে বলেন, নতুন ব্যাংক তো সরকারের মালিকানায় থাকবে। তাই আমানত নিয়ে দুশ্চিন্তা করা লাগবে না। মার্জার যেহেতু নতুন কনসেপ্ট এখানে বিনিয়োগকারীসহ অনেকে ক্ষুব্ধ হবে। কেউ কেউ মামলাও করবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫ বিধিবিধানও দেশের প্রচলিত আইন মেনে তা শেষ করবে।

যেভাবে সম্পন্ন হবে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক পাঁচটির দায়, সম্পদ ও জনবল এক করা হবে। পরে তা অধিগ্রহণ করবে ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক। নতুন এই ব্যাংকের মূলধনের বড় অংশ জোগান দেবে সরকার। তাই এটির পরিচালনা পর্ষদে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ব্যাংক খাতে অভিজ্ঞদের রাখা হবে। নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা।

নতুন ব্যাংকের প্রকল্প কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষ কর্মকর্তাদেরও পদায়ন করা হবে। তার আগে পাঁচ ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রশাসক হবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক পদের কর্মকর্তা। প্রশাসক ব্যাংকগুলোর এমডির দায়িত্ব ও দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। প্রশাসক নিয়োগের পর বাতিল করা হবে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পরই বসবে প্রশাসক।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত