খাদ্যশস্য মজুত গত বছরের তুলনায় ৭ লাখ টন বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৪৮

খাদ্যশস্য মজুদে রেকর্ড গড়েছে। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে এ মুহূর্তে চাল ও গম মিলে ২১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। যা গত বছরের তুলনায় ৭ লাখ টন বেশি। গত বছর এই সময়ে খাদ্যপণ্য মজুত ছিল ১৪ লাখ চার হাজার টন। এর মধ্যে চাল ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৪ টন এবং গম ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ টন।

এছাড়াও দেশে খাদ্যশস্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতে আমদানি বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুতের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ টনেরও বেশি। সরকারের বর্ষপূর্ত উপলক্ষে সম্প্রতি এক তথ্য বিবরণীতে খাদ্য মন্ত্রণালয় এমন তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে সরকারীভাবে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার টন গম মজুত আছে। এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মজুতের এই লক্ষ্যমাত্রায় আরো ৫ লাখ টন চাল ও চার লাখ টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকারীভাবে এ বছর ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিকটন ধান ও ১৯ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। গতবছরের তুলনায় চলতি বছর ধান ও চাল মিলে মোট ৪ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বেশি সংগ্রহ করেছে সরকার।

সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, জুন ২০২৪ মাসের তুলনায় জুন ২০২৫ মাসে মোটা চালের কেজি প্রতি জাতীয় পাইকারী গড় মুল্য প্রায় ১.৭৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খোলা আটার কেজি প্রতি পাইকারী গড় মুল্য ০.৬৩ টাকা হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে মোটা চালের কেজি প্রতি খুচরা মুল্য ২.১৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আটা খোলা এর খুচরা মুল্য ০.৮৮ টাকা হ্রাস পেয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে মধুপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে ৪টি আধুনিক সাইলো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার ফলে সরকারী খাদ্যশস্য মজুত ধারন ক্ষমতা ২৩ লাখ ৮৮ হ্জাার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

এই মুহূর্তে সরকারি গুদামে খাদ্যপণ্য মজুত আছে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ টন। এর মধ্যে চাল সাড়ে সাত লাখ টন এবং গম চার লাখ ২৮ হাজার ৩৩৫ টন। বাকি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ধান মজুত রয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা বলেন, এই মজুতকে সন্তোষজনক বলা যাবে না, আবার ঝুঁকিপুর্ণ বলাও ঠিক হবে না। মজুত আরও বাড়ানো দরকার। এ ব্যাপারে আমাদের বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ টন চাল-গম কেনার চুক্তি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট আছে। তা পূরণ হবে বলে আশা করছি।

পাশাপাশি আমদানি করা যেসব চাল-গম পাইপলাইনে আছে সেগুলো শিগগিরই আমরা পেয়ে যাব। এ ছাড়া সম্প্রতি বন্যায় ফসলের যে ধরনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা হয়তো হবে না। এদিক দিয়েও বলা যায় এ বছর দেশের খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ভাল

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরো জানান, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য খাবার নিশ্চিত করা সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার।

বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের মজুত বাড়াতে হচ্ছে। এখন ২২ লাখ টন খাদ্য মজুতের সক্ষমতা আছে। এটাকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া হবে। খাদ্য মজুতের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি খুব বেশি প্রয়োজন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে সাতটি সাইলো গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলোর প্রতিটিতে প্রায় ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য রাখা যাবে। এর মধ্যে দু-একটি সাইলো গুদাম এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। আগের সরকারের একজন মন্ত্রীর ইচ্ছায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে মালপত্র আনা-নেওয়ার খরচ অনেক বেশি হবে। দাতাগোষ্ঠী ও সরকারি কর্মকর্তারাও রাজি ছিলেন না।

সাধারণত এসব সাইলো নির্মাণ করা হয় নদীর পাড়ে বা যেখানে ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু টাঙ্গাইলের পশ্চিমে যমুনা নদী থাকলেও সাইলোটি এমন জায়গায় করা হয়েছে, সেখানে ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো বাহনে মালপত্র পরিবহন করা যাবে না। ময়মনসিংহেও প্রায় একই অবস্থা। ময়মনসিংহ সাইলোতে পরে রেলপথ টানা হয়েছে। এগুলো ব্যবহারযোগ্য হলে মজুদ বাড়ানোর সুযোগ হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সরকারী খাতে গম আমদানির উৎস বহুমুখিকরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২৪/২৫ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানী করা হয়েছে। চলতি ২০২৫ সালে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারি খাতে গম আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত