আটকে দিল বিএফআইইউ

প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ২৮৭ কোটি টাকা তোলার চেষ্টা ইকবালের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ২৬

পলাতক এইচবিএম ইকবাল অদৃশ্যভাবে এখনো প্রিমিয়ার ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করছেন। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তিনি বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটি থেকে বিভিন্ন উপায়ে ২৮৭ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে তার সেই চেষ্টা আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ইকবাল ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।

প্রিমিয়ার ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংকটির বনানী শাখায় এইচবিএম ইকবাল ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন প্রিমিয়ার প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, প্রিমিয়ার হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, ইকবাল সেন্টার, প্রিমিয়ার হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও বুখারা রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন হিসাবে টাকা জমা রয়েছে। এসব হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করতে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫০ চেক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। প্রতিটি চেকের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা করে তোলার চেষ্টা করা হয়। তবে বিষয়টি অবগত হয়ে তা আটকে দেয় বিএফআইইউ। এ কারণে শেষ পর্যন্ত টাকা উত্তোলনে ব্যর্থ হয় তার পরিবার।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টাকা তোলার চেষ্টা করেছিল। আমাদের ব্যাংক থেকে ঋণের বিপরীতে অনেক আগের কিছু পে-অর্ডার ছিল, তা ইনক্যাশ করার জন্য জমা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পারেননি।

এ বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরকে ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান আমার দেশকে বলেন, আগের বোর্ডের কেউ যাতে অর্থ উত্তোলন করতে না পারে সে বিষয়ে মৌখিক ও অফিশিয়াল নির্দেশনা দিয়েছে বিএফআইইউ। এরপরও ২৮৭ কোটি টাকা বিভিন্ন উপায়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। বিএফআইইউয়ের একটি টিম ব্যাংকের বনানী শাখায় কাজ করছিল। তারা প্রতিনিয়ত সুপারভাইজ করছেন। যখন এসব হিসাব থেকে টাকা তোলার জন্য সাবমিট করেছে তখন কম্পিউটারে ফ্ল্যাগ উঠেছিল। তাৎক্ষণিক তা আটকে দেয় বিএফআইইউ। এখানে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কেউ সহযোগিতা করে না। আমরা আসার পর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাদের চাকরিচ্যুত করেছি। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুব সতর্ক।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখা ইকবালকে বিধিবহির্ভূত ভল্ট সুবিধা দেয়। অবৈধভাবে ব্যাংকের ভল্টে নগদ প্রায় ৬০ লাখ টাকা রাখেন। একই সঙ্গে তার নামে ভল্টের ভেতরে বিভিন্ন নথিপত্র পাওয়া যায়।

গত বছরের নভেম্বরে ইকবালের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে বিএফআইইউ। একই সঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তান এবং তাদের একক মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়। এরপরও গত এপ্রিলে তিনি ও তার নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে এক কোটি ১১ লাখ টাকা ও ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উত্তোলন করেন।

এ ঘটনায় অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে প্রিমিয়ার ব্যাংককে সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করে বিএফআইইউ।

আওয়ামী সরকার পতনের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে এইচবিএম ইকবাল প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেন। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি পদ ছাড়ার পর নতুন চেয়ারম্যান করা হয় তার ছেলে ইমরান ইকবালকে। এরপর গত আগস্টে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত