মোংলায় হচ্ছে ৪ হাজার কোটি টাকায় কন্টেইনার জেটি

ইমদাদ হোসাইন
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৩৩

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায় অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সক্ষমতার অভাবে সেখানে আন্তর্জাতিক কার্গো হ্যান্ডলিং হয় না। আঞ্চলিক যোগাযোগেও এখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ বন্দরটিতে এখনও কোনো কন্টেইনার জেটি নেই। চীনের ঋণে বন্দরটিতে আধুনিক জেটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে খরচ হবে ৪ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পটি আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য সম্পর্ক একচেটিয়া। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে মোংলা বন্দর আধুনিকায়নে নজর দিয়েছে সরকার। এজন্য চীনের ঋণে বন্দরটিতে কন্টেইনার জেটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য আধুনিক বন্দর সুবিধাসহ বন্দরটির কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়ানো। এ প্রকল্পটিতে সরকারের অর্থায়ন ৪৭৫ কোটি টাকা। বাকি ৩ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা পুরোটাই চীন সরকারের ঋণ।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে মোংলা বন্দরে ৪৭টি জাহাজ একসঙ্গে নোঙ্গর করতে পারে কিন্তু এতে কোনো কন্টেইনার জেটি নেই। মোংলা বন্দরে বর্তমানে বার্ষিক ১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো এবং ১ লাখ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা রয়েছে।

বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর বিশেষ করে ভারত, ভুটান, নেপাল ও চীনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে মোংলা বন্দর একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এ বন্দরটি সমুদ্রপথে ও স্থলভাগের সঙ্গে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মোংলা বন্দর দিয়ে এসব দেশে ট্রানজিট কার্গো হ্যান্ডল করার সম্ভাবনা রয়েছে।

মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এরই মধ্যে খুলনা-মোংলা রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রেললাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে কার্গো হ্যান্ডলিং অনেকাংশে বাড়বে। সে বিবেচনায় মোংলা বন্দরের সুবিধাদি সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

মোংলা বন্দর সূত্র বলছে, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব প্রকল্পের আওতায় সংগ্রহ করা হয়েছে ১০৪টির বেশি কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি। বিভিন্ন ধরনের বয়া সংগৃহীত হয়েছে ১২৮টি, রোটেটিং বিকন দুটি ও জিআরপি লাইট টাওয়ার ছয়টি। পাশাপাশি একটি করে পাইলট বোট, পাইলট ডেসপ্যাচ বোট ও টাগবোট এবং পাঁচটি স্পিডবোটও সংগ্রহ করা হয়েছে এসব প্রকল্পের আওতায়। ফলে বন্দরে এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে দ্রুততার সঙ্গে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বন্দর চ্যানেল নিরাপদ হওয়ায় দিবারাত্রি জাহাজ আগমন ও নির্গমন করতে পারছে। সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিংও হচ্ছে সর্বোচ্চ দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে।

নতুন করে অনুমোদন পেতে যাওয়া প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় উপস্থাপিত হলে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী সময়ে উপস্থাপন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বর্তমান প্রেক্ষাপট ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন উপযোগিতা, গুরুত্ব এবং একনেক সভার সিদ্ধান্তের আলোকে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার লক্ষ্যে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি প্রকল্পটির উপযোগিতা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে। প্রকল্পের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট ও এর প্রাক্কলিত ব্যয় যৌক্তিকীকরণ করে ৫ শতাংশ ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেয়।

মোংলা বন্দরের সক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ বন্দর দিয়ে একক বাণিজ্যের লক্ষ্য রয়েছে চীনের। বন্দরটি দিয়ে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো পরিবহন ৯ দশমিক ৭২, কন্টেইনার পরিবহনে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

কিন্তু বন্দরের যাত্রা শুরুর পর থেকে মাত্র ৫টি জেটি দিয়ে চলছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। ক্রমবর্ধমান চাপ সামলাতে কর্তৃপক্ষ নতুন ছয়টি জেটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুটির কাজ ৬০ শতাংশের মতো সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলো রয়েছে পরিকল্পনার পর্যায়ে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর জেটির নির্মাণকাজ ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। এই দুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৮০০ কোটি টাকা। আর ১ ও ২ নম্বর জেটি নির্মাণ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া ১১ ও ১২ নম্বর জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেটিগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে মোংলা বন্দর বড় অর্থনৈতিক হাব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মোংলা বন্দরের সুবিধাদি সম্প্রসারণসহ ১৩টি প্রকল্প উঠছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে অনুমোদনের জন্য এগুলো উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, একনেকে উপস্থাপিতব্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট প্রকল্প; মোংলা বন্দরের সুবিধাদিও সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প; ধান, গম ও ভুট্টার উন্নততর বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন প্রকল্প; বিএডিসির বিদ্যমান বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণ ব্যবস্থাদির আধুনিকীকরণ এবং উন্নয়ন প্রকল্প; ফুড সেফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট; তিতাস ও কামতা ফিল্ডে ৪টি মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্প; হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও মেঘনা ফিল্ডে ৩-ডি সাইসমিক জরিপ প্রকল্প; সিলেট-১২নং কূপ খনন প্রকল্প; ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প; বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রাম জোন প্রকল্প; স্ট্রেংথ সার্ভিস ডেলিভারি সিস্টেমস ফর ইম্প্রুভড মাইগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবল রেইনট্রিগ্রেশন প্রকল্প; ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন করা প্রকল্প; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্প।

জৈন্তাপুরে ‘বিজিবির’ গুলিতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ

নির্বাচনের আগে উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান জরুরি

দুদিনব্যাপী মেহেদী উৎসব ইবি ‘ছাত্রী সংস্থা’র প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু

বার্ষিক পরীক্ষার আগেই স্কুল-কলেজ ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের দাবি

‘মুসলমানদের মতো হইয়ো না’ বলা জাভেদকে ধুয়ে দিলেন লাকি আলী

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত