বন্ধ থাকা ভ্যাট নিরীক্ষা শুরু হতে পারে চলতি মাসেই

কাওসার আলম
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ২৯

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সঠিকভাবে দিচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ের অন্যতম কার্যকর উপায় হচ্ছে নিরীক্ষা। এটি ভ্যাট ফাঁকি রোধে যেমন সহায়ক, তেমনি রাজস্ব আদায় বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের মতে, নিরীক্ষা কার্যক্রম না থাকলে ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা অনেক বেড়ে যেত। তবে কয়েক মাস ধরেই ভ্যাট নিরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অটোমেশন না হলে এই কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধই থাকবে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অটোমেশন না হলে প্রয়োজনে কিয়ামত পর্যন্ত ভ্যাট নিরীক্ষা বন্ধ থাকবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট নিরীক্ষা) সৈয়দ মুসফিকুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ভ্যাট নিরীক্ষাকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনতে কাজ চলছে। আশা করছি, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এ প্রক্রিয়া শেষ হবে এবং নিরীক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগের কারণে আপাতত নিরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কোন ধরনের অভিযোগ এসেছে এবং সেগুলোর সংখ্যা কত—সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে পারেননি।

ভ্যাট বিভাগ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতীতে অনেক করদাতাকে হয়রানির জন্য ভ্যাট নিরীক্ষাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বছরের পর বছর কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে নিরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে, আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কখনো নিরীক্ষার মুখ দেখেনি।

অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া নিরীক্ষার ভয় দেখিয়ে অসাধু কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ‘আপনার ফাইল নিরীক্ষায় পড়েছে’ এমন ফোন পেয়ে ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হয়েছেন, যদিও পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে ফাইলটি আদৌ নিরীক্ষার আওতায় ছিল না।

ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। এসব অনিয়ম বন্ধে এবং কর্মকর্তাদের ইচ্ছাধীনতা কমাতে নিরীক্ষা পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

বর্তমানে দেশে প্রায় ছয় লাখ ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আইভাস সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে ভ্যাট দিচ্ছে। তবে বাকি ৫ থেকে ১০ শতাংশ যারা অনলাইনে নেই, তাদের বিরুদ্ধে ম্যানুয়াল নিরীক্ষা চলছে।

অটোমেশনভিত্তিক নিরীক্ষা চালুর অংশ হিসেবে এনবিআর ২৫টি ঝুঁকিভিত্তিক সূচক নির্ধারণ করেছে। এসব সূচকের ওপর ভিত্তি করে ১০০ পয়েন্টের একটি বেঞ্চমার্ক তৈরি করা হয়েছে। যার স্কোর যত বেশি, তার নিরীক্ষায় পড়ার ঝুঁকিও তত বেশি। উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রতিষ্ঠানের স্কোর যদি হয় ৪০ আর আরেকটির ৭০—তাহলে ৭০ স্কোরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের রিটার্নই নিরীক্ষার আওতায় পড়বে। এই পদ্ধতিতে পুরো নিরীক্ষা হবে সফটওয়্যারনির্ভর, যাতে কর্মকর্তা নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন। এতে ‘নির্বাচিত ব্যবসায়ী’ দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর সুযোগ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে নিরীক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে বলে জানিয়েছে এনবিআর। যেমন- জনবল সংকটের কারণে লাখো ফাইল একসঙ্গে যাচাই সম্ভব নয়। তা ছাড়া এখনো নিরীক্ষার অনেক অংশ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে করতে হচ্ছে, যা তথ্য সঠিকভাবে বিশ্লেষণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব ধরনের আর্থিক লেনদেনকে অটোমেশনের আওতায় আনা জরুরি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত