হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মুক্তিযোদ্ধার জমিতে বুলডোজার

ঢাবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫, ১৯: ৫৬

কক্সবাজার শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সুগন্ধা পয়েন্টে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পৈত্রিক সম্পত্তিতে বুলডোজার চালিয়ে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং মালামাল লুটের অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংখ্যালঘু নাগরিক সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্তের সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৫ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত জানান, ‘৫ জুন ঈদুল আজহার প্রথম দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এসিল্যান্ড শারমিন সুলতানার নেতৃত্বে আনসার, পুলিশ ও শ্রমিক নিয়ে আমার পৈত্রিক জমিতে বুলডোজার চালানো হয়। ধ্বংস করে দেওয়া হয় সীমানা প্রাচীর, কেয়ারটেকারের ঘরসহ সব স্থাপনা। নিয়ে যাওয়া হয় আমার সমস্ত মালামাল। এতে আমার অন্তত ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ এ সময় শারমিন সুলতানার গণমাধ্যমকে বলেছেন, হাইকোর্টের নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান। অথচ আদালতের এমন কোনো আদেশ তিনি গণমাধ্যমকে দেখাতে পারেননি।

সংবাদ সম্মেলনে সচ্চিদানন্দ জানান, ১৯৭৭ সালে তার বাবার নামে থাকা ২ দশমিক ০৩ একর জমিকে সরকার ‘অর্পিত সম্পত্তি’ ঘোষণা করে। তিনি এ বিষয়ে রিট মামলা নং ১০৬৫৭/২০২৪ দায়ের করলে ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট জমির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। মামলাটি সর্বশেষ ২৮ মে ২০২৫ শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত ছিল।

তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও কউকের চেয়ারম্যানকে আমি কাগজপত্রসহ বিষয়টি জানালে তাঁরা আদালতের আদেশ মেনে চলার আশ্বাস দেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। ঈদের ছুটির সন্ধ্যায় তারা আইন ও আদেশ উপেক্ষা করে হঠাৎ হামলা চালান আমার জমিতে,’—বললেন তিনি।

তিনি দাবি করেন, ঈদের দু’দিন আগে হঠাৎ করে জেলা প্রশাসন ডিসির পক্ষ থেকে ‘এলআর ফান্ডে’ নামে এক কোটি টাকা জমা দেওয়ার চাপ দেওয়া হয়। তিনি সময় চেয়ে ঈদের পরে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে এক কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হন। সচ্চিদানন্দের ধারণা, এই ক্ষোভ থেকেই হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

মুক্তিযোদ্ধা সচ্চিদানন্দ বলেন, ‘আমার জমির একটি বড় অংশ আগে থেকেই অবৈধভাবে দখল করে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নাজনিন সরওয়ার কাবেরী বেআইনিভাবে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। ওই জমির বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।’

তিনি বলেন, ‘সাবেক এমপি কমলের নেতৃত্বে একটি ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে আমার জমি দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই চক্রের সঙ্গে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ও স্থানীয় দালালরা সরাসরি জড়িত।’

তাদের ষড়যন্ত্র ও চাপে পড়ে ‘আমার জমির খতিয়ান ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, নানান জালিয়াতি হয়েছে। তৎকালীন সদরের এসিল্যান্ড আরিফ উল্লাহ নিজামী এ খতিয়ান ছিঁড়ে জমিটা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় আমি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর ৮ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও ICAB-এর সদস্য। অথচ আজ আমি নিজ দেশে নিজ পৈত্রিক জমিতে নিরাপদ নই। বারবার টার্গেট হচ্ছি। আমি সুবিচার চাই, সম্মান চাই।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত