ভিডিও করার অপরাধে পথচারীদের পিটিয়েছে অটোচালকরা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ০৭
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ৪১

রাজধানীর বনানীতে তান্ডব চালিয়েছে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালকরা। সোমবার বনানীর ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় বেলা ১২ টার দিকে রাস্তায় পথচারীদের ওপর লাঠি হাতে হামলা করে অটোরিক্সা চালকরা। এক পর্যায়ে পায়ে চালিত রিক্সা চালকরাও সড়কে নেমে আসলে তাদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকরা। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হামলায় বেশ কয়েকজন মোটর সাইকেল চালকসহ কয়েকজন পথচারী আহত হয়েছেন। ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকদের হামলায় আহত হয়েছেন পায়ে চালিত রিক্সা চালকদের কয়েকজনও।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, এর আগে গতকাল সোমবার সকাল থেকে বনানী ১১ নম্বর সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা বিচ্ছিন্নভাবে জমায়েত হতে থাকে। অন্যদিকে পায়ে চালিত রিক্সা চালকরা তাদের দাবি নিয়ে সড়কে নেমে আসেন। দুপুর ১২ টার দিকে ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সা চালকরা পায়ে চালিত রিক্সা চালকদের ওপর হামলা চালায়। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় বেশ কয়েকটি পায়ে চালিত রিক্সা ভাংচুর করেন ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকরা। ১১ নম্বর সড়কের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে লাঠি দিয়ে হামলা চালায় তারা। পুলিশের ব্যারিকেড টেনে সরিয়ে ফেলে। এ সময় কয়েকজন মোটর সাইকেল চালক ও পথচারীকে বেধড়ক মারধর করেন তারা।

উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারছিলেন না রিক্সা চালকদের। মার খেয়ে পুলিশের সহযোগিতায় কেউ কেউ কোন রকমে ওই স্থান ত্যাগ করেন। ওই সময় কয়েকজন মোটর সাইকেল চালককে ঘিরে ধরেন লাঠি হাতে চালকরা। লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয় মোটর সাইকেল চালকদের। যে যেভাবে পেরেছে কিল, ঘুষি মারতে থাকেন। সবমিলিয়ে বেশ কয়েকজন পথচারী ও মোটর সাইকেল চালক আহত হন। তবে সুনির্দিষ্টভাবে আহতের সংখ্যা জানা যায়নি।

এর কিছুক্ষণ আগে ১১ নম্বর সড়ক দিয়ে একজন ভিনদেশী নাগরিক রিক্সা দিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালকরা তার পথরোধ করেন। পুলিশের সহায়তায় ওই বিদেশী নাগরিক নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

গতকালের ঘটনায় একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেসব ভিডিওতে অটো রিক্সাচালকদের তান্ডবের বিষয়ে অনেক নেটিজেন সমালোচনা করেন। এরা বেশি আশকারা পেয়ে গেছে বলেও অনেকককে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ পুলিশ কেন এ্যাকশনে যাচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ঘটনার ছবিও ভিডিও নেওয়ার চেষ্টা করলেও পথচারীদের মারধর করা হয়েছে বলে নেটিজেনদের কেউ কেউ উল্লেখ করেন।

ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “গুলশান সোসাইটি এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে সোসাইটি কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পুলিশ মিলে যৌথভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানকার নির্ধারিত নিবন্ধিত কিছু প্যাডেলচালিত রিকশা আগে থেকেই চলাচল করে। বাইরের রিকশা প্রবেশ ঠেকাতে ১১ নম্বর ব্রিজে পুলিশের ক্রাইম বিভাগের একটি চেকপোস্ট ছিল। সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশা আটকানো থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। এরপর ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা জমায়েত হলে এবং সোসাইটির প্যাডেলচালিত রিকশা চলাকরাও জড়ো হলে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এর আগে শনিবার সকাল থেকে শুলশান এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা নেয় কর্তৃপক্ষ। সেদিন বনানী ১১ নম্বর, বাড্ডা-গুলশান লিংক রোড, গুলশান ২, কালাচাঁদপুর ও পুলিশ প্লাজাসহ কয়েকটি জায়গায় সকাল থেকে অবস্থান নেন পুলিশ ও সোসাইটির নিরাপত্তা কর্মীরা। ফলে এসব এলাকা দিয়ে গুলাশানে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়।

তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন চালকরা। তারা দুপুরের দিকে বনানী ১১ নম্বর সড়ক থেকে রিকশা নিয়ে মিছিল বের করেন। চালকরা দাবি করেন, পায়েচালিত রিকশা চললে ব্যাটারি রিকশাকেও অনুমতি দিতে হবে। ওইদিন কিছু চালক বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়েন এবং বেশ কিছু পায়েচালিত রিকশা ভাংচুর করেন। এ নিয়েপুলিশ প্লাজাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঙ্গামাও হয়। একপর্যায়ে পায়ে চালিত রিক্সা চালকদের বিক্ষোভের মুখে দুপুরের পর গুলশান ও বনানী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল শুরু হয়।

শনিবার গুলশান সোসাইটির সভাপতি ওমর সাদাত বলেছিলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই ব্যাটারিচালিত রিকশার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই।“ডিপলোমেটরা নানাভাবে এসব রিকশার দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন-এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নিয়মিত আসছে। পাশাপাশি ব্যাটারি রিকশা নিয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা গুলশান এলাকায় ব্যাটিারি রিকশা চলাচল বন্ধের ব্যাপারে সিটি করপোরেশন ও পুলিশের সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করি।

এ ব্যাপারে রিকশার চালক ও মালিকদের সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওমর সাদাত। হোলি আর্টিজানে হামলার পর এ এলাকায় রিকশা চলাচলের ব্যাপারে নতুন নিয়মকানুন করা হয়। এ এলাকায় প্রায় সাড়ে চারশ নিবন্ধিত রিকশা রয়েছে। এসব রিকশার চালকদের তথ্য পুলিশের কাছেও আছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত