ঈদের পাঞ্জাবিতে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া

এমরানা আহমেদ
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৫৯

ঈদ মানেই নতুন পোশাকের আনন্দ, আর ছেলেদের জন্য সেই আনন্দের কেন্দ্রে থাকে পাঞ্জাবি। সময়ের সঙ্গে বদলেছে এর নকশা, কাপড় ও কাটছাঁট। সুতি, সিল্ক, খাদি থেকে শুরু করে কুর্তা স্টাইল, ডিজিটাল প্রিন্ট— সবকিছুই জায়গা করে নিয়েছে এবারকার ফ্যাশনে। আরাম ও স্টাইলের সমন্বয়ে বৈচিত্র্যময় পাঞ্জাবির বাজার মাতাচ্ছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো।

গত বুধবার সরেজমিন ঈদমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কাতান, সিল্ক, লিনেন বা জামদানি প্যাটার্নের পাঞ্জাবি এবার দারুণ জনপ্রিয়। এ ছাড়া কুর্তা স্টাইল, চাইনিজ কলার, স্ট্যান্ড কলার; এমনকি ডিজিটাল প্রিন্টের পাঞ্জাবিও জায়গা করে নিয়েছে তরুণদের পছন্দের তালিকায়। ফ্যাশন ডিজাইনাররা বলছেন, এবার ঈদ পড়েছে গরমের মধ্যে, তাই হালকা রঙগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ঈদ উপলক্ষে এবারকার দেশীয় শোরুমগুলোয় নানা রঙ ও নকশার পাঞ্জাবি এসেছে। পাঞ্জাবিতে সুতি কাপড়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নকশা। প্রতি বছরের মতো এবারও সেমিলং পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। কারণ এ ধরনের পাঞ্জাবি পরতে যেমন আরাম, তেমনি স্টাইলিশ।

সুতির কাজ করা পাঞ্জাবির চেয়ে প্রিন্টেড পাঞ্জাবির প্রতি তরুণদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোয় খাদি কাপড়ের বিচিত্র পাঞ্জাবিও দেখা গেছে। এ ছাড়া ভিন্ন ধাঁচের সিল্ক পাঞ্জাবির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের রাইস দোকানের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তাজুল ইসলাম জানালেন, ভিসকস কাপড়ের ওপর এমব্রয়ডারি, কারচুপি আর লেইস বসিয়ে ডিজাইন করা পাঞ্জাবিগুলো ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। থাইল্যান্ডের ক্যাসমিলন কাপড়ের পাঞ্জাবি ক্রেতারা বেশ পছন্দ করে কিনছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বেশি মূল্যের পাঞ্জাবির বিক্রি এবার তুলনামূলক কম।

প্রতিবারের মতো এ বছরও মোটিফে নতুনত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে ফ্যাশন হাউস কে-ক্রাফট। কে-ক্রাফটের শপ ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বাইজেনটাইন, ক্রসস্টিচ, ইসলামিক আর্ট, প্রাচীন আফ্রিকা, রোমানিয়ান, আঁকা-বাঁকা প্রভৃতি মোটিফ থাকছে। এ ছাড়া কটন, অ্যান্ডি, অ্যান্ডি সিল্ক, জয় সিল্ক, দুপিয়ান, নিট, জ্যাকার্ড, ন্যাচারাল, ইয়ার্নডায়েড অ্যান্ডি, তাঁতে বোনা সুতি কাপড়, টুটোন, আদ্দিভয়েল ব্যবহার করা হয়েছে। এ ফ্যাশন হাউসের পাঞ্জাবি কেনা যাবে ৯০০ থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে।

ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউসগুলোয় বাহারি ডিজাইন ও রঙের পাঞ্জাবির সমাহার দেখা গেছে। রাজধানীর অভিজাত ফ্যাশন হাউসগুলো থেকে এখানে অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী দাম যেমন– ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে ক্রেতারা পেয়ে যাচ্ছেন পছন্দের পাঞ্জাবি।

আড়ংয়ে সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবির কালেকশন তুলনামূলকভাবে বেশি। আড়ংয়ের কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ বলেন, সুতির কাপড়ের মধ্যে প্রিন্টেড পাঞ্জাবি এবার বেশি চলছে। বিশেষ করে ফুল, মসজিদ ও বিভিন্ন ডিজাইনের প্রিন্টেড পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া এক কালারের মধ্যে কাজ করা পাঞ্জাবির চাহিদাও বেশি। আড়ংয়ে পাঞ্জাবি কেনা যাবে এক হাজার ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।

প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ঈদ উপভোগ করতে ‘ফ্যামিলি প্যাক’ পাঞ্জাবি এনেছে অঞ্জন’স। তারা জানায়, কাপলদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সালোয়ার-কামিজের রঙ ও ডিজাইনের সঙ্গে মিল রেখে একই রকমের পাঞ্জাবি আনা হয়েছে। সুতি, সিল্ক ও খাদিÑ সব কাপড়ের পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ৮০০ থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে।

এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলোয় কাপড় ও নকশাভেদে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে পাঞ্জাবি কেনা যাবে। দামাদামি করে কেনার অভ্যাস থাকলে অনেক দোকানে কিছুটা ছাড় পাওয়া যায়। তবে ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবিতে খরচ একটু বেশি।

ক্লাব হাউস তাদের পাঞ্জাবি বিক্রি করছে এক হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। সেইলরের পাঞ্জাবি পেতে গুনতে হবে দুই হাজার ৭৫০ থেকে প্রায় আট হাজার টাকা। এক হাজার ৬০০ থেকে ছয় হাজার টাকার ভেতরে পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ‘লা ‍রিভ’-এ। ইলিয়েনের পাঞ্জাবির দাম তিন হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। টুয়েলভ ক্লদিং তাদের পাঞ্জাবির দাম রাখছে এক হাজার ৪৯০ থেকে ১৩ হাজার টাকার মধ্যে। তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকায় এক্সট্যাসির ঈদের পাঞ্জাবি কেনা যাবে।

রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা শপিংমলের দ্বিতীয় তলার লুবনান শোরুম ঈদ উপলক্ষে এনেছে কটন ইন্ডিয়ান ফেব্রিকসের হাতের কাজ করা পাঞ্জাবি এবং লিলেন কাপড়ের ওপর এমব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবি। এগুলোর দাম তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। কটিসহ পাঞ্জাবিগুলোর দাম পড়বে পাঁচ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।

লুবনানের বিক্রয়কর্মী আনিস জানান, ১০ রোজার পর থেকেই তাদের দোকানে বেচাবিক্রি জমে উঠেছে।

দর্জিবাড়ির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মমিনূর আজাদ আমার দেশকে বলেন, এবারকার ঈদ গরমের সময় হওয়ায় কটনের পাঞ্জাবি ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়া কটনের কাপড়ের ওপর কারচুপির কারুকাজ বসানো পাঞ্জাবিও চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে পাঞ্জাবির দাম দুই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মধ্যে রাখা হয়েছে।

‘লা রিভ’-এর ডিজাইনার ইশা জাবিন জানান, এবার ঈদে ‘মুভমেন্ট’ থিম নিয়ে তারা কাজ করছেন। ফেব্রিকসের ক্ষেত্রে কটন, সিল্ক, জ্যাকার্ড, কিছু শাইনি ব্লেন্ডেড ফেব্রিক প্রাধান্য পেয়েছে। আরামের কথা ভেবে কটন কাপড়েই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মোটিফের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মরক্কোর বিভিন্ন বিখ্যাত স্থাপত্য থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে। রঙের ক্ষেত্রে আর্দি টোন, টেরাকোটা কালার, গ্রিন, গ্রে ব্রাউন, কুল ব্লু, বাউন্সি মিন্ট, পার্পেল টনিক, ব্ল্যাক ইত্যাদি গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি বলেন, পাঞ্জাবিতে প্লিট ওয়ার্ক, প্লিট উইথ জারদৌসি, জারদৌসি, কারচুপি, ডিজিটাল এমব্রয়ডারি, প্রিন্ট করা হয়েছে।

বিষয়:

ঈদবাজার
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত