রাজধানীর হাজারীবাগে ফ্ল্যাট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের তিন মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। মর্টগেজ বা বন্ধক থাকা ফ্ল্যাট ছাড়ানোর কথা বলে তারা একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিআইডির ঢাকা-মেট্রো দক্ষিণ ইউনিটের একটি বিশেষ দল গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— শাহানা শিকদার (৪৫), সামীর (২৩) ও হানিফ বেপারী (৫৮)।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন খান এসব তথ্য জানান।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রটি অত্যন্ত কৌশলী। তারা মূলত একটি নির্দিষ্ট ফ্ল্যাট দেখিয়ে ক্রেতাদের বলত, ফ্ল্যাটটি ব্যাংকে মর্টগেজ রাখা আছে। দ্রুত টাকা দিলে মর্টগেজ ছাড়িয়ে এখনই রেজিস্ট্রি করে দেওয়া সম্ভব। এই ফাঁদে ফেলে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে মোটা অঙ্কের অগ্রিম টাকা নিত। কিন্তু টাকা পাওয়ার পর রেজিস্ট্রি না দিয়ে তারা সময়ক্ষেপণ করত এবং উল্টো আরও টাকা দাবি করত।
রূপা (ছদ্মনাম) নামের এক ভুক্তভোগী নারী জানান, ফ্ল্যাট কেনার জন্য ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বায়নানামা সূত্রে তিনি এই চক্রকে প্রায় ৪১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে রেজিস্ট্রি না দিয়ে তারা গড়িমসি শুরু করে। একপর্যায়ে গত ২৭ আগস্ট ধানমন্ডির একটি ব্যাংকের সামনে টাকা বা ফ্ল্যাটের বিষয়ে কথা বলতে গেলে চক্রের সদস্যরা রূপা ও তার সহকারীকে মারধর করে এবং জোরপূর্বক মর্টগেজ টোকেন ছিনিয়ে নেয়।
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেপ্তারকৃতরা একই ফ্ল্যাট দেখিয়ে আরও কয়েকজনের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে শাহাদাৎ হোসেনের কাছ থেকে ১২ লাখ, মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে ৯ লাখ ৪০ হাজার এবং নান্নু মিয়া ইমনের কাছ থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, ২০২৫ সালের ২৮ আগস্ট ওই একই ফ্ল্যাট মাত্র ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় রওশন আরা নামের আরেক নারীর নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে দলিলে দেখানো হয়েছে।
সিআইডি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্য সদস্য ও সহযোগীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

