যাত্রাবাড়ী আইডিয়ালকে দুর্নীতিমুক্ত ও বেতন নিয়মিতকরণের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ২০
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ৫৬

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগমের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত এবং দীর্ঘ ১৪ মাসের বকেয়া পরিশোধসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিতকরণের দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ, শোকজপ্রাপ্ত ৮ শিক্ষক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ প্রত্যাহারেও দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সহকারী শিক্ষক (দুইবার শোকজপ্রাপ্ত) সৈয়দা আরিফুন নাহার এসব দাবি তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

লিখিত বক্তব্যে আরিফুন নাহার বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম প্রতিষ্ঠানের ব্যয় এবং ঘাটতির যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ ও বানোয়াট। কারণ গত ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে মোট আয় হয়েছে-(টিউশন ফি, দোকানের অগ্রিম টাকা ও মাসিক আয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ সহ) প্রায় ২৫ কোটি টাকা। শিক্ষক-কর্মচারীদের ৪৬ মাসের বেতন বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রায় ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা জমা থাকে।

তিনি বলেন, অবশিষ্ট এত টাকা কোথায় কীভাবে ব্যয় হলো তা খতিয়ে দেখার কোনো ইচ্ছা সাধারণ শিক্ষকদের নেই। তবে ১৪ মাসের বেতন বকেয়া হওয়ায় শিক্ষকদের মনে প্রশ্ন জাগে, কেন এমন হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের আয় থাকলেও কেন বেতন বকেয়া হচ্ছে। তাছাড়া বেতন থেকে কাটা হলেও প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা হয় না টাকা। গ্রাচুয়িটি ফান্ড শূন্য, খাতা দেখা, ডিউটি এরিয়া, কোন বিলই পান না শিক্ষকরা।

আরিফুন নাহার বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম শিক্ষকদের বেতন না দেওয়ার মূল কারণ প্যাটার্ন ও বিধি বহির্ভূত অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ বলে উল্লেখ করেন। তাহলে ২০০৪ সালে ১০ নভেম্বর নিম্নমাধ্যমিক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে কীভাবে নিয়োগ পান, যেখানে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের কোন পদই নাই। ২০০৪ সালে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ছিল।

তিনি ভারপ্রাপ্ত মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে ফাইল গায়েবের অপরাধে বরখাস্ত হওয়া, ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকেই আজ্ঞাবহ শিক্ষকদের দিয়ে গ্রুপিং ও পক্ষপাতিত্ব শুরু করার অভিযোগ করে বলেন, ঘনঘন শিক্ষকদের রুটিন পরিবর্তন সহ নানা কারণে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ ও সহযোগিতা করেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অডিটে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে দাবি করেছেন, ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বহিরাগতদের ডেকে এনে সংবাদ সংগ্রহে আসা সাংবাদিকদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটান তারও নিন্দা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

আরিফুন নাহার আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেতন না পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করলে আমাকে দুই বার শোকজ ও প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যদিও এই সিদ্ধান্ত নিয়মবহির্ভূত। পরবর্তীতে আরও ৫ জন শিক্ষকসহ সাতজনকে নানা অজুহাতে শোকজ করেন। এভাবে তিনি শিক্ষকদের মাঝে ভীতির সঞ্চয় করেন এবং যাতে কেউ আর বেতনের জন্য আবেদন না করেন। বেতন না পেয়ে একজন বিধবা শিক্ষকের আত্মহত্যার চেষ্টাকে সাজানো নাটক বলে তাচ্ছিল্য করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

তিনি বলেন, আমরা সবাই শোকজের অভিযোগ প্রত্যাহার ও চাকরিতে ফেরার নিশ্চয়তা চাই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার চাই।

আরিফুন নাহার বলেন, শিক্ষার মান নিম্নমুখী ও শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তি পরিত্রাণের জন্য এবং শিক্ষকদের ১৪ মাসের বেতন বকেয়ার কারণ জানতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আমি ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করি। কিন্তু অজানা কারণে তদন্ত আসছে না বা থেমে আছে।

সংবাদ সম্মেলনে সহকারী প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান হাওলাদার জানান, তাকে জোর করে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া হচ্ছে। তাকে চেয়ারেও বসতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি এই অবস্থার অবসান চান।

এসময় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া, অভিভাবক সদস্য কাজী আতাউর রহমান সহ ভুক্তভোগী বেশ সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত