আমার দেশ-এ সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান শুরু

অস্ত্রসহ নিষিদ্ধ লীগের ৩৭ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৪

আগামী ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নাশকতার পরিকল্পনা ফাঁস করে ‘আমার দেশ’-এ সংবাদ প্রকাশের পর রাজধানী ও আশেপাশের এলাকায় অভিযান জোরদার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, অভিযানে ঢাকার বিভিন্ন স্থান এবং আশপাশের থানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৩৭ নেতাকর্মীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। অন্যদিকে ঢাকা জেলা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ‘১৩ নভেম্বর নাশকতার ছক আওয়ামী লীগের’ শিরোনামে ‘আমার দেশ’-এর প্রিন্ট, অনলাইন ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের নাশকতার পরিকল্পনা ফাঁস করে দেওয়া হয়। সংবাদে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ জানা যাবে আগামী ১৩ নভেম্বর। রায় ঘোষণার আগেই নাশকতার মাধ্যমে সরকার পতন ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ। দেশি-বিদেশী ঘড়যন্ত্রকারীরা পরিকল্পনায় যুক্ত রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। নাশকতার অংশ হিসেবে আদালতপাড়া ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় বোমাবাজির টার্গেট করা হয়েছে। ঢাকায় নাশকতা পরিকল্পনার মূল সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারতে পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে। তাকে কৌশলগত সব সহযোগিতা দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসবির সাবেক প্রধান, ভারতে পলাতক পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলাম এবং ডিএমপির পলাতক কমিশনার হাবিবুর রহমানকে। এসএসএফের সাবেক ডিজি ও সাবেক কিউএমজি লে. জেনারেল (অব.) মুজিবুর রহমানসহ একাধিক সেনা কর্মকর্তা এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকায় অস্থিরতা তৈরির মিশন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে পলাতক সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত শিকদার, গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এবং যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ওরফে ক্যাসিনো সম্রাট। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে। সরকার পতনের লক্ষ্যে নেওয়া নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাছাইকৃত নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনা শুরু হয়েছে। ওইদিন ঢাকায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটাতে চায়। এর মধ্যে সশস্ত্র ক্যাডাররা অস্ত্রবাজি করতে পারে বলে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। আর নভেম্বরের মধ্যেই যদি হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলার রায় হয়ে যায়, তাহলে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা ছক তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে মাঠ পর্যায়ে এখনই সেনা না উঠানোর পরামর্শ দেওয়া নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রেক্ষাপটে গতকাল শুক্রবার মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চালানো অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-মৎস্যজীবী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর উত্তর আওয়ামী যুবলীগের ২৭ নং ওয়ার্ডের ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ শাহাদাত হোসেন (৪৪), চাঁদপুর সদরের চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের তিন বারের চেয়ারম্যান মোঃ খান জাহান আলী ওরফে কালু পাটোয়ারী (৫৫), ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ মশিউর রহমান (৩২), খুলনা জেলার খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ (৫২), ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপ গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক এবং মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক আলিম আল তারিফ (২৮), আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ টিপু সুলতান (৪৫)।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯:৩০ টায় ডিবি-তেজগাঁও বিভাগ তেজগাঁও থানাধীন মনিপুরিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ শাহাদাত হোসেনকে ও সন্ধ্যা আনুমানিক ৬:৩০ টায় খিলগাঁও থানাধীন নন্দীপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে মোঃ খান জাহান আলী ওরফে কালু পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে। একই দিন রাত আনুমানিক ৮ টায় পশ্চিম আগারগাঁও এলাকা থেকে মোঃ মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-লালবাগ বিভাগ।

একইদিন রাত আনুমানিক ১০:৪৫ টায় ডিবি-সাইবার বিভাগ রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে কাজী ফয়েজ আহমেদকে ও রাত আনুমানিক ১১:৪৫ টায় ডেমরা থানা এলাকা থেকে মো. টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২:১০ টায় লালবাগ থানা এলাকা থেকে আলিম আল তারিফকে গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার দক্ষিণ বিভাগ।

অন্যদিকে রাজধানীর পাশ্ববর্তী কেরাণীগঞ্জ, সাভার, নবাবগঞ্জ, দোহার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানা এলাকা থেকে অস্ত্রসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ঢাকা জেলা পুলিশ। শুক্রবার গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুজ্জামান। তিনি জানান, আটক ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য।

ঢাকা জেলার সাতটি থানায় একযোগে চালানো এ অভিযানে সাভার থেকে ৪ জন, আশুলিয়া থেকে ৩ জন, ধামরাই থেকে ১ জন, কেরাণীগঞ্জ মডেল থেকে ৬ জন, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থেকে ৮ জন, নবাবগঞ্জ থেকে ৭ জন এবং দোহার থেকে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আটকদের মধ্যে রয়েছেন—সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তানজিরুল রহমান, বিরুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, ধামসোনা ইউনিয়ন যুবলীগের তথ্য সম্পাদক ওবায়দুল ভূঁইয়া, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের উপসম্পাদক পারভেজ কবীর শাকিব, কেরাণীগঞ্জ শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু তাহের মন্টু, কালিন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাম, রুহিতপুর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সালমান, শুভাঢ্যা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম জুয়েল, নবাবগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাফায়েত হোসেন শিপু, কৈলাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আছিফ চাকলাদার, ঢাকা জেলা তাতী লীগের সভাপতি রমজান আলী ও দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজাদ হোসেন খান।

এসপি আনিসুজ্জামান বলেন, আটক সবাই সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। তারা মিছিল বা বিক্ষোভের প্রস্তুতির সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেউ আইনবিরোধী কার্যকলাপে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের উত্তর পানগাও এলাকার দোকানবাড়ি মোড় থেকে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের নারায়ণগঞ্জ সদর থানা কমিটির সহসম্পাদক মো. রাব্বী সরদারকে (২৫) একটি রিভলভারসহ গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতভর জেলার বিভিন্ন এলাকায় একযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

জানা গেছে, রাব্বী সরদার গত কয়েক মাস ধরে রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে দলের পক্ষে প্রচার ও মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন। পাশাপাশি তার মোবাইল ফোন বিশ্লেষণে বিদেশে অবস্থানরত কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের তথ্যও পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, আটক ব্যক্তি বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন। বর্তমানে তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে পৃথক অভিযানে সাভার ও আশুলিয়া থেকে আরও তিনজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—সিদ্দিকুর রহমান, আমজাদ পলান ও জসিম মিয়া। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জালাল উদ্দিন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত