রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: এক যুগেও শেষ হয়নি হত্যা মামলার বিচার

নাসির উদ্দিন লিটন
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০০: ১৯

দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি রানা প্লাজা ধস। এদিন সাভারে রানা প্লাজার আট তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে নিহত হয় ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত ও পঙ্গু হয় প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। মর্মান্তিক এ ঘটনার এক যুক্ত পেরিয়ে গেল এখনো শেষ হয়নি বিচার। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি, স্বজন ও শ্রমিক সংগঠনগুলো।

বিজ্ঞাপন

২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিলে ভবন ধসে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় আরো একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এর বাইরে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। বাকি দুটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে আছে।

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে ওই দিন সাক্ষী না আসায় মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেন আদালত। একই সাথে ১৭ জন সাক্ষীকে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত।

আলোচিত এ মামলায় ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্য এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৯৪ জন। সব শেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দেয়।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা নামের ভবন ধসের ঘটনায় ১ হাজার ১১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে ৮৪৪টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে ২৯১ জনের অশনাক্ত লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। উদ্ধারকৃত জীবিতদের মধ্যে ১ হাজার ৫২৪ জন আহত হন। তাদের মধ্যে পঙ্গুত্ববরণ করেন ৭৮ জন।

ভবন ধসের এ ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’র অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রানার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন শুধুমাত্র ভবনের মালিক সোহেল রানা। আসামিদের মধ্যে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা গেছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ খান খোকন।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইকবাল হোসেন বলেন, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দিয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য রয়েছে।

কবে নাগাদ মামলাটির বিচার শেষ হবে বলে আশা করছেন জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, প্রায় ছয় বছর উচ্চ আদালতের আদেশে এ মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর ৯৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। সাক্ষী হাজির করতে ১৭ জনের বিরুদ্ধের সমন ইস্যু করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে নেয়া হবে।

মামলাটির দীর্ঘসূত্রিতার জন্য কারো গাফিলতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের এই কৌঁসুলি আমার দেশকে বলেন, দীর্ঘ সময় আমরা এই মামলার দায়িত্বে ছিলাম না। ওই সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমরা ধারণা করছি তাদের অবহেলার কারণেই এই মামলার দীর্ঘসূত্রিতা।

এ বিষয়ে আসামি সোহেল রানার আইনজীবী মাসুদ খান খোকন বলেন, এ মামলায় রানার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। দীর্ঘ বারো বছর কারাগারে রয়েছে। কিন্তু যে বারোটি বছর তার জীবন থেকে চলে গেল। যদি সে খালাস পায় কে তাকে জীবনের বারোটি বছর ফিরিয়ে দেবে। রানা প্লাজার ভবন ধস নিছক একটি দুর্ঘটনা। তাছাড়া রানা প্লাজার প্রকৃত মালিক সোহেল রানা নয় তার বাবা আব্দুল খালেক। এখানে রানার কোন হাত নেই।

তিনি আরো বলেন, বিগত সরকার আদালতে সাক্ষী হাজির করতে তেমন সচেষ্ট হয়নি। তবে বর্তমান সরকার আন্তরিকতার সাথে গুরুত্ব দিয়ে আদালতে সাক্ষী হাজির করছেন। দেরিতে হলেও মামলাটি আলোর মুখ দেখছে।

এ মামলায় বিচার বিলম্বিত হওয়ার জন্য কাউকে দায়ী করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রানার এই আইনজীবী আমার দেশকে বলেন, কারো গাফিলতি আছে বলা যাবেনা। বিগত সরকার সাক্ষী আনতে পারেনি। এই সরকার আনতে পারছে। আসামিপক্ষের একটাই প্রত্যাশা সাক্ষী আসুক। আইনের ভাষায় একটি কথা আছে বিলম্ব ন্যায় পরায়ণতা ব্যাহত করে। বিলম্বের কারণেই রানা জেলে আছে। আমরা আশা করছি ন্যায় বিচারে পেলে খালাস পাবেন রানা।

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

দেশে মুক্তি পাচ্ছে জাপানি অ্যানিমে সিরিজ, শিশুদের দেখা নিষেধ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত