ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির আরেক মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। এতে শেখ হাসিনার সঙ্গে এবার তার বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপকে অভিযুক্ত করে সাঁজা দেওয়া হয়েছে।
অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ নেয়ার জন্য শেখ রেহানাকে দেওয়া হয়েছে সাত বছরের কারাদণ্ড। আর ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে তার বোন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। মা-বোন-ভাইকে প্লট দিতে প্ররোচনার দায়ে রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের দুই বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ রবিউল আলমের আদালত সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন।
এছাড়া অপর ১৪ আসামিকে দেয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। মামলায় খুরশীদ আলম নামে এক আসামি কারাগারে রয়েছেন। হাসিনা, রেহানা, টিউলিপসহ ১৬ জন পলাতক রয়েছেন। তারা পলাতক থাকায় এ মামলায় আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ পায়নি। কেন তারা আইনজীবী নিয়োগের সুবিধা পায়নি রায়ের পর্যবেক্ষণে তা ব্যাখ্যা করেছেন আদালত।
পর্যোবেক্ষণে আদালত বলেন, “বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ায় পৃথিবীর যেখানে অবস্থান করুক না কেন সেই আসামিকে বিচার করতে আইনে কোনো বাধা নেই। কেবলমাত্র মৃত্যুদণ্ড ধারার মামলার ক্ষেত্রে পলাতক আসামির ক্ষেত্রে স্ট্রেট ডিফেন্স (রাষ্ট্রনিযুক্ত) ল’ইয়ার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। মৃত্যুদণ্ডযোগ্য ধারা না থাকলে মামলায় পলাতক আসামির ক্ষেত্রে ডিফেন্স ল ইয়ার নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড কোনো ধারার অভিযোগ না থাকায় আসামিদের জন্য ডিফেন্স ল’ইয়ার নিয়োগ প্রদানের সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতে একাধিক সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে আদালতের শুনানির অধিকার দাবি করার আগে সংশ্লিষ্ট আসামিকে আগে বিচার প্রক্রিয়ায় নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হয় এবং পরে বিচার দাবি করতে হয়। অন্যথায় আসামি বিচারিক সুবিধা পেতে পারেনা।”
বিচারক বলেন, “শেখ রেহেনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্ররোচিত করে পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে প্লট নিয়েছেন। টিউলিপ সিদ্দিক তার মা রেহানা সিদ্দিককে প্লট পাইয়ে দেওয়ার জন্য তার খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ও শেখ হাসিনার একান্ত সচিব সালাউদ্দিনকে মোবাইল ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশে আসলে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং তাদের জবানবন্দিতে প্রমাণিত হয়েছে। আসামি শেখ হাসিনা সকল আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার নিয়ন্ত্রণাধীন অধীনস্থ কর্মকর্তা, কর্মচারী থেকে প্রভাবিত করে দুর্নীতির মাধ্যমে তার প্লট বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা করে দিয়ে ফৌজদারী অসদাচরণ করেছেন। এই তিনজন বাদে অপর আসামিরা পাবলিক সার্ভেন্ট। তারা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে প্লট বরাদ্দ পেতে সহায়তা করেছেন।’
এ মামলায় শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপের পক্ষে আইনি লড়াই করতে আবেদন করেছিলেন মোরশেদ হোসেন শাহীন নামে এক আইনজীবী। তবে আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।
এ বিষয়ে মোরশেদ হোসেন শাহীন বলেন, “আমি আসামিদের পক্ষে আইনি লড়াই করতে আবেদন করেছিলাম। তবে আদালত আবেদন মঞ্জুরও করেননি, আবার খারিজও করেননি। আমার আসামিরা ন্যায়কিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।”

