সাক্ষাৎকারে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়

ভোটে জিতলে সব শিক্ষার্থীর কণ্ঠস্বর হব

জমির উদ্দিন চট্টগ্রাম ও আতিকুর রহমান চবি
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ১৯
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ২১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। ৩৬ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আগামী ১৫ অক্টোবরের ভোটযুদ্ধে অন্যতম আলোচিত ভিপি বা সহসভাপতি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। তিনি ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এক সাক্ষাৎকারে আমার দেশকে তিনি জানিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের কথা।

বিজ্ঞাপন

হৃদয় ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও চবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি শুধু প্রতিশ্রুতিই নয়, নিজের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যা নিয়েও আলাপ করেছেন। তিনি বলেন, তার বাবা বিএনপির রাজনীতি করতেন, ছিলেন রাউজানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাকে দেখে পরিবার থেকে রাজনীতির শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা পান হৃদয়।

এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি তার বাবাকে মানুষের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে দেখেছেন। সেই দৃশ্য তার মনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলেছে। সেই শিক্ষা নিয়েই নাম লেখান ছাত্ররাজনীতিতে। হৃদয়ের কাছে ছাত্ররাজনীতি মানে কেবল একটি পদ্ধতি নয়, এটি শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর, তাদের কণ্ঠস্বর হওয়ার মাধ্যম।

হৃদয় মনে করেন, শিক্ষার্থীরা শুধু নম্বর বা গ্রেডের জন্য নয়, বরং নিরাপদ আবাসন, সহজ যাতায়াত, মানসম্মত খাবার এবং গবেষণার জন্যও প্রতিদিন লড়াই করছে। এই বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তার নিজস্ব পারিবারিক শিক্ষা। হৃদয়ের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল কলেজজীবন থেকেই।

তিনি বলেন, ছাত্রদলই তাকে শিখিয়েছে কীভাবে সহমর্মিতা, নেতৃত্ব ও দায়িত্বকে একত্রিত করা যায়। তিনি প্রথম ক্লাসেই বুঝেছিলেন শিক্ষার্থীদের সমস্যা কেবল ব্যক্তিগত নয়, সামষ্টিক। তাদের আবাসন সমস্যা, যাতায়াতের অসুবিধা, খাবারের নিম্নমানসহ নানা সংকটে নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা। সেই থেকে তিনি ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে নিরাপদ ট্রেনের ব্যবস্থা, খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, আবাসন সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে ভূমিকা রেখেছেন ।

হৃদয় বলেন, ‘শুধু সংখ্যা বা ভোটের জন্য কাজ করিনি। ছাত্রদলের পক্ষে বহু শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আমাকে প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রার্থী করা হয়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণের জন্য সোচ্চার থাকায় সংগঠন আমার ওপর আস্থা রেখেছে ।’

তিনি বলেন, ‘ভিপি পদ কোনো ক্ষমতা নয়।এটি দায়িত্ব। ক্ষমতা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ব্যবহার হয়, আর দায়িত্বের বোঝা জনগণের কল্যাণের জন্য। এই বোধ থেকে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হওয়ার জন্য ভিপি পদে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছি। আমি নির্বাচিত হলে সবার আগে এসব মৌলিক সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করব।’

হৃদয় বলেন, ভিপি প্রার্থী হিসেবে আমার তিনটি বড় প্রতিশ্রুতি আছে। সেগুলো হলো।আবাসন তথা শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতা চালুর দাবি তুলব, যতক্ষণ না শতভাগ শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়। যাতায়াতে শাটল ট্রেনে পর্যাপ্ত বগি সংযোজন, ডেমো ট্রেন চালু করা এবং পৃথক রেললাইন নির্মাণের জন্য চাপ তৈরি করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ও ই-কার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত ও সুষম খাদ্য নিশ্চিতে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করব। এ ছাড়া আধুনিক মেডিকেল সেন্টার, নারীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষা ও গবেষণায় বাজেট বাড়ানোর জন্য আওয়াজ তুলব।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি অটল থেকে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সব সময় আপসহীন। এজন্য অনেক নেতাকর্মী হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। তবুও এই সংগঠন থমকে যায়নি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে, সহাবস্থানের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে কাজ করব।

ভোটের পরিবেশ নিয়ে হৃদয় বলেন, ‘পরিস্থিতি আপাতত সমান। তবে কিছু কর্মকর্তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমরা আশা করি নির্বাচনি পরিবেশ হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। কিছু প্রশাসনিক অনিয়ম শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংশয় তৈরি করেছে। তবে ভোট শান্তিপূর্ণ ও শিক্ষার্থীর ভোটাধিকার যথাযথভাবে প্রতিফলিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের প্রভাব বিষয়ে এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। তবে আমরা চাই চাকসু নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়, যাতে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়। আমরা কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করি না। চাকসু সচল হওয়া মানেই আমাদের সবার জয়।’

ভোটারদের উদ্দেশে হৃদয় বলেন, ‘আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন। যাকে খুশি ভোট দিন। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর চাকসু নির্বাচন হচ্ছে; ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যান। আমরা নির্বাচিত হলে ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব কাঁধে নেব।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত