রকীবুল হক
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী দুঃশাসনে অবহেলিত ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল দেশের অন্যতম ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। দলীয়করণের কারণে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যোগ্যদের পরিবর্তে আওয়ামীপন্থি ও তাদের অনুগতদের নিয়োগ, শীর্ষ থেকে নিম্নপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের ব্যাপক অনিয়ম, সরকারি বাজেট বরাদ্দ না দেওয়া, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে অনেকটা গতিহীন হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে উপাচার্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন এনে দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের নানামুখী পরিকল্পনা আর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ইতোমধ্যে গতি ফিরতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এতে সারা দেশের মাদরাসাসংশ্লিষ্টদের মধ্যেও বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়নের এ গতি থামাতে আওয়ামী সুবিধাভোগী, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের নানা অপতৎপরতা এখনো চলমান। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে সে ষড়যন্ত্র এতদিন সফল হয়নি। তবে এক বছরের মাথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আওয়ামী দোসর ও সুবিধাভোগীরা নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের নানা চক্রান্তে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে বেশকিছু পদে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে একটি মহল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে বর্তমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে তারা। এরই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পরিচয় ও ঠিকানাহীন ব্যক্তির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। আর সে অভিযোগের রেশ ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন এবং বেশকিছু পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম আমার দেশকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গতিশীল করতে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে ইউজিসির অনুমোদনসাপেক্ষে আমরা সেকশন অফিসারসহ প্রায় ৮০ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেই। এতে প্রায় ছয় হাজার প্রার্থী আবেদন করেন। কিন্তু আগের মতো নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ পুরো বন্ধ করে দেওয়ায় একটি সংগঠন ও পত্রিকা আমাদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, পরিচয়হীন একজনের অভিযোগ আমলে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটা আমার জন্য অপমানজনক। আমার বিরুদ্ধে দলীয়করণের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার শতভাগ মিথ্যা।
কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তা এবং বাইরে থেকে আওয়ামী সুবিধাভোগী মাদরাসা শিক্ষকদের একটি সংগঠনের নেতারা এসব অপতৎপরতায় জড়িত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে থাকা বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে মূলত তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের এনে ফের দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানাতে চায়। তাছাড়া বিগত দিনের ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তও যাতে ঠিকমতো না হতে পারে, সেজন্য এসব ষড়যন্ত্র চলছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্রমতে, দেশের মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন ও যুযোপযোগী করতে আলেম-ওলামাদের দীর্ঘদিনের দাবির ফলে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ফাজিল/স্নাতক, কামিল/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন, মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাঙ্গনগুলোর পরিবীক্ষণ ও পরীক্ষা পরিচালনাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানটির। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনুমোদনকারী ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান। তবে বিগত সময়ে নানা কারণে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এটি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল বলেও কেউ কেউ মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার এএসএম মামুনুর রহমান খলিলী আমার দেশকে জানান, বিগত সময়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোটাই ছিল দুর্নীতির আখড়া। উপাচার্য থেকে পিয়ন পর্যন্ত নানা দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন কাজের ফাইল অনুমোদনে টাকা লেনদেনের অভিযোগ আছে। দুই শতাধিক জনবলের প্রায় ৮০ শতাংশই আওয়ামী দোসর একটি শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিগত সময়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ব্যানারে সক্রিয় থাকারাও বর্তমানে কর্মরত। তাদের অনেকে নানাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে অসহযোগিতা করছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের শোকজ ও সাসপেন্ড করা হচ্ছে।
ট্রেজারার আরো জানান, ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিভিন্ন তদন্তে দুর্নীতির বিষয়গুলো উঠে আসছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে চার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য ও মাদরাসা শিক্ষক নেতার মেয়ে এবং আরেকজন মাদরাসা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানের মেয়ে। আরো দুই কর্মকর্তা চাকরি ফিরে পেতে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।
সূত্রমতে, পতিত আওয়ামী সরকারের অবহেলায় অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইউজিসির বাজেট বরাদ্দ পায় না আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে নিজস্ব আয়েই কোনোরকম চলে প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া নিজস্ব আয় থেকে উন্নয়নের পরিবর্তে নিয়মিত খরচ চালানো হতো। বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল করতে সরকারি বাজেটের জন্য প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে লিখিত চিঠি দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী উপাচার্য পদে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম। পরে দুই উপউপাচার্য, ট্রেজারার, ডিন, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের নামে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অচল করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেড় শতাধিক জনবলকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। আগে যেখানে ফাইল আটকে ঘুসবাণিজ্য চালানো হতো, সেটা বন্ধ করে প্রশাসনকে গতিশীল করার উদ্যোগ নেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, যথাযথ নিয়মে ফাজিল, কামিল, অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে প্রায় ৭২টি মাদরাসার প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি, প্রায় ৩০টি মাদরাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগসহ নানা কর্মকাণ্ড চালায় নতুন প্রশাসন। পাশাপাশি সেকশন অফিসারসহ বেশকিছু পদে নতুন জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হলে নানা অপতৎপরতায় সে কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে।
বিতর্কিত অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন ও নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত
জানা যায়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে চলতি বছরের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী পরিচয়ে মো. আব্দুল হান্নান নামে এক ব্যক্তি শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবার লিখিত অভিযোগ দেন। ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নজিরবিহীন দলীয়করণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতকরণ, অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’ শীর্ষক তিন পৃষ্ঠার ওই অভিযোগকারীর কোনো পূর্ণ পরিচয়, ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর নেই। এতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম, কামিল শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলীসহ বেশ কয়েকজনের নাম জড়িয়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়।
তার ওই অভিযোগের বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন শিক্ষা উপদেষ্টার একান্ত সচিব একেএম তাজকির-উজ-জামান। সে অনুযায়ী অভিযোগটি আমলে নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব নাঈমা খন্দকার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর। এতে বলা হয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে তদন্তপূর্বক সুপারিশসহ মতামত দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর ইউজিসির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত পত্র মারফত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রশীদ ও উপউপাচার্য মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মাদরাসা পরিদর্শন অধিভুক্তি, প্রাথমিক পাঠদান অনুমোদন এবং নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য ঘুস দাবির বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশনকে অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় জনবল নিয়োগে অনিয়মসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলে এ বিষয়ে কমিশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিতর্ক এড়াতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া সব পদের জনবল নিয়োগ আপাতত স্থগিতের জন্য অনুরোধ করা হলো।
সূত্রমতে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রশীদ ও উপউপাচার্য মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের দুর্নীতি তদন্তে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে প্রথমে ১৮ আগস্ট তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি ফ্যাসিবাদী দোসরদের বিতর্কিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি পুনর্গঠন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকারকে আহ্বায়ক করা হয়। এছাড়া কমিটির টার্মস অব রেফারেন্সে আগের উপাচার্য ও উপউপাচার্যের দুর্নীতির পাশাপাশি সাম্প্রতিক অভিযোগগুলোও যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে ট্রেজারার এএসএম মামুনুর রহমান খলিলী ও ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ জানান, বিস্তারিত পরিচয় ও ঠিকানাবিহীন এক ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের তদন্ত কমিটি গঠনে আমরা বিস্মিত। এ বিষয়ে ইউজিসি কর্তৃপক্ষকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বলেছে, ওই অভিযোগের কারণে নয়; পত্র-পত্রিকায় নিউজের কারণে এ কমিটি করা হয়েছে। তাছাড়া ইউজিসির সদস্যকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এবং টার্ম অব রেফারেন্সে পরিবর্তন আনার কারণে আগের দুর্নীতির তদন্ত শেষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধে ক্ষোভ
বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার নির্ধারিত সময় ছিল ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর। তবে আগের দিন ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী অনিবার্য কারণবশত এ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার নতুন তারিখ শিগগির জানিয়ে দেওয়া হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় তা স্থগিত করায় চরম বিপাকে পড়েন প্রায় ছয় হাজার পরীক্ষার্থী। সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসার পর ওই পরীক্ষা স্থগিতের খবর শুনে তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন।
চলমান ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ বলেন, প্রায় ২৭ বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে গত বছরের ১ ডিসেম্বর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে অধ্যাপক এবং পরে ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করি। দায়িত্ব নিয়েই প্রথমে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি প্রদানে প্রশাসনকে সহযোগিতা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইন হাউস ট্রেনিং, কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষদের ট্রেনিং, গবেষণা জার্নাল প্রকাশের পদক্ষেপ এবং এমফিল পিএইচডি কার্যক্রম চালুকরণের পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছি।
তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ বিবাদে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া মাদরাসাগুলোর বিবদমান গ্রুপগুলোকে ডেকে বক্তব্য শুনে সমঝোতার মাধ্যমে মাদরাসাগুলো সচল করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর বাইরে জাতীয়পর্যায়ে এনটিআরসিএর পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের অংশ হতে পেরেছি। এসব ইতিবাচক পদক্ষেপে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল পরিচয় ও ঠিকানাবিহীন আব্দুল হান্নানকে দিয়ে অন্যদের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পেশ করে, যা নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়।
একই ধরনের মন্তব্য করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, চলমান নিয়োগ কার্যক্রম ঠেকাতেই একটি মহল ভিত্তিহীন অপপ্রচারে লিপ্ত। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। জনসংযোগ বিভাগ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী দুঃশাসনে অবহেলিত ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল দেশের অন্যতম ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। দলীয়করণের কারণে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যোগ্যদের পরিবর্তে আওয়ামীপন্থি ও তাদের অনুগতদের নিয়োগ, শীর্ষ থেকে নিম্নপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের ব্যাপক অনিয়ম, সরকারি বাজেট বরাদ্দ না দেওয়া, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে অনেকটা গতিহীন হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে উপাচার্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন এনে দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের নানামুখী পরিকল্পনা আর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ইতোমধ্যে গতি ফিরতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এতে সারা দেশের মাদরাসাসংশ্লিষ্টদের মধ্যেও বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়নের এ গতি থামাতে আওয়ামী সুবিধাভোগী, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের নানা অপতৎপরতা এখনো চলমান। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে সে ষড়যন্ত্র এতদিন সফল হয়নি। তবে এক বছরের মাথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আওয়ামী দোসর ও সুবিধাভোগীরা নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের নানা চক্রান্তে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে বেশকিছু পদে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে একটি মহল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে বর্তমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে তারা। এরই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পরিচয় ও ঠিকানাহীন ব্যক্তির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। আর সে অভিযোগের রেশ ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন এবং বেশকিছু পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম আমার দেশকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গতিশীল করতে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে ইউজিসির অনুমোদনসাপেক্ষে আমরা সেকশন অফিসারসহ প্রায় ৮০ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেই। এতে প্রায় ছয় হাজার প্রার্থী আবেদন করেন। কিন্তু আগের মতো নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ পুরো বন্ধ করে দেওয়ায় একটি সংগঠন ও পত্রিকা আমাদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, পরিচয়হীন একজনের অভিযোগ আমলে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটা আমার জন্য অপমানজনক। আমার বিরুদ্ধে দলীয়করণের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার শতভাগ মিথ্যা।
কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তা এবং বাইরে থেকে আওয়ামী সুবিধাভোগী মাদরাসা শিক্ষকদের একটি সংগঠনের নেতারা এসব অপতৎপরতায় জড়িত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে থাকা বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে মূলত তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের এনে ফের দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানাতে চায়। তাছাড়া বিগত দিনের ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তও যাতে ঠিকমতো না হতে পারে, সেজন্য এসব ষড়যন্ত্র চলছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্রমতে, দেশের মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন ও যুযোপযোগী করতে আলেম-ওলামাদের দীর্ঘদিনের দাবির ফলে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ফাজিল/স্নাতক, কামিল/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন, মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাঙ্গনগুলোর পরিবীক্ষণ ও পরীক্ষা পরিচালনাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানটির। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনুমোদনকারী ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান। তবে বিগত সময়ে নানা কারণে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এটি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল বলেও কেউ কেউ মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার এএসএম মামুনুর রহমান খলিলী আমার দেশকে জানান, বিগত সময়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোটাই ছিল দুর্নীতির আখড়া। উপাচার্য থেকে পিয়ন পর্যন্ত নানা দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন কাজের ফাইল অনুমোদনে টাকা লেনদেনের অভিযোগ আছে। দুই শতাধিক জনবলের প্রায় ৮০ শতাংশই আওয়ামী দোসর একটি শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিগত সময়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ব্যানারে সক্রিয় থাকারাও বর্তমানে কর্মরত। তাদের অনেকে নানাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে অসহযোগিতা করছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের শোকজ ও সাসপেন্ড করা হচ্ছে।
ট্রেজারার আরো জানান, ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিভিন্ন তদন্তে দুর্নীতির বিষয়গুলো উঠে আসছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে চার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য ও মাদরাসা শিক্ষক নেতার মেয়ে এবং আরেকজন মাদরাসা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানের মেয়ে। আরো দুই কর্মকর্তা চাকরি ফিরে পেতে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।
সূত্রমতে, পতিত আওয়ামী সরকারের অবহেলায় অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইউজিসির বাজেট বরাদ্দ পায় না আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে নিজস্ব আয়েই কোনোরকম চলে প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া নিজস্ব আয় থেকে উন্নয়নের পরিবর্তে নিয়মিত খরচ চালানো হতো। বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল করতে সরকারি বাজেটের জন্য প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে লিখিত চিঠি দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী উপাচার্য পদে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম। পরে দুই উপউপাচার্য, ট্রেজারার, ডিন, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের নামে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অচল করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেড় শতাধিক জনবলকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। আগে যেখানে ফাইল আটকে ঘুসবাণিজ্য চালানো হতো, সেটা বন্ধ করে প্রশাসনকে গতিশীল করার উদ্যোগ নেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, যথাযথ নিয়মে ফাজিল, কামিল, অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে প্রায় ৭২টি মাদরাসার প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি, প্রায় ৩০টি মাদরাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগসহ নানা কর্মকাণ্ড চালায় নতুন প্রশাসন। পাশাপাশি সেকশন অফিসারসহ বেশকিছু পদে নতুন জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হলে নানা অপতৎপরতায় সে কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে।
বিতর্কিত অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন ও নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত
জানা যায়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে চলতি বছরের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী পরিচয়ে মো. আব্দুল হান্নান নামে এক ব্যক্তি শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবার লিখিত অভিযোগ দেন। ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নজিরবিহীন দলীয়করণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতকরণ, অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’ শীর্ষক তিন পৃষ্ঠার ওই অভিযোগকারীর কোনো পূর্ণ পরিচয়, ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর নেই। এতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম, কামিল শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলীসহ বেশ কয়েকজনের নাম জড়িয়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়।
তার ওই অভিযোগের বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন শিক্ষা উপদেষ্টার একান্ত সচিব একেএম তাজকির-উজ-জামান। সে অনুযায়ী অভিযোগটি আমলে নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব নাঈমা খন্দকার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় ইউজিসি চেয়ারম্যান বরাবর। এতে বলা হয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে তদন্তপূর্বক সুপারিশসহ মতামত দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর ইউজিসির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত পত্র মারফত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রশীদ ও উপউপাচার্য মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মাদরাসা পরিদর্শন অধিভুক্তি, প্রাথমিক পাঠদান অনুমোদন এবং নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য ঘুস দাবির বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশনকে অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় জনবল নিয়োগে অনিয়মসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলে এ বিষয়ে কমিশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিতর্ক এড়াতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া সব পদের জনবল নিয়োগ আপাতত স্থগিতের জন্য অনুরোধ করা হলো।
সূত্রমতে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রশীদ ও উপউপাচার্য মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের দুর্নীতি তদন্তে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে প্রথমে ১৮ আগস্ট তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি ফ্যাসিবাদী দোসরদের বিতর্কিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি পুনর্গঠন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকারকে আহ্বায়ক করা হয়। এছাড়া কমিটির টার্মস অব রেফারেন্সে আগের উপাচার্য ও উপউপাচার্যের দুর্নীতির পাশাপাশি সাম্প্রতিক অভিযোগগুলোও যুক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে ট্রেজারার এএসএম মামুনুর রহমান খলিলী ও ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ জানান, বিস্তারিত পরিচয় ও ঠিকানাবিহীন এক ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের তদন্ত কমিটি গঠনে আমরা বিস্মিত। এ বিষয়ে ইউজিসি কর্তৃপক্ষকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বলেছে, ওই অভিযোগের কারণে নয়; পত্র-পত্রিকায় নিউজের কারণে এ কমিটি করা হয়েছে। তাছাড়া ইউজিসির সদস্যকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এবং টার্ম অব রেফারেন্সে পরিবর্তন আনার কারণে আগের দুর্নীতির তদন্ত শেষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধে ক্ষোভ
বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার নির্ধারিত সময় ছিল ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর। তবে আগের দিন ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী অনিবার্য কারণবশত এ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার নতুন তারিখ শিগগির জানিয়ে দেওয়া হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় তা স্থগিত করায় চরম বিপাকে পড়েন প্রায় ছয় হাজার পরীক্ষার্থী। সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসার পর ওই পরীক্ষা স্থগিতের খবর শুনে তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন।
চলমান ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ বলেন, প্রায় ২৭ বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে গত বছরের ১ ডিসেম্বর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে অধ্যাপক এবং পরে ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করি। দায়িত্ব নিয়েই প্রথমে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি প্রদানে প্রশাসনকে সহযোগিতা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইন হাউস ট্রেনিং, কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষদের ট্রেনিং, গবেষণা জার্নাল প্রকাশের পদক্ষেপ এবং এমফিল পিএইচডি কার্যক্রম চালুকরণের পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছি।
তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ বিবাদে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া মাদরাসাগুলোর বিবদমান গ্রুপগুলোকে ডেকে বক্তব্য শুনে সমঝোতার মাধ্যমে মাদরাসাগুলো সচল করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর বাইরে জাতীয়পর্যায়ে এনটিআরসিএর পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের অংশ হতে পেরেছি। এসব ইতিবাচক পদক্ষেপে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল পরিচয় ও ঠিকানাবিহীন আব্দুল হান্নানকে দিয়ে অন্যদের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পেশ করে, যা নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়।
একই ধরনের মন্তব্য করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, চলমান নিয়োগ কার্যক্রম ঠেকাতেই একটি মহল ভিত্তিহীন অপপ্রচারে লিপ্ত। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। জনসংযোগ বিভাগ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ করা হবে আজ। আগামী ২৬ অক্টোবর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাকসু ও সিনেট প্রতিনিধিদের শপথ বাক্য পড়াবেন রাকুস সভাপতি
৬ মিনিট আগেধর্ষণ ও নারী অবমাননার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। রাত ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভে শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়
৭ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রী সংস্থার সেক্রেটারি ও চাকসুর ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক নাহিমা আক্তার দীপা বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত নারী ও শিশু নির্যাতন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
১০ ঘণ্টা আগেড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেছেন, আমাদের সমাজে ঐক্যের বড় অভাব। ঐক্যের অভাবে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র এগুতে পারছে না।
১ দিন আগে