৯ মাসেও শুরু হয়নি পুস্তক ছাপানো

বছরের শুরুতে মাধ্যমিকের নতুন বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২: ৫৯
ছবি: সংগৃহীত

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। যদিও অনেক আগে থেকেই বই ছাপানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা। তবে বছরের প্রায় ৯ মাস পার হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। এতে নতুন বছরের শুরুতে, অর্থাৎ আগামী ১ জানুয়ারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছানো নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। দপ্তরে গিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি। নাম ও পদবি প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দিতে নিষেধ করা হয়েছে, তাই এনসিটিবির কেউ কথা বলছেন না।

বিজ্ঞাপন

এনসিটিবির শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জানুয়ারিতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা সবাই আশাবাদী হলেও শঙ্কাও রয়েছে অনেক। কেননা, বছরের প্রায় ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পাঠ্যবইয়ের টেন্ডার প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি। এ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে ছাপার কাজ শুরু হতে আরো মাসখানেক সময় পেরিয়ে যাবে। এতে জানুয়ারিতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়ার বিষয়টি কতটা সম্ভব হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২৫) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দিতে তিন মাসেরও বেশি সময় দেরি হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা বিভাগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। সঠিক সময়ে বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ভুলে ভরা বইয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়েও বছরজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দেয়।

এদিকে আগের বছরের ওই অভিজ্ঞতায় এবার বই ছাপানোর কাজের প্রক্রিয়া আগেভাগেই শুরু করেছিল এনসিটিবি। নভেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপিয়ে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ সময়ে মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির (ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম) পাঠ্যবইয়ের দরপত্র বাতিল হয়ে যাওয়া এবং নবম-দশম শ্রেণির কার্যাদেশ যথাসময়ে অনুমোদন না হওয়ায় সে পরিকল্পনা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। সে সঙ্গে এখনো বিভিন্ন শ্রেণির অনেক বিষয়ের বইয়ের কনটেন্টও চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এবারো পাঠ্যবই নিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এখন নতুন বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বইয়ের সম্পূর্ণ সেট তুলে দেওয়া নিয়ে সন্দিহান এনসিটিবির কর্মকর্তারাই। তাদের ভাষ্যমতে, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দ্বিতীয় দফা দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষে সব বই ছাপিয়ে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দেওয়া অকেটাই কঠিন হবে।

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রায় আট কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে। আগের বছরের তুলনায় মোট বইয়ের সংখ্যা কিছুটা কম। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করে মূল্যায়নের কাজও সম্পন্ন করেছিল এনসিটিবি। কিন্তু ১৯ আগস্ট ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর দরপত্র বাতিল করা হয়। এতেই সব প্রক্রিয়া থমকে যায়।

এর ব্যাখ্যায় গত রোববার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বই ছাপানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম ঠেকাতে আরো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এর আগে যারা যারা পেয়েছিল, তাদের বইয়ের মান কেমন ছিল, কাগজ কেমন ছিল এবং কারা একাধিকবার পাচ্ছে, মনোপলি হচ্ছে কি না- আমরা এগুলো খতিয়ে দেখব। সে কারণে তালিকা আরেকটু যাচাই-বাছাই করব। তিনি বলেন, ‘অনিয়মের সংবাদ আমরা মাঝেমধ্যে পাই, ঠিকমতো করে না। আর একজন একটি অর্ডার নিয়ে বাকিগুলোও নিয়ে নিয়েছে- সে ধরনের কিছু অভিযোগও আছে। সেসব প্রতিষ্ঠান আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করতে বলেছি। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে নিয়ে আসুক। এ মাসের মধ্যেই সব সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।’

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা চার কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৯০৬টি; সপ্তম শ্রেণির চার কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ এবং অষ্টম শ্রেণির চার কোটি দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮। এর মধ্যে ২৮০টি লটের মধ্যে ১১ কোটির বেশি বই ছাপানোর দরপত্র বাতিল হওয়ার পর তা দ্বিতীয় দফার প্রক্রিয়া চলমান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির একজন সদস্য বলেন, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণে পুনরায় দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায় যথাসময়েই শিক্ষার্থীদের হাতে বই দিতে পারব।

এদিকে এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে প্রাথমিকের বই যথাসময়েই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে পারবে সংস্থাটি। তবে নবম-দশম শ্রেণি এবং মাদরাসার ইবতেদায়ী স্তরের বইয়ের দরপত্র শেষ হলেও ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের এখনো অনুমোদন পায়নি। ফলে বছরের শুরুতে মাধ্যমিকের পুরো বই ছাপানোর বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষের জানুয়ারি মাসেই শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পাবে। এবার শিক্ষার্থীরা যেন জানুয়ারি মাসেই নতুন বই পায়, সে জন্য সেপ্টেম্বর মাসে কার্যাদেশ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে বাকিগুলো সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দেওয়া হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত