ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দদূষণে নাকাল শিক্ষার্থীরা

রাফিউজ্জামান লাবীব
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ১৭
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ১০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের যন্ত্রণার আরেক নাম শব্দদূষণ। ক্যাম্পাসে মাইকের উচ্চ আওয়াজ, যানবাহনের হর্ন, অ্যাম্বুলেন্সের বিকট সাইরেনে প্রতিনিয়ত ঝালাপালা হয় তাদের কান। বিরক্তিকর আওয়াজের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

মাঝে মধ্যেই বাতিল করতে হয় পাঠদান। ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত কাজে বিঘ্ন ঘটছে বেশ কয়েকটি হল ও ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীদের। এতকিছুর পরও নির্বিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ক্যাম্পাসে শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ বা উচ্চ শব্দ নিয়ন্ত্রণে কোনো বিধিমালা নেই। এতে যে যার মতো উচ্চ শব্দে মাইকে অনুষ্ঠান পরিচালনাসহ শব্দদূষণে মেতে ওঠেন। যার প্রভাব শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে পড়ছে।

ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে একাধিক রাস্তা থাকায় যানবাহনের হর্ন ও সাইরেনের কারণে পড়াশোনার সামগ্রিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে টিএসসি ও শহীদ মিনার এলাকা শব্দদূষণের অন্যতম উৎস। বেশি ভুক্তভোগী রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি রাজু ভাস্কর্যে ২৬টি মাইক ও ৬টি উচ্চ শব্দের সাউন্ডবক্স বাজিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ছাত্র সমাবেশ পরিচালনা করে। উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, রোকেয়া ও শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থীরা এসে বন্ধ করতে বললে তোপের মুখে তা বন্ধ হয়। এখানেও প্রক্টর অফিসের গা ছাড়া ভাব দেখা গেছে।

এর আগে ক্যাম্পাসে উচ্চ শব্দ বন্ধে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সাউন্ডবক্সে গান বাজিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানান রোকেয়া ও শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থীরা। সে সময় টিএসসিতে সন্ধ্যা ৬টার পরে মাইক বা সাউন্ডবক্স বাজানো নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। তবে প্রশাসনের শিথিলতায় সেই নিয়মের তোয়াক্কা কেউ করছে না।

রোকেয়া হলের চতুর্থ বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী শামসুন্নাহার শাম্মি বলেন, টিএসসিতে উচ্চ আওয়াজে অনুষ্ঠান হয়। এতে আমাদের পড়াশোনাসহ নামাজ ও অসুস্থতায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রশাসনকে এ বিষয়ে বারবার বলা হলেও কোনো অগ্রগতি দেখছি না।

শামসুন নাহার হলের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান নুপুর বলেন, টিএসসির আশপাশের উচ্চ শব্দের কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ বসানো যায় না। উচ্চ শব্দের কারণে মাথাব্যথার পাশাপাশি রাতে ঠিকমতো ঘুমানোও সম্ভব হয় না। প্রায় প্রতিদিনই এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। কোনো দিন রাত ১২টা পর্যন্ত চলে। আমাদের কষ্ট হলেও প্রশাসনের কোনো বোধোদয় হয় না।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নিয়মিত পড়তে আসা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, উচ্চ আওয়াজের কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ বসানো তো দূরের কথা, স্বাভাবিকভাবেই থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটির দ্রুত সমাধান জরুরি।

বাংলাদেশ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীরব এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এই বিধিমালার তফসিল-১ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমানার ৩০০ ফিট এলাকায় কোনো শব্দদূষণ করা যাবে না। এতে দিনের বেলা সর্বোচ্চ ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে বেলা ৪০ ডেসিবেল নির্ধারিত। কিন্তু ক্যাম্পাস এলাকায় এই নিয়মের বাস্তবায়ন নেই।

এ বিষয়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ক্যাম্পাস এলাকায় ৫০ ডেসিবেলের অতিরিক্ত হলে সেটা শব্দদূষণ বলে বিবেচিত হবে। আইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হর্ন, বাদ্যযন্ত্র, মাইক বা উচ্চ শব্দ তৈরির কোনো সুযোগ নেই। এমনকি এতে অনুমোদন নিয়ে বাজানোরও সুযোগ নেই।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, উচ্চ শব্দে মানুষের শ্রবণশক্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়। নিয়মিত উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকলে একসময় মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা থাকেন সুতরাং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সামগ্রিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় তা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, শব্দ নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। তবে এটি করতে পারলে শিক্ষার্থীদের জন্য আইনি সুরক্ষা আরো মজবুত হবে।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করতে শব্দ নিয়ন্ত্রণে মাঝে মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ও অংশীজনের মধ্যে আলোচনা করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্তে আসা জরুরি। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির প্রয়োজনীয়তা আছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত