৩৩ বছর পর আজ জাকসুতে ভোটযুদ্ধ

এস এম তাওহীদ, জাবি
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১: ১৭
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৬

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই মাধ্যমে অবসান হলো দীর্ঘ ৩৩ বছরের প্রতীক্ষার। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২১ কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে বুথ। জোরদার করা হয়েছে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা। তবে ক্যাম্পাসে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে ক্যাম্পাসে টহল দিচ্ছের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় ২১ হলেই করা হয়েছে ভোটকেন্দ্র। এর মধ্যে ১১টিতে ছাত্ররা এবং ১০ কেন্দ্রে ছাত্রীরা ভোট দেবেন। মোট ২২৪ বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন শিক্ষার্থীরা। তবে হলগুলোয় এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

পড়াশোনা শেষ হওয়া শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করায় আশঙ্ক্ষা প্রকাশ করে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এর জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘হলে হলে এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন। প্রশাসন তাদের এখনো হল থেকে বের করতে পারেনি। আমরা একটি ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতাদের বেশ আনাগোনা দেখতে পাচ্ছি। তারা আবার প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আলোচনা করছেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, কোনো অবৈধ উপায় যদি আপনারা ব্যবহার করার চেষ্টা করেন, তবে তার জবাব শিক্ষার্থীরা দেবে।’

ভোট উপলক্ষে আজ সারা দিন ক্যাম্পাসে প্রবেশের ১২টি গেট বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কেবল বৈধ শিক্ষার্থীরা তাদের স্টুডেন্ট কার্ড দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন বলে জানিয়েছে কমিশন। ভোটকেন্দ্রের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সব কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা, যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে বসে ২১ কেন্দ্রের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে কমিশন প্রস্তুত। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে সাদা পোশাকেও সার্বক্ষণিক নজর রাখবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

লড়াই হবে আট প্যানেলের মধ্যে

জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ইসলামী ছাত্রশিবির, বামপন্থি সংগঠন ও স্বতন্ত্রসহ আট প্যানেলের মধ্যে লড়াই হবে। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদের বিপরীতে লড়ছেন ১৭৯ প্রার্থী। সহসভাপতি (ভিপি) পদে চূড়ান্ত প্রার্থী ১০ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ছয়জন, পুরুষ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১০ জন।

ভিপি পদে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। ভিপির দৌড়ে এগিয়ে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচন করা আবদুর রশিদ জিতু, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও শিবির সমর্থিত প্যানেলের আরিফুল্লা আবিদ। আর জিএস পদে বাগছাস সমর্থিত তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম ও শিবির সমর্থিত প্যানেলের মাজহারুল ইসলামের মধ্যে লড়াই হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্দীপনা

নির্বাচন ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। গতকাল চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস। তবে ক্লাসে পড়ালেখার চেয়ে গুরুত্ব পায় নির্বাচনবিষয়ক আলোচনা। ওই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল জাকসু নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করছেন, যেই বিজয়ী হয়ে আসুক তারা যেন শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলে।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চাইব এরপর থেকে যেন নিয়মিত জাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হয়। সেই সঙ্গে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা যে দলেরই হোন না কেন তারা যেন তাদের দলীয় কার্যালয় বানিয়ে না ফেলেন জাকসুকে। তারা যেন শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করেন, এটাই আমাদের প্রাত্যাশা।’

আরেক শিক্ষার্থী ইরফাত আমিন বলেন, ‘আমরা জন্মের পর থেকে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন দেখিনি। অনেক উৎসবমুখর পরিবেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি। সবাই সবার কাছে ভোট চাচ্ছে। নির্বাচন যে একটি উৎসবের বিষয়, তা আমরা উপভোগ করছি। আমরা আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

এদিকে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেল বিপুল ভোটে জয়লাভ করায় তার প্রভাব জাকসুতে পড়বে বলে অনুমান করছেন অনেক শিক্ষার্থী।

ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ইমন রহমান বলেন, শিবিরের একটি জনপ্রিয়তা আছে। তারা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে অনেক কাজ করেছে। তাদের একটি ফিক্সড ভোটব্যাংক আছে। এছাড়া ডাকসুতে তাদের যে ভূমিধস বিজয় হয়েছে, তার বড় প্রভাব পড়বে জাকসুতে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত