বই না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৪২
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৪৮

নতুন বছরের প্রথম দিন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে নতুন বই গ্রহণ করতে গিয়ে খালি হাতেই বাড়ি ফিরেছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এতে অনেকের মন খারাপ হলেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বলেছে, জুলাই বিপ্লবের পর সময় খুব কম পাওয়ায় বই ছাপাতে খানিকটা দেরি হতে পারে- এমনটি তারা আগে থেকেই ধারণা করেছিল। এতে তাদের মন খানিকটা খারাপ হলেও কোনো দুঃখ নেই।

বিজ্ঞাপন

সপ্তম শ্রেণির বই নিতে আসা মামুন বলে, বিপ্লবে অনেকে দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, আবার অনেকে হাত-পা কিংবা চোখ হারিয়েছেন। আমাদেরও খানিকটা ত্যাগ স্বীকার করা উচিত। ফলে খানিকটা দেরিতে বই পেলে মন খারাপ হওয়ার কী আছে? দেরি হোক বই তো পাব।

গতকাল বুধবার দুপুরে তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, মামুন এভাবেই তার মনের কথা ব্যক্ত করে।

ষষ্ঠ শ্রেণির নাবিল রহমান জানায়, বই নিতে এসেছিলাম, কিন্তু পাইনি। স্যার বলছেন কয়েকদিনের মধ্যেই পাব। এতে কিছুটা তো মন খারাপ হয়েছেই। কিন্তু এতে আমাদের কী করার আছে? প্রতি বছরই তো দেরিতে বই হাতে পাই।

মাহবুবুর রহমান নিশন নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আসা অভিভাবক কারিনা বলেন, দেশের যে অবস্থা এবং বই নিয়ে যে কেলেঙ্কারির কথা শুনছি, তাতে সহসা ছেলে বই হাতে পাবে বলে হয় না।

হাবিবুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আসমা খাতুন বলেন, বই দিতে দেরি হোক, তাতে দুঃখ নেই, বিগত সরকার নতুন কারিকুলামের নামে যে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল, তা থেকে তো বাঁচা গেল!

কথা বলতে বলতেই ঘড়ির কাঁটা দুপুর ২টায় গড়ায়, স্কুল গেট খুলে দেন নিরাপত্তাকর্মী। একযোগে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী বের হয়ে আসছিল, আগে থেকেই বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাদের মা-বাবা কিংবা স্বজনরা।

সবাই খোঁজ নিচ্ছিলেন তাদের সন্তান বই পেয়েছে কি না। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই খানিকটা মন খারাপ করে জবাব দেন, তারা বই পায়নি। তবে স্যার-ম্যাডামরা বলছেন দুই-তিনদিনের মধ্যেই তারা বই পাবে।

এরপর তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহরীন খান রুপার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এ স্কুলে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮০০। এর মধ্যে আজ আমরা অষ্টম ও দশম শ্রেণির জন্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের বই পেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেছি।

অন্যান্য শ্রেণির বইগুলো কবে নাগাদ পাবে শিক্ষার্থীরা তার কোনো সঠিক তথ্য জানাতে পারেননি তিনি। তবে তিনি আশা করে বলেন, আমরা অচিরেই বাকি বইগুলো পেয়ে যাব ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করতে পারব। জানুয়ারি জুড়ে তো শিক্ষার্থীদের কো-কারিকুলাম কার্যক্রম চলে। এরমধ্যে বই না পেলেও খুব একটা সমস্যা হবে না।

আজিমপুর গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা জানায়, আমরা বছরের প্রথম দিন নতুন বই নিতে এসেছিলাম কিন্তু বই পাইনি। মন তো খানিকটা খারাপ, কিন্তু কী করার আছে!

মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে নতুন বই নিতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছে। এতে তার মন অনেক খারাপ। সরকারের উচিত দ্রুত বই সরবরাহ করা।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতেও তিনটি নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বই হাতে পায়নি।

এর আগে সকাল ১০টায় ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের ইমামবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা নতুন বই নিতে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রূপালী সাহা জানান, তারা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই পেয়েছেন। বাকি বই কবে পাবেন তা তিনি জানেন না।

বই বিতরণের এ চিত্র শুধু ঢাকা সিটির নয়, সারাদেশের স্কুলগুলোর। গতকাল শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। নতুন এ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার পাঠ্যবইয়েও অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪৪১টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে, যা অনলাইনে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে বইয়ের পিডিএফ কপি পাওয়া যাচ্ছে।

এর আগে এনটিসিবি চেয়ারম্যান বলেন, মাত্র আড়াই মাসে ৪৪১টি বই পরিমার্জন করেছি। ৬ কোটি বই গেছে। ৪ কোটি ট্রাকে ওঠার অপেক্ষায়। আগামী ৫ জানুয়ারি প্রাথমিক ও দশম শ্রেণির সব বই, ১০ জানুয়ারি মাধ্যমিকের আটটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই পাঠানোর চেষ্টা করব।

প্রসঙ্গত, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৩। তাদের জন্য বইয়ের প্রয়োজন ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। এর মধ্যে মাত্র ৬ কোটি বই বিতরণের জন্য সারাদেশে স্কুলে পাঠানো হয়। ফলে গড়ে দুটি করেও বই পায়নি শিক্ষার্থীরা।

প্রাথমিকের ২ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের ২ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই।

তাছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা ছাপা হচ্ছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত