শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. এরশাদ হালিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিন্ডিকেট সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
সিন্ডিকেট সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাজহারুল ইসলাম শাহীনকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর এনামুল হক সজীব, অভিযুক্ত ব্যক্তির মনোনীত একজন প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত), যিনি কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য কমিটিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলায় অধ্যাপক এরশাদ হালিমের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। গত ১৪ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলমের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেওয়া হয়।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৩ নভেম্বর রাতে শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে মিরপুর থানা-পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলাটি করেছেন ঢাবি রসায়ন বিভাগের ৮ জন শিক্ষার্থী।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, ঘটনার প্রায় এক মাস পর মামলা করা হয়েছে এবং এ সময় বাদী বিষয়টি কাউকে জানাননি, এজাহারে এমন তথ্য উল্লেখ নেই।
তিনি দাবি করেন, অভিযুক্ত শিক্ষক গবেষণা ও প্রকাশনায় সক্রিয় থাকার কারণে অভ্যন্তরীণ বিভাগীয় রাজনীতির শিকার হয়েছেন। তবে আদালত এসব যুক্তি গ্রহণ না করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী একজন নিয়মিত স্নাতক ছাত্র। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিভাগের পদার্থবিজ্ঞান মাইনর ল্যাব পরীক্ষার একটি সমস্যার সূত্র ধরে অধ্যাপক এরশাদ হালিম তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং পরে সমস্যার সমাধানের কথা বলে তাকে মিরপুরের বাসায় ডাকেন। শিক্ষার্থী সেখানে গেলে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া ভয়ভীতি দেখানো, পুনরায় বাসায় যেতে বাধ্য করা এবং পরবর্তী সময় নির্যাতনের বর্ণনাও এজাহারে বলা হয়েছে। এক পর্যায়ে নির্যাতনের পর ভুক্তভোগী জ্ঞান হারান এবং পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নামিয়ে দেন অভিযুক্ত অধ্যাপক।
এ ঘটনায় ১৪ অক্টোবর মিরপুর মডেল থানায় মামলা করলে তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তদন্ত কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিলে অভিযুক্ত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে।


যৌন হয়রানির অভিযোগে ঢাবি শিক্ষক কারাগারে