প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পেরোলেও হয়নি ছাত্র সংসদ

কামরুল হাসান, হাবিপ্রবি
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪৭

উত্তরবঙ্গের ‘শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ’খ্যাত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ১৯৯৯ সালে কৃষি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর দুই যুগের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারা না থাকায় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনও শিগগির অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেগম রোকেয়ায় ইতোমধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাবিপ্রবিতেও নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে। ফলে ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার পারদ বেড়েই চলেছে। তবে হাবিপ্রবিতে এ ব্যাপারে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

জানা গেছে, ছাত্র সংসদ না থাকায় বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা গেছে। ফলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্যাতন, সিটবাণিজ্য, হয়রানি ও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহমদ মুহিত বলেন, ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই । যত দ্রুত সম্ভব একটি ছাত্র সংসদ গঠন করা হোক, যেখান থেকে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের দুর্নীতি বন্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে ছাত্র সংসদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট তুলে ধরে সেগুলো নিরসনেও কাজ করবে তারা।

গঠনতন্ত্র প্রণয়নে কমিটির উদাসীনতা

সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান। এ দাবিতে তারা গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদান, মতবিনিময় ও দেয়াল লিখনের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই দুই শিক্ষার্থী ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে অনশনে বসেন। প্রশাসন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা অনশন ভাঙেন।

পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ মণ্ডলকে আহ্বায়ক এবং উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম এমদাদুল হাসানকে সদস্য সচিব করে আট সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরপর প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে বিদ্যমান কমিটি।

এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ মণ্ডল বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করেছি। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে।

ছাত্র সংসদ না থাকলেও নেওয়া হচ্ছে চাঁদা

এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ না থাকলেও প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ছাত্র সংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের থেকে ‘কেন্দ্রীয় সংসদ ফি’ নামে প্রতি সেমিস্টারে ১০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। এ হিসেবে বছরে প্রায় ২৪ লাখ টাকা আদায় করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ ছাত্র সংসদ না থাকায় এই ফি কোনো কার্যকর খাতে ব্যবহারও হচ্ছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই এ টাকা ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এসব ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। ছাত্র সংসদ থাকলে বিষয়গুলো নজরদারির মধ্যে থাকত।

ছাত্রসংগঠনগুলোর ভাষ্য

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ফরহাদ ইসলাম বলেন, আমরা অবশ্যই হাকসু নির্বাচন চাই। কিন্তু তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত এবং এজন্য সব ধরনের সামর্থ্য তাদের আছে—এটা নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচার না করে তার আগেই এরকম নির্বাচনের জন্য হাবিপ্রবি প্রশাসন কতটুকু প্রস্তুত—সেটাও এক প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি রেজওয়ানুল হক এ ব্যাপারে বলেন, আমরা খুব দ্রুত হাকসু নির্বাচন চাই। এ জন্য আমাদের দুজন কর্মী অনশন করেছিলেন। খুব দ্রুতই আরো কর্মসূচি আসবে। পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে।

উপাচার্যের বক্তব্য

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এনাম উল্যা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারা নেই। সেজন্য গঠনতন্ত্র প্রণয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ গঠনতন্ত্র ইউজিসিতে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হলে এটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যুক্ত হবে। তখন নির্বাচনে আর কোনো বাধা থাকবে না। আমরা দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত