ঢাকা কলেজে শিক্ষক–শিক্ষার্থী ধস্তাধস্তি, আটক ছাত্রকে ছাড়িয়ে নিল সহপাঠীরা

প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ২৯
ছবি: সংগৃহীত

‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন–২০২৫’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ভবন অভিমুখে পদযাত্রার আগে ঢাকা কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি রূপান্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে জড়ো হচ্ছিলেন। একই সময় কলেজের শিক্ষকরা শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ রেজা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ‘দালাল’ মন্তব্য করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এর পরপরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ধস্তাধস্তিতে রূপ নেয়। ফরহাদ রেজার দাবি, আমি শুধু বলেছিলাম ‘দালাল’। এরপর একজন স্যার এসে আমার কলার ধরে ধাক্কা দেন। তারপর ১০-১৫ জন শিক্ষক একসঙ্গে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা আমাকে অফিসে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন, আমি শুধু বাঁচার চেষ্টা করছিলাম।

তিনি আরো বলেন, ‘তারা আমাকে অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে বলেন। আমি বাধ্য হয়ে লিখে দিই। কিন্তু আমি কোনো শিক্ষকের কলার ধরিনি।’

অন্যদিকে, শিক্ষকদের দাবি, ওই শিক্ষার্থী শিক্ষকদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করেছেন এবং একজন শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেছেন। এ ঘটনার পরপরই শিক্ষকরা একটি জরুরি সভায় বসেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কলেজ প্রশাসন বা কোনো শিক্ষকের আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ সময় ফরহাদকে আটক রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন। প্রায় আধঘণ্টা উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির পর তারা সহপাঠীকে শিক্ষক কমনরুম থেকে ছাড়িয়ে আনেন।

ঘটনার পর ক্যাম্পাসজুড়ে কিছুক্ষণ উত্তেজনা বিরাজ করলেও বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে কলেজ প্রশাসন।

এদিকে, ঘটনাটির কিছুক্ষণ পরেই শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষা ভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড় অতিক্রম করে শিক্ষা ভবনের দিকে রওনা দেন।

পদযাত্রাকে ঘিরে এলাকাজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নীলক্ষেত ও আশপাশে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। প্রস্তুত রাখা হয় জলকামান ও সাঁজোয়া যানও।

শিক্ষার্থীরা জানান, সরকার ঘোষিত প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আর কোনো কালক্ষেপণ চাই না। বিশ্ববিদ্যালয় যে মডেলেই হোক, অংশীজনদের মতামত নিয়ে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রস্তাবিত নাম নির্ধারণ করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। কলেজগুলো হলো— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।

এই সাত কলেজের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত অধ্যাদেশ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে আজকের এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত