ছাত্রীকে অধ্যাপকের যৌন হয়রানি

‘আজ না হোক কাল আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই’

খুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৫: ০৫
অধ্যাপক ড. রুবেল আনসার। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রুবেল আনসারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন এক ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তাকে ওই শিক্ষক বলেছেন, ‘আজ না হোক কাল, আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই’।

অভিযোগপত্রে ছাত্রী উল্লেখ করেন, দুর্ঘটনার কারণে সময়মতো অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে না পারায় শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট নানা বিষয়ে কথা বলেন এবং এক পর্যায়ে বলেন, তোমার হাত যদি পরীক্ষার আগে ঠিক না হয়, আমি ফুঁ দিয়ে ঠিক করে দেব। এরপর তিনি খুলনায় নতুন আসায় ছাত্রীকে ঘুরতে যাওয়ার ও প্রয়োজনে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তাব দেন।

বিজ্ঞাপন

এর কিছুদিন পর থেকেই শিক্ষক ঘন ঘন মেসেজ পাঠাতে থাকেন ছাত্রী ফ্রি আছেন কি না, কোথাও যাবেন কি না—এ ধরনের প্রশ্ন করে। ছাত্রী জানান, প্রতিবার তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে তা এড়িয়ে গেছেন।

অভিযোগে ওই ছাত্রী আরো লিখেছেন, পরিবারের আমন্ত্রণে ঈদের ছুটিতে শিক্ষক স্ত্রী-কন্যাসহ তাদের বাসায় আসেন। পরে নিরালা মোড়ে দেখা করতে গিয়ে গাড়িতে ওঠার পর শিক্ষক বলেন, আমি তোমাদের বাসায় গিয়ে আমার কথা রেখেছি, এবার তোমাকে আমার কথা রাখতে হবে।

ওই ছাত্রী বিষয়টি না বুঝে প্রশ্ন করলে শিক্ষক স্পষ্ট করে বলেন, আমি তোমাকে চাই। যেমন একজন পুরুষ একজন নারীকে চায়।

ওই ছাত্রী আরো অভিযোগ করেন, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে শিক্ষক ড্রাইভিং করার সময় তার হাত চেপে ধরে বলেন, জেদ করো না; আমি যা চাই, তাই করে নিই। আজ না হোক কাল, আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই। পরে সুযোগ পেয়ে তিনি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আত্মরক্ষা করেন। এমনকি ফলাফল উন্নত করার প্রলোভনও দেওয়া হয় ওই ছাত্রীকে।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী জানান, এ ঘটনার পর তিনি গভীর মানসিক চাপে ছিলেন, একা একা কাঁদতেন এবং কাউকে বলতে ভয় পেতেন। সম্প্রতি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র গঠনের ঘোষণা পাওয়ার পর সাহস করে অভিযোগ জানান।

যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতি তাসলিমা খাতুন বলেন, আমাদের কাছে এমন একটি অভিযোগ এসেছে। ইতোমধ্যে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান হিসেবে আমাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত বলেন, অভিযোগটি তদন্তাধীন। আমি তদন্ত কমিটির সদস্য হওয়ায় এর বেশি মন্তব্য করতে পারছি না।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রফেসর ড. রুবেল আনসার দাবি করেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। ওই ছাত্রী অসুস্থ থাকায় তার বাবা একবার আমাকে কল করেছিলেন। আমার কাছে সব শিক্ষার্থীই সমান।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত