এনসিটিবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি

ঢাবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০: ৪০

জাতিগত বিভাজন জিইয়ে রাখার অপচেষ্টা ও এনসিটিবির সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিলে এই দাবি জানান সংগঠন দুটির নেতৃবৃন্দ।

বিজ্ঞাপন

এসময় এনটিসিবির সামনে বিবদমান দুটি পক্ষের অবস্থান নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা, হামলাকারী ও তাদের নেপথ্যের শক্তিদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনাসহ পাহাড়ে সকলকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।

বিক্ষোভ মিছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ১৯৭২-এর সংবিধানে দেশের প্রতিটি জাতিকে স্বীকৃতি না দিয়ে সকলকে বাঙালি বলে একসূত্রে গাঁধতে চাওয়া হয়েছিল। এতে বাকি জাতি সত্ত্বাদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। আজকের হামলার ঘটনাও বাঙালি বলে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। অথচ গত ৫ আগস্টে এই স্লোগানকে স্থায়ীভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্র-জনতা। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলে সেটি আলোচনার টেবিলে নিরসন সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, হামলাকারীদের ছবি তো স্পষ্ট। এখন হামলাকারীদের নিরাপদ রাখার জন্য ট্যাগিংয়ের রাজনীতি অব্যাহত রয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি৷

১৯৭২ সালের মুজিববাদী সংবিধান জাতিগত বিভাজনের অন্যতম হাতিয়ার তাই এই সংবিধান বাতিল চেয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, যারা এদেশে লাশের রাজনীতি কায়েম করতে যারা চায় তারাই এই হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা করেছে। এসময় পাহাড়ে সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এসময় কোনো ধরনের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।

অপরাধের বিচার শুধু গাল-গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। এর বিচার দৃশ্যমান হতে হবে উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, রূপাইয়া শ্রেষ্ঠার মাথায় ১২টা সেলাই লেগেছে। তার মাথার সেলাই মূলত রাষ্ট্রের ক্ষতকে নির্দেশ করছে। আজকের ঘটনাসহ পূর্বের সকল অপরাধের বিচার করতে হবে। আজকের ঘটনায় স্পষ্ট প্রমাণ আছে। হামলাকারীরা ফৌজদারি অপরাধ করেছে, তাদেরকে কেন এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না?

একই স্থানে একই বিষয়ে দুটো গ্রুপ তাদের অনুষ্ঠান করছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা থাকা প্রয়োজন ছিল কিন্তু সেটি ছিল না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো বিচার না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আমাদের আস্থার জায়গা নষ্ট হবে। আর এটি নষ্ট হলে এই সিস্টেমকে কীভাবে নতুন করে তৈরি করতে হয় সেটা আমরা ভালো করেই জানি।

এসময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এই হামলার পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে। প্রশাসনকে বলতে চাই, যারা হামলায় নেতৃত্বদানকারী ও এদের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছে তাদেরকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর 'স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি' নামক সংগঠনটি হামলা চালায়। কোনো বিষয়ে মতভেদ থাকলে সেটি আলোচনার টেবিলে সমাধা হবে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের পাঁচ মাসের মাথায় একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটছে তা দুঃখজনক। জাতিগত শান্তি প্রতিষ্ঠায় হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারে দাবি জানান তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রিফাত রশীদ বলেন, ছাত্রলীগের কায়দায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে।নিষিদ্ধের পরে ছাত্ররীগ ভোল পাল্টিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করে আমাদেরকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ও এদের পেছনে কারা আছে তাদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্র বইয়ের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দটি রাখা ও বাদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ের সামনে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ও ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ দুটি সংগঠন কর্মসূচি পালন করার সময়ে গতকাল বুধবার দুপুরে দুটি পক্ষ সংঘর্ষের জড়ায়। এতে দুপক্ষের অন্তত ১০ জনের অধিক আহত হন। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত