গান ছাড়ার ঘোষণায় আওয়ামীপন্থিদের কটাক্ষের শিকার তাহসান

বিনোদন রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ০০

জনপ্রিয় গায়ক তাহসান খান তার ২৫ বছরের সংগীতজীবনের বিশেষ মুহূর্ত উদ্‌যাপন করতে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া সফরে আছেন। সেখানেই অবসরের ঘোষণা ও কারণ জানিয়ে সবাইকে হতবাক করেছেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তাহসানকে বলতে শোনা যায়, ‘এটাই আমার লাস্ট কনসার্ট। আস্তে আস্তে মিউজিক ক্যারিয়ারটাও গুটিয়ে ফেলব। মেয়ে বড় হচ্ছে, এখন কি দাড়ি রেখে স্টেজে দাঁড়িয়ে এমন লাফালাফি করতে ভালো লাগে?’

তার গান ছাড়ার ঘোষণা এবং এর পেছনের কারণ নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা। অনেকের মতো এ নিয়ে ফেসবুকে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন। তিনি তাহসানের ওই বক্তব্যসমৃদ্ধ একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে প্রশ্ন করেছেন, ‘দাড়ি রেখে বুঝি স্টেজে গান গাওয়া নিষেধ? মেয়ে বড় হলে বুঝি গান গাওয়া নিষেধ? লাফালাফি করতে ইচ্ছা না হলে লাফালাফি না করেও গান গাওয়া যায়। আমি তো জানি, একমাত্র গান গাইতে না পারলেই স্টেজে গান গাওয়া উচিত নয়। তাহসান তো এখনো গান গাইতে পারেন। তাহসানের দাড়ি কি ইসলামি দাড়ি?’

বিজ্ঞাপন

এরপর তিনি লিখেছেন, ‘ইসলামি দাড়ি হলে না হয় বুঝতাম ইসলাম ব্যবসায়ীদের ফতোয়া মেনে গান ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। দেশে যখন গান-বাজনা বন্ধ করার জন্য জিহাদি জঙ্গিরা উঠে-পড়ে লেগেছে, তিনি তখন গান-বাজনার পক্ষে না দাঁড়িয়ে গান-বাজনা ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে কথা বলছেন। তিনি কি মনে করেন, কণ্ঠশিল্পীরা দাড়ি রাখলে বা যাদের মেয়ে বড় হয়, তাদের গান-বাজনা বন্ধ করা উচিত, তাদের আর স্টেজে গান গাওয়া উচিত নয়? তাহলে তিনি তো জিহাদিদের মতোই কথা বললেন—যে জিহাদিরা বাউল উৎসব বন্ধ করছে, লালনমেলা বন্ধ করছে, স্কুলে গানের শিক্ষক বাতিল করছে, গান-বাজনার মাজার পুড়িয়ে দিচ্ছে! তিনি কি গান-বাজনার বিরুদ্ধে ওদের জিহাদ ঘোষণায় সায় দিয়েছেন? তা না হলে তার কোনো প্রতিবাদ দেখিনি কেন?’

নির্মাতা দীপংকর দীপন তাহসানের নাম উল্লেখ না করে লিখেছেন, ‘যাদের একসময় গিয়ে মনে হবে গান হচ্ছে মঞ্চে লাফালাফি, অভিনয় হচ্ছে গুনাহ—তারা কেন এই লাফালাফি আর গুনাহটা করছেন? এখনই বাদ দিন, গুনাহর পাল্লাটা কম ভারী হবে। বাজার পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কেন?’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আপনারা মেধাবী। আরো অনেক কিছু করেই তো পয়সা কামাতে পারবেন। আপনারা প্রকৃত অর্থে কোনোদিন শিল্পী ছিলেন না। যত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, ততই ভালো সবার জন্য। বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা পারফর্মিং আর্টসকে আরাধনার মাধ্যম মনে করে।’

সবশেষে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নির্মাতা অন্য শিল্পীদের উদ্দেশে লেখেন, ‘আর গুনাহর পাল্লা বাড়ায়েন না ভাই ও বোনেরা। দুদিন পরে বাজার পড়ে গেলে তারপর তওবা করে লোক হাসায়েন না। তাতে ইহকালেও ক্ষতি, পরকালেও ক্ষতি। তওবা করতে হলে এখনই করেন, তাতে সবার লাভ।’

একইভাবে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে আওয়ামীপন্থি শিল্পীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’-খ্যাত অভিনেত্রী সোহানা সাবা ও অঞ্জনা বিশ্বাস তাহসানকে উদ্দেশ করে বাজে ইঙ্গিতবহ পোস্ট করেছেন, যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

নাসির হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘একটা মানুষ নিজের ইচ্ছায় গান ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তাতেই সবাই একাট্টা হয়ে সমালোচনা করছে। অবাক বিষয় হলো, সমালোচকদের বেশিরভাগই নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।’ ‘কেউ ভালোর দিকে গেলে আওয়ামী লীগেরই কেন গায়ে লাগে?’—এমন প্রশ্নও করেছেন তিনি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত