শুভ জন্মদিন

জীবনের বাকিটা সময় মানুষের জন্যই ব্যয় করতে চান কনক চাঁপা

আফসানা খানম আশা
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৮
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৭

বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের ধ্রুবতারা, বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র রুমানা মোর্শেদ কনক চাঁপা। বিশেষত সিনেমার গানে তার অবদান বাংলাদেশের মানুষ যুগের পর যুগ শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে। বাংলাদেশের সিনেমায় বিশেষত নব্বই দশটা ছিল কনক চাঁপার জয়জয়কারের সময় একটা সময় বাংলাদেশের সিনেমার প্লে-ব্যাকে (সিনেমার গান) দাপুটে সময় কাটিয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন ও রুনা লায়লা। আর তাদের দু’জনের পর একচ্ছত্র দাপুটে সময় কাটিয়েছেন কনক চাঁপা। দেশে বিদেশে কনক চাঁপার কোটি কোটি ভক্ত। কিন্তু কনকচাঁপা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি তার বাকিটা জীবন সাধারণ মানুষের সেবায় পার করে দিতে চান।

আশা করা যাচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কনক চাঁপা বিএনপি থেকে ‘সিরাজগঞ্জ-১’ আসনের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন। আপাতত রাজনীতিতেই তাই সময়টা বেশি দিচ্ছেন কনক চাঁপা।

বিজ্ঞাপন

রাজনীতিতে আপনি কতদূর যেতে চান?

রাজনীতিতে কতদূর যেতে পারবো জানি না। তবে আমি মানুষের কাছে যেতে চাই। আমি মানুষের এতোটাই কাছে যেতে চাই সাধারণ মানুষ আমাকে হাত বাড়ালেই যেন পায়। এটা সত্যি যে একটা সময় গান দিয়ে, গান গেয়ে মানুষের মাঝে ছিলাম, অন্তরে ছিলাম। এখনো হয়ত আছি। তবে আমি চাই আমার দাদার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের সাধারণ মানুষের কাজে আসতে। মূলকথা হলো আমি আমার বাকিটা জীবন তাদের জন্যই ব্যয় করতে চাই।

আজ আপনার জন্মদিন, জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

অশেষ ধন্যবাদ।

জন্মদিনটি কীভাবে কাটাচ্ছেন?

এখন আর জন্মদিন নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস বা আনন্দ নেই। ঢাকাতেই আছি। তবে মেয়ে এবং পুত্রবধূ দিনটিকে বিশেষায়িত করে তোলার চেষ্টা করে। এছাড়াও আমার একটি অনলাইন গানের স্কুল আছে। সেই স্কুলের ছেলে মেয়েরা আজ সন্ধ্যায় বাসায় আসবে। এমন না যে আমি ওদের দাওয়াত দিয়েছি, অড়া নিজে থেকেই আসবে। ইচ্ছা ছিল নিজে হাতে রান্না করে ওদের খাওয়াবো কিন্তু সংখ্যাটা একটু বেশি হয়ে যাওয়ায় নিজ হাতে রান্না করা হচ্ছে না। তবে তাদের জন্য রান্না বান্নার আয়োজন থাকবে, এই নিয়ে আজ ব্যস্ত সময় কাটবে।

আপনার উল্লেখযোগ্য নতুন তেমন কোন গান আসছে না, এর কারণ কি?

আমার সময়ের গানের সেক্টরে যারা কাজ করতেন-সেসব গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, এমন কী কোনো কোনো সহশিল্পী, স্টুডিও ইঞ্জিনিয়ার-সবাই যেন দল বেঁধেই পরপারে চলে গেলেন। আর এই সময় যারা গান করছেন তাদের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোটাও সময়ের ব্যাপার। এমন এমন কিছু গান করার প্রস্তাব আসে, যা একেবারেই বেমানান। বিষয়টি এমন নয় যে পেমেন্ট দিলেই গান গাইতে হবে। গানটি কে লিখেছেন, কে সুর করেছেন এবং সহশিল্পী কে সেই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। এরপর যদি মনে হয় গাওয়া যেতে পারে, তখন গাইবো। নইলে নয়।

ভিউয়ের এই যুগে বহুদিন থেকে যাবার মতো গান যেমন হচ্ছে না, আবার সিগনেচার ভয়েজও হচ্ছে না, কারণ কি?

সত্যি বলতে কী ভালো বা মেলোডিয়াস গানের চেয়ে এখন আইটেম গান বেশি হিট হচ্ছে। হয়তোবা এটা যুগের চাহিদা। কিন্তু আইটেম গানের সঙ্গে সামান্য কাপড়ে যখন সিনেমার পর্দায় বা চ্যানেলে সেই গানটি আসে তখন তা আসলে দেখতে আর ইচ্ছে করে না। আর সিগনেচার ভয়েজটা তৈরী হতে একটু সময় লাগে। পরে বুঝা যায়। তবে এখন সময়টা বেশি লাগছে কারণ সব গান প্রায় একই রকম হচ্ছে। আমাদেরকে মেলোডিয়াস গানের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। দেখা যায় যে এখনো মানুষ একান্তে সুন্দর সময় কাটানোর জন্য শ্রদ্ধেয় ফেরদৌসী রহমান, ফিরোজা বেগম, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা কিংবা সন্ধ্যা মুখার্জির গান শোনেন। মেলোডিয়াস গানের চাহিদা যুগের পর যুগ থেকে যায়। আমাদের লুইপা, সালমা, ঝিলিক ওরা খুব ভালো গায়। তাদের কণ্ঠ ঠিকঠাকমতো মেলোডিয়াস গানে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে আমি মনেকরি।

আপনার গানের শ্রোতা বা ভক্তদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?

আমি আজীবন নিজেকে কণ্ঠ শ্রমিকই বলি। নদীর মাঝি, পানের দোকানদার, চায়ের স্টলের মালিক তারাও আমার গান শোনেন মন দিয়ে প্রবল আগ্রহ নিয়ে। সেইসব শ্রমিকদের সম্মান রেখেই বলছি, আমি তাদের সঙ্গে নিজের অ্যাটাচম্যান্ট রাখতেই স্বাভাবিকভাবেই আমি নিজেকে কণ্ঠ শ্রমিক পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর একজীবনে আমি গানের জন্য এত মানুষের ভালবাসা আর সম্মান পেয়েছি, তা অকল্পনীয়। এটা আমার পরম পাওয়া।

কনক চাঁপা ১৯৯৫ সালে ‘লাভ স্টোরি’ সিনেমাতে ‘কেতা মানুষ ভবের বাজারে’ গানটি গাওয়ার জন্য প্রথম শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি ‘প্রেমের তাজমহল’ সিনেমায় ‘এ বুকে বইছে যুমনা’ ও পরবর্তীতে ‘এক টাকার বউ’ সিনেমার ‘ভালোবাসা ভালোবাসা থাকো তুমি দূরে’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত