মুক্তি পেল অন্যায়ের শিকার ‘মেকআপ’

বিগত সরকারের চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড সদস্যদের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’ মেকআপ সিনেমাটি শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে। যা ঢাকাসহ সারা দেশের ২৩ হলে প্রদর্শিত হচ্ছে। এর আগে চার দফা সংশোধনী, প্রতিস্থাপন ও পরিমার্জন শেষে ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ থেকে মুক্তির সনদ পেয়েছে নির্মাতা অনন্য মামুন পরিচালিত সিনেমাটি। তবে মুক্তির আগে সিনেমা থেকে বাদ দিতে হয়েছে ১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের দৃশ্য।

চলচ্চিত্র শিল্পের গল্পে নির্মিত ‘মেকআপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, জিয়াউল রোশান ও নিপা আহমেদ।

মামুন জানান, লাইট-ক্যামেরায় বন্দি শিল্পীদের জীবন। মেকআপের কারণে অনেকে ব্যক্তিগত জীবনের অনেক সত্য লুকিয়ে রাখেন। চলচ্চিত্রের অনেক শিল্পী শুধু ক্যারিয়ারের কথা ভেবে সংসার জীবন পর্যন্ত আড়াল রাখেন। দিন শেষে মেকআপ তুলে সবাইকে ফিরতে হয় আপন ঠিকানায়। যেখানে মেকআপ থাকে না, থাকে শুধু সত্য।

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের এবং শিল্পীদের ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিজীবনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা হয় তাই নিয়ে ‘মেকআপ’। চলচ্চিত্রের মানুষদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের অভিযোগে ২০২১ সালে সেন্সর বোর্ড থেকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়। যা ছিল স্পষ্ট অন্যায়। বর্তমান সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ড মাত্র ১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের দৃশ্য কর্তনের নির্দেশ দিয়েছে। যা একটা সিনেমার জন্য বড় কোনো ইস্যু না।

সেন্সরবোর্ড সদস্যদের অন্যায় আচরণের শিকার হওয়ায় চলচ্চিত্রটির ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে অনন্য মামুন আমার দেশকে বলেন, ‘তিন বছর আগে বানানো একটা চলচ্চিত্র এখন মুক্তি দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে কতকিছু বদলে গেছে। কত আপডেট চলে আসছে। সিনেমাটা তখন দেখাতে পারলে দর্শক যেভাবে কানেক্ট করতে পারতেন এখন নিশ্চয় তা হবে না। তারপরও একজন প্রযোজক লগ্নি করেন সিনেমাটা মানুষকে দেখানোর জন্য।’

তিনি বলেন, ‘সিনেমাটিতে এমন কোনো সমস্যা ছিল না। বিগত সেন্সরবোর্ডের একজন সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা অজুহাত দিয়ে সিনেমাটি আটকে রাখে। একজন প্রযোজক, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা নিশ্চয় চলচ্চিত্রের নানা দিক বুঝেই সিনেমা বানান। সেই সিনেমা আটকে দেওয়াটা অন্যায়। মেকআপ অন্যায়ের শিকার।’

গত ১৭ ডিসেম্বর সিনেমাটির সংশোধিত সংস্করণের সনদপত্র দেয় চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড। সেখানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন-২০২৩-এর ৫ ধারা অনুযায়ী, সিনেমাটি সর্বসাধারণের মাঝে প্রদর্শনের অনুমোদন করা হইল।’

বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল বলেন, ‘বোর্ড সদস্যদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে মেকআপ সিনেমাটিকে সনদ দেওয়া হয়েছে। বোর্ড যে সংশোধন দিয়েছিল, তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এতে নানা সংশোধন, প্রতিস্থাপন, পরিমার্জন করা হয়েছে। নায়িকার প্রথম চলচ্চিত্রের প্রচারে পত্রিকায় প্রকাশিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছবি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।’

২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পকে ‘নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের’ অভিযোগে মেকআপ সিনেমাটি ‘প্রদর্শন অযোগ্য’ ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। সম্প্রতি ‘সেন্সর বোর্ড’ বদলে সরকার ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ গঠন করলে সেখানে জমা দেওয়া হয় সিনেমাটি। গত ২৭ অক্টোবর সেখান থেকেও সিনেমাটির প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা হয়। আজমাত রহমান প্রযোজিত ‘সেলিব্রেটি প্রোডাকশন’-েএর সিনেমা ‘মেকআপ’ কোথাও প্রদর্শিত হলে তা বাজেয়াপ্ত করাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ছিল বোর্ডের।

২০২১ সালে সেন্সর বোর্ডের চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘এ চলচ্চিত্রে অসম্মানজনক সংলাপের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী-কলাকুশলী ও চলচ্চিত্রশিল্পকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ছবিটি জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শনযোগ্য নয় মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

‘মেকআপ’ সিনেমাটি সবাইকে হলে গিয়ে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন।