রাজনীতি খুবই কঠিন, কঠিনেরেই ভালোবাসিলাম

বিনোদন রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ১৯
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ২৩

রুমানা মোরশেদ কনকচাঁপা সংগীত জগতের এক অবিস্মরণীয় নাম। কণ্ঠশ্রমিক, চিত্রশিল্পী, লেখকসহ বহু পরিচয়ে পরিচিত এই শিল্পী বিচরণ করছেন রাজনীতির মাঠে। তার গান, যাপন ও রাজনৈতিক ভাবনা তুলে ধরেছেন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

বিজ্ঞাপন

নতুন বাংলাদেশ কেমন লাগছে?

এক দীর্ঘ অপশাসন হওয়ায় শেষ হলো, যা ভালো লেগেছিল। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আমাকে ব্যথিত করছে। তারপরও এত সংগ্রাম, এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে নতুন যে দেশকে পেলাম, তা সাজাতে, সবকিছু গুছিয়ে নিতে সময় লাগবে। আমরা সব কাটিয়ে উঠব, ইনশাহআল্লাহ।

দেশের নানা খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এর থেকে উত্তরণের উপায়...

বিশ-পঁচিশ বছর আগে থেকে দেশের মানুষের নৈতিকতা, শিষ্টাচার ও সুবচন নিয়ে কাজ করা দরকার ছিল। গত দেড় যুগে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। আমরা শত বিপদেই হাসতে ভুলি না। ধার করে হলেও মেহমানদারিত্ব করি। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সাধারণ মানুষকে ভুল পথে নিয়ে গেছে। সবার ভেতরে এক ধরনের আক্রোশ ছড়িয়ে দিয়েছে। একজন পালিয়ে গেছে, কিন্তু তার শিখিয়ে দেওয়া লোভ, লালসা, আক্রোশ অন্যদের মাঝে কাজ করছে। সবার মাঝে শিষ্টাচারের চর্চা ছাড়া এই সংকট কাটাতে সময় লাগবে।

গত ১৭ বছরে কী ধরনের আক্রোশের শিকার হতে হয়েছে?

আমি খুবই সরল ও ইতিবাচক মানুষ হওয়ায় আমার ওপর যে তাদের আক্রোশ কাজ করছে, সেটাও বুঝতে পেরেছি দু-তিন বছর পর। আস্তে আস্তে আমার কাজ কমতে থাকল। আমাকে যারা গান গাইতে ডাকত, তারা ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমিয়ে দিল। পরে জেনেছি, আমাকে গান গাইতে ডাকলে তাদের ওপর চাপ আসে। টেলিভিশনে আমার গান বাজত না। দ্বৈত গানে আমার অংশ কেটে দেওয়া হতো। অঘোষিতভাবে সব জায়গা থেকে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমাকে কত হাস্যকর উপায়ে থামিয়ে রাখা হয়েছে, তার একটা উদাহরণ দিই? অনেক সময় দেখতাম রাস্তায় মাইকে বাজছে ‘মোরা নিরন্ন মোরা ক্ষুধার্ত’…। এই গানের শুধু কিশোরদের অংশ বাজত। আমার অংশ আসার আগেই গান শেষ হয়ে যেত।

খারাপ লাগেনি?

একটুও মন খারাপ করিনি। আমি রিজিকে বিশ্বাস করি। আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে আমার। বরং আমাকে যারা নিষিদ্ধ করেছিল, অবসর দিয়েছিল, তাদের ধন্যবাদ জানাই; কারণ জীবন আমাকে কখনো অবসর দেয়নি। সেই ছোটবেলা থেকে আমি গান গাইছি। যখন ‘মা’ বলা শিখছি, তখন সাথে (সারগম) সুর লাগানো শিখছি। যখন পড়ালেখা শিখছি তখন গানের বাণী লেখা শুরু করেছি। শৈশব থেকেই আমার কখনো অবসর ছিল না। নিজেকে ফিরে দেখার সুযোগ পাইনি। গান, সংসার ও সামাজিক কাজকর্ম নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কেটেছে আমার।

এখন ব্যস্ততা কেমন?

আমি তো খুবই আহ্লাদি জীবন কাটাচ্ছিলাম। ফজরের নামাজের পর লম্বা ঘুম দিতাম। ১২টা-১টা পর্যন্ত ঘুমাতাম। এখন মনে হচ্ছে, মাটিতে নেমে এসেছি। গান-রাজনীতি সব মিলিয়ে বেশ ব্যস্ততায় কাটছে।

গান করছেন?

৫ আগস্টের পর থেকে গান গাইছি। নিয়মিত মঞ্চানুষ্ঠান করছি। গত বুধবার বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ১০৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে রিইউনিয়ন ছিল। সেখানে গান করে ঢাকায় ফিরে পরদিনই এসেছি আমার নিজের জেলা সিরাজগঞ্জে। সিরাজগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে গান করলাম। এরপর সময় কাটাচ্ছি কাজীপুর উপজেলার মানুষদের সঙ্গে। তাদের ভালো-মন্দ খোঁজখবর জানছি। সব মিলিয়ে আলহামদুল্লিাহ ভালো সময় কাটছে।

কী ভেবে রাজনীতিতে এলেন?

আপনারা জানেন, আমি শুধু গান নিয়ে কখনোই ছিলাম না। গানের পাশাপাশি মানুষের সুবোধ ও নৈতিকতা সৃষ্টির চেষ্টা ছিল। অনলাইন একটা ক্লাসে আমি সমাজের নানা স্তরের মানুষদের জীবন ও যাপন শেখাই, নীতি ও নৈতিকতা শেখাই। এরপর মনে হলো শুধু অনলাইনে না থেকে সামাজের সব স্তরের মানুষকে সুশিক্ষার আওতায় আনা দরকার, সবার পাশে দাঁড়ানো দরকার। ব্যক্তি কনকচাঁপার পক্ষে সমাজের সব মানুষের শিক্ষাদান ও দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা সম্ভব নয়। পাশে দরকার প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। এই ভাবনাটাই আমাকে গানের মঞ্চের মতো রাজনীতির ময়দানেও টেনে আনল।

আপনার রাজনীতিতে আসা ভক্তরা কীভাবে দেখছে?

বেশিরভাগই ভালোভাবে দেখছে। আমাকে যারা চেনে তারা জানে, রাজনীতি থেকে আমার কিছু পাওয়ার নেই। একজন মানুষের জীবনে যে অর্জন ও সচ্ছলতা লাগে, তার সবই আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ রাজনীতিতে আসা ভালোভাবে দেখছেন না। ওই যে বললাম, নৈতিকতা ও সুবচনের অভাব যাদের আছে, তারাই আমাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না। আমি সমাজের অল্প কজন দুষ্টু মানুষের কথা চিন্তা করে থেমে যেতে পারি না। বরং আমাকে ঘিরে যারা স্বপ্ন দেখছে, যারা মনে করছে আমার রাজনীতি হবে জনমানুষের রাজনীতি—আমি বরং তাদের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে যাব।

আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবনা কী?

আগামী নির্বাচন নিয়ে যত ভাবনা ভাবা যায় সবই ভাবছি। শুধু আমি একা ভাবছি তা নয়, আমার পুরো পরিবার, আমার নির্বাচনী এলাকা কাজীপুরের লাখো মানুষ—সবাই আমাকে নিয়ে ভাবছে।

নির্বাচনি এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ততা কেমন?

২০১৮ সালে যে নির্বাচনটা হলো, এরপর সেভাবে এলাকায় আসতে পারিনি। আমি আত্মীয়র বাড়িতে এলেও তার বাড়ি পোড়ানোর হুমকি দিত। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আমি এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি। এলাকায় আত্মিক সংযোগ বৃদ্ধি করছি। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে।

নির্বাচনে বিজয়ী হলে নানা নৈতিক-অনৈতিক সুপারিশ আসবে। সেগুলো কীভাবে সামলাবেন?

আমার নীতি থেকে নড়তে পারব না। ভালো কাজের জন্য কেউ এলে অবশ্যই সাহায্য করব। মন্দ কাজের জন্য এলে মন্দটা বুঝিয়ে বলব। আমার বিশ্বাস কাউকে ভালোমতো বুঝিয়ে বললে সে মন্দ কাজের পেছনে দৌড়াবে না। যারা নির্যাতিত, যারা প্রাপ্য, তাদের পাশে থাকব।

নির্বাচিত হলে কোন কাজটায় অগ্রাধিকার দেবেন?

আমার এলাকার মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা তাদের প্রধান চাওয়া। সবাই শান্তির পরিবেশ চায়। আমি সেটাই ফিরিয়ে আনব ইনশাহআল্লাহ। জানি রাজনীতি খুব কঠিন। এই কঠিনেরেই ভালোবাসিলাম। আমি প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং শেষত মিথ্যাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করব।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত