প্রক্টর সদস্যকে মারধর, ঢাবি ক্যাম্পাসে মাদক-ভবঘুরে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

ঢাবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ৪১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসায়ী, ভবঘুরে ও ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের এক সদস্য আহত হয়েছেন। শনিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে আহত সদস্যের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে প্রক্টরিয়াল টিম।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ক্যাম্পাসে হকার ও বহিরাগতদের উচ্ছেদ অভিযানের পর বামপন্থী কয়েকটি সংগঠন হকারদের নিয়ে বিক্ষোভ করে। এর প্রতিবাদে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের ও সদস্য সর্বমিত্র চাকমার নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নেন এবং বাম সংগঠনগুলোর ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান ও ভবঘুরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা চলছে। এই চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি ‘অদৃশ্য ওপরমহল’।

প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও, কয়েক দিনের মধ্যেই সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরে আসে বলে অভিযোগ তাদের।

তথ্যানুসারে, উদ্যানে নির্মিত সাতটি ফুড কিওস্ক এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কোনো কর্তৃপক্ষ সেগুলোর দায়িত্ব নিচ্ছে না, ফলে আশ্রয় নিয়েছে ছিন্নমূল মানুষ ও ভবঘুরেরা। দিনে ফুল বিক্রি করলেও, রাতের বেলা তাদের অনেকে মাদক বিক্রিতে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের দাবি, এলাকায় অন্তত ৫০-৬০ জনের সক্রিয় মাদকচক্র নিয়মিতভাবে কাজ করছে এবং তাদের কাছ থেকে যেকোনো ধরনের মাদক পাওয়া যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) স্টাফ রিপোর্টার তাওসিফুল ইসলাম জানান, “এই চক্র নতুন কিছু নয়। আমি ২০২৩-২৪ সালে ক্যাম্পাসে অবৈধ দোকান ও ভবঘুরে সিন্ডিকেট নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছিলাম। তদন্ত কমিটি তখন সত্যতা পেয়েছিল। লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজির প্রমাণও মেলে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য হয়ে প্রক্টর অফিসের টোকেনম্যান ও সাবেক প্রক্টর গোলাম রাব্বানীর ড্রাইভার শামীমকে চাকরিচ্যুত করে।”

তিনি আরও বলেন, “আজ যাকে তখন সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাকেই আবার এই ভবঘুরে দলের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। কারা তার কাছ থেকে মাসোহারা পায়, সেটা প্রশাসনের দেখা উচিত।”

ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, “ক্যাম্পাস আজ কথিত ‘হকার’ বা ‘ভবঘুরে মানুষের’ আড়ালে এক সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের হাতে জিম্মি। বিতাড়িত ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে কারা এই চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তা এখন পরিষ্কার। আমরা ক্যাম্পাসের প্রতিটি অবৈধ সিন্ডিকেট উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”

ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, “ঢাবির স্টেকহোল্ডার কেবল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। মাদক ব্যবসায়ী বা অনিবন্ধিত হকারদের কোনো ইস্যুই বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। বহিরাগত উচ্ছেদে প্রশাসনের উদ্যোগে যাদের অবৈধ ব্যবসা ভেঙে পড়ছে, তারাই এখন নতুন নাটক সাজাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “কথা একটাই- হয় ডাকসু থাকবে, নয়তো মাদক সিন্ডিকেট থাকবে; দুটো একসাথে চলবে না।”

ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের বলেন, “বিকেলে প্রশাসন অবৈধ দোকান ভেঙে দিয়েছিল। এখন বাম সংগঠনগুলো সেই হকারদের নিয়ে মিছিল করছে- এটা নিছক ভণ্ডামি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে তারাই এর দায় নেবে।”

ডাকসুর সদস্য সর্বমিত্র চাকমা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যেসব বাম সংগঠন আজ হকারদের উস্কে দিয়েছে, তাদের যদি প্রশাসন শোকজ না করে, আমি নিজেই পদত্যাগ করবো।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে এটি কেবল প্রক্টোরিয়াল টিমের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

তিনি জানান, আগামীকাল সকালে প্রক্টোরিয়াল টিম ও ডাকসুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। “আজকের ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থী যুক্ত ছিল কি না, তাদের দাবি কী- তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত