জাকারবার্গের ‘মেটা এআই’ চ্যাটবট

ইবনে আনওয়ার
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ১২: ২৮

এতদিন মেটার এআই টেকনোলজি শুধু মেটার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারে একীভূত অবস্থায় ছিল। তবে এবার মেটা একটি স্বতন্ত্র এআই অ্যাপ চালু করছে। মেটার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এই এআই অ্যাপটির নাম ‘মেটা এআই’। এআই জগতে মার্ক জাকারবার্গের শক্ত অবস্থান তৈরির কৌশলের একটা অংশ মেটা এআই বলে ধারণা করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।

বিজ্ঞাপন

গত মঙ্গলবার মেটার এল-লামাকন ইভেন্টে উন্মোচিত মেটা এআই অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। যেটা অন্যান্য এআই সহকারী যেমন : চ্যাটজিপিটি অ্যাপ, জেমিনি ইত্যাদির মতো কাজ করে। অ্যাপটি উন্মুক্ত করার কারণে হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারের বাইরেও যেকোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে মেটা এআই। এ ছাড়া মেটার স্মার্ট এআই চশমাতেও এ অ্যাপটি ব্যবহার করবে প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের বদৌলতে মেটার কাছে ইতোমধ্যেই অধিকাংশ মানুষের সম্পর্কে ধারণা আছে। আপনি কে, আপনি কী পছন্দ করেন এবং আপনি কাদের সঙ্গে সময় কাটান, তা ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে বছরের পর বছর ধরে আপনার শেয়ার করা ডাটার ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে মেটা এআইকে, যা একে ওপেনএআই এবং অ্যানথ্রপিকের মতো কোম্পানিগুলোর থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে। ফলে মেটা এআই খুব সহজেই ব্যবহারকারীদের মন জয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওপেনএআই এবং অ্যানথ্রপিকের মতো কোম্পানিগুলোর থেকে কেন মেটা এআই আলাদা, সেটা মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে মেটা।

মেটার এআই অ্যাপটি বিদ্যমান এআই সহকারীদের থেকে নিজেকে আলাদা করে উপস্থাপন করে। এর কারণ আমরা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে থাকি। যেগুলো থেকে মেটা আমাদের পছন্দ অপছন্দের অনেক তথ্যই জানে। সেসব তথ্যের অনেক ডাটা যুক্ত করেছে মেটা তাদের এআই অ্যাপে। আর তাই ভবিষ্যতে মেটা এআইয়ের সঙ্গে কথোপকথনের সময় আমরা নিজেদের সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারব। এ ছাড়া মেটা এআই আগের কথোপকথনের তথ্য মনে রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কথোপকথনে আপনি মেটা এআইকে যদি বলেন, আপনার ইলিশ মাছে অ্যালার্জির সমস্যা আছে। সে এই তথ্য মনে রেখে দেবে। পরে আপনি মাওয়া ঘাটে গিয়ে খাবার খাওয়ার বিষয়ে মেটা এআইকে জিজ্ঞাসা করলে সে আপনাকে ইলিশ মাছ খেতে বারণ করবে। মেটা এআই আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে, ইলিশ মাছে আপনার অ্যালার্জির সমস্যা আছে।

তবে, যেকোনো এআই পণ্যের মতো ব্যবহারকারীদের সচেতন থাকা উচিত যে মেটা কীভাবে তাদের চ্যাটবটগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা ডাটা ব্যবহার করতে পারে। মেটা তার বিজ্ঞাপন ব্যবসাকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহারকারীর ডাটার ওপর নির্ভর করে, যা তার সিংহভাগ আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। ফলে এটি ব্যবহারে আমাদের অন্য চ্যাটবটগুলোর মতো সতর্ক থাকতে হবে।

টিকটককে ৬০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা

নাকিব আদনান

টিকটক হলো চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইরিশ ডাটা প্রোটেকশন কমিশন কর্তৃক ৫৩০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার) জরিমানার মুখে পড়েছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ ছিল ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চীনে স্থানান্তরের ঝুঁকি এবং তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ইইউ মান পূরণে ব্যর্থতা।

চীনে ডাটা পাঠানোর জন্য ভিডিও অ্যাপটিকে ৪৮৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছে এবং ডাটা স্থানান্তরের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থতার জন্য ৪৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়েছে। ২০২২ সালে টিকটক তার গোপনীয়তা নীতি আপডেট করে এবং আদালত সেই নতুন নীতিটিকে যথাযথ বলে মনে করে। কোম্পানিটি ইইউতে ডাটা সেন্টারে ১২ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে; কিন্তু তা আদালতকে প্রভাবিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল না।

টিকটক এই রায়ের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা দাবি করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিজস্ব আইনি কাঠামো, বিশেষ করে স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রাকচুয়াল ক্লজ ব্যবহার করে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে রিমোট অ্যাক্সেস দিয়েছে। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছে।

এই সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে টিকটক বলেছে, ‘এই রায় বিশ্বব্যাপী পরিচালিত ইউরোপীয় কোম্পানি এবং সমগ্র শিল্পের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতির নজির স্থাপনের ঝুঁকি তৈরি করবে।’ টিকটকের এই সিদ্ধান্তটি ২০২৩ সালে প্রথম চালু করা ডাটা সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা স্বাধীনভাবে দূরবর্তী অ্যাক্সেস পর্যবেক্ষণ করে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবহারকারীর ডাটা ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিবেদিত ডাটা সেন্টারে সংরক্ষণ করা হয় তা নিশ্চিত করে। এই জরিমানা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি বড় বার্তা। ব্যবহারকারীর ডাটা নিয়ে কার্যক্রম চালাতে হলে ব্যবহারকারীদের ডাটা সর্বোচ্চ মানে নিরাপদ রাখতে হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত