চলতি বছরের গত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) দেশে সাইবার এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে দাবি করেছে সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন প্ল্যাটফর্ম।
সংগঠনটি মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, গেল ছয় মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে মোট ২৯টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়। এতে ডিজিটাল মাধ্যমে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল ও যৌন হয়রানি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে অশ্লীল ছবি তৈরি এবং অনলাইনে সহজ ও বাধাহীনভাবে ব্যক্তিগত তথ্য ও ভিডিও ছড়িয়ে এবং বহুস্তরভিত্তিক অপরাধের প্রবণতা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে।
এতে আরো বলা হয়, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সাইবার অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা সংগঠনগুলোর জোট ‘সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন (সিএসডব্লিউসি)’ প্ল্যাটফর্মের সদস্যরা যৌথভাবে ২৯টি সাইবার ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করে। এর মধ্যে মার্চে ৯টি ও এপ্রিলে ১০টি সর্বাধিক ঘটনা ঘটেছে, যা মোট ঘটনার ৬৫ শতাংশেরও বেশি।
সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে ঢাকা শহর থেকে ১৩টি, যা দেশের রাজধানী হিসেবে ডিজিটাল অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ নারী, ২১ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাশিশু এবং ৩ শতাংশ পুরুষ ছিলেন। অধিকাংশ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ৪১.৩ শতাংশ, আর গৃহিণী ২০.৭ শতাংশ। অন্যান্য পেশার অন্তর্ভুক্ত যেমন এনজিও কর্মী, ব্যবসায়ী এবং বিক্রয়কর্মী, যা ইঙ্গিত দেয় যে সামাজিকভাবে তুলনামূলকভাবে দুর্বল গোষ্ঠীই অনলাইন সহিংসতার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্য ২৭.৫ শতাংশ ভুক্তভোগীর পেশা জানা যায়নি।
ঘটনাগুলোর মধ্যে ব্ল্যাকমেইল, ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট ছড়ানো এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর নগ্ন ছবি তৈরি করে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল। কিছু ক্ষেত্রে ৮ ও ১২ বছর বয়সী শিশুদের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার ঘটনাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ঘটনার মধ্যে একাধিক ধরনের নির্যাতনের উপস্থিতি ছিল ৭০ শতাংশের বেশি ঘটনায় একসঙ্গে ধর্ষণ, ভিডিও ধারণ, ব্ল্যাকমেইল ও ডিজিটাল কনটেন্ট ছড়ানোর মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
এছাড়া অন্তত একটি ঘটনায় এআই ব্যবহার করে ভুয়া নগ্ন ছবি তৈরি করা হয়েছে। এই ধরনের প্রযুক্তি-নির্ভর সহিংসতা শুধুমাত্র ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়, বরং সামগ্রিক সামাজিক নৈতিকতা ও মানসিক স্বাস্থ্যকেও বিপর্যস্ত করছে যা ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত।
এই পরিস্থিতিতে সংগঠনটি বলছে, সমাজে নারীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা এখন আর বিলাসিতা নয় এটি একটি জরুরি অধিকার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি যেমন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে, তেমনি তা অপরাধীদের জন্যে এক ভয়ংকর অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে সরকার, সামাজিক সংগঠন ও প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। সেইসঙ্গে সাইবার এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা প্রদানে কার্যকর নীতি ও তার বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

