ভাষা দিবসে প্রাণোচ্ছল বইমেলায় ক্রেতার ঢল

এমরানা আহমেদ
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ৫৬

মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা প্রাণ পায় একুশে ফেব্রুয়ারিতেই। একই সূত্রে গাথা যেন দুই উপলক্ষ। তাইতো শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলে দলে মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় করতে শুরু করেন বইপ্রেমীরা। প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্ত থাকায় বইমেলায় এতদিন রঙিনের আবহ থাকলেও গতকাল একুশকে ঘিরে বইমেলায় দেখা যায় সাদা-কালোর আধিক্য। সকাল ৮টা থেকে মেলার গেট খোলা থাকলেও মানুষের ঢল নামতে শুরু করে মূলত দুপুর ১২টার পর থেকে। বেলা ৩টা নাগাদ মেলা প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন পাঠক-দর্শনার্থীদের ঢল নামে মেলায়। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তরুণ-তরুণীরা পরে সাদা-কালো রঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। মুখে-হাতে আঁকা ছিল বাংলা অক্ষরের আলপনা। একুশের চেতনায় যেন প্রাণোচ্ছল হয়েছিল মেলা। তাই এদিন টানা ১৩ ঘণ্টা খোলা থাকে বইমেলার দুয়ার। এদিকে বাংলা একাডেমির মূলমঞ্চে সকাল থেকেই শুরু হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে গতকাল নতুন বই জমা পড়ে ৩০৭টি। গত ২১ দিনে মেলায় মোট বই জমে পড়ে দুই হাজার ২১২টি বই।

রাজধানীর খিলগাঁও থেকে সন্তান নিয়ে মেলায় আসেন নাজিব রহমান। আমার দেশের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানান, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগের মহিমা ও জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে তারুণ্যের আন্দোলনের জোয়ারে নতুন করে উদ্ভাসিত হয়েছে বইমেলা। তাই বইমেলা আর একুশের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই বইমেলায় সন্তানদের নিয়ে আসা।

মূলত একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকেই জমে ওঠে বইমেলা। তাই এ দিনটির জন্যই অপেক্ষায় থাকেন প্রকাশক, লেখক ও পাঠকরা। কারণ বইমেলায় বিকিকিনির গল্পটাই জমে ওঠে একুশের ফেব্রুয়ারির পর। একাধিক স্টল মালিক ও প্যাভিলিয়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রতিবার ২১-এর পর ঠিক বইমেলাতে বেচাকেনা জমে ওঠে।

জলছবি প্রকাশনের বিক্রেতা রিনিঝিনি জানান, বইমেলাতে এতদিন পাঠকরা পছন্দের বইয়ের তালিকা করেছেন। এখন তারা কিনতে শুরু করবেন। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি দিন থেকেই মূলত বিক্রি বেশি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় আসা লায়লা মাসুদ বলেন, আমার দুই সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছি। তারা যেন আমাদের একুশকে ছোট থেকেই ধারণ করতে পারে, এজন্য মেলায় এত ভিড়ের মাঝেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। পরিবারকে নিয়ে বইমেলায় আসা ‎রিমা বলেন, এর আগেও একবার এসেছিলাম, তবে আজ বেশি ভালো লাগছে। চারদিকে একুশের আবহ। ভাষা দিবসের নানা আয়োজন খুব উপভোগ করছি।

এবারের মেলায় অনন্যা থেকে প্রকাশিত হয়েছে মাহবুব আজীজের বই ‘উচ্চারণের বিপরীতে: ক্ষমতা কাঠামো ও গণঅভ্যুত্থান (২০২৪-এর আগে-পরে)’। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– আহমাদ স্বাধীনের ‘মুখোমুখি শয়তান লুসিফার’ (কলি), সজল আশরাফের ‘ইলিশ ইলিউশনস’ (অন্যপ্রকাশ), শামিমা সুলতানার ‘মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য: নানা প্রসঙ্গ’ (ঐতিহ্য), জুবায়ের রশীদের ‘বুনোগন্ধের জীবন’ (ইলহাম), অর্পণ দত্তের ‘ঈশ্বর আছেন একা’ (খড়িমাটি)।

শিশুপ্রহরে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অমর একুশে বইমেলায় বাবা-মার হাত ধরে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ঘুরে বেড়ানো শিশুদের কলতানে মুখরিত হয় মেলার শিশু চত্বর। গতকাল সকাল থেকেই শিশুপ্রহরের আয়োজন উপলক্ষে মেলার দুয়ার অবারিত হয় শিশুদের জন্য। মেলা প্রাঙ্গণের অন্য চত্বর যখন প্রায় জনশূন্য, তখন শিশু চত্বরে জমে ওঠে শিশুদের মেলা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে শিশুপ্রহরের নানা আয়োজন। ম্যাজিক, ছবি আঁকাসহ বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেয় শিশুরা। পরে তারা তাদের ছবি দিয়ে সাজায় তাদের বইয়ের প্রিয় স্টলগুলো।

শিশু চত্বরে ঘুরে ঘুরে দেখে শিশুরা। কোনো কোনো শিশু খেলে লুকোচুরি। কেউবা দুলে দুলে গেয়েছে গান। বাবা-মায়ের সঙ্গে এসে গল্প ও ছড়ার বই কিনেছে তারা।

শিশুপ্রহরের আয়োজনগুলো দেখতে স্টেজের দায়িত্বে ছিলেন কয়েকজন। শিশুদের বিভিন্ন গল্প, কবিতা শুনিয়ে প্রাণবন্ত রাখেন তারা। জানতে চাইলে তাদের একজন জানান, শিশুদের আনন্দ দিতে তারা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে রয়েছেন। এদিকে, মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের জন্য ছিল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ জানায়, শিশুদের নিরাপত্তা দিতে এখানে আমরা আট সদস্যের একটি টিম রয়েছি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত