‘শিশুর বিকাশে খেলার ভূমিকা’

নাঈমা ইসলাম
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪১
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৬

‘খেলা’ শব্দটি অতি সাধারণ মনে হলেও শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে খেলার ভূমিকা অপরিহার্য। তাই ‘খেলা’ শব্দটিকে একদমই হেলাফেলা করা উচিত নয়। শিশুদের সব ধরনের বিকাশের প্রধান সহায়ক হিসেবে কাজ করে এই ‘খেলা’।

খেলাধুলা শিশুদের জ্ঞান-বুদ্ধি, সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিজ্ঞাপন

শিশুর বিকাশে খেলার ভূমিকা

জ্ঞানীয় বিকাশ কোনো কোনো খেলায় বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা, আত্মবিশ্বাস ও মনোযোগ বাড়ে এবং নিজেদের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে শিশু জ্ঞান আহরণ করতে পারে। খেলার মাধ্যমে শিশুরা নতুন জিনিস শেখে, যা তাদের স্মৃতিশক্তি, চিন্তা করার ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি করে থাকে। এটি তাদের মনোযোগ ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে।

সামাজিক দক্ষতা

কোনো কোনো খেলায় সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। অন্যদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শিশু ভাগাভাগি করতে শেখে এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হয়। পাশাপাশি সহমর্মিতা ও সহনশীলতার গুণ অর্জন করে থাকে। সমবয়সিদের সঙ্গে খেলা তাদের মানসিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতামূলক আচরণ তৈরিতে সাহায্য করে।

child 2

শারীরিক দক্ষতা

কিছু খেলায় শারীরিক বিকাশ ঘটে। হাড় ও পেশি শক্তিশালী হয়, দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ভারসাম্য বজায় রাখা ও জিনিসপত্র তোলার প্রয়োজনীয়/ মৌলিক নড়াচড়া করার দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। দৌড়ানো, লাফানো এবং অন্যান্য শারীরিক খেলা গ্রসমটর ডেভেলপমেন্টে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

মানসিক সুস্থতা

খেলায় শিশুদের মানসিক শান্তি, তৃপ্তি বা প্রফুল্লতা বাড়ে। তারা আনন্দিত থাকে। হতাশা ও অবসাদ কমে যায়। তারা সহনশীলতা ও সহমর্মিতা শেখে। এছাড়া খেলা শিশুদের মধ‍্যে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা, পরাজয় মেনে নেওয়ার সাহস ও মনোবল, মনোযোগ, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, উদ্যম, কর্মক্ষমতা ও সহনশীলতা বাড়ায়। শিশুর কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতাও বাড়ায় এই খেলা। এবার দেখা যাক, কোন কোন খেলা শিশুদের কী কী বিকাশ ঘটায়।

১. লেগো ও প্লে ডো বা মাটি দিয়ে বিভিন্ন শেপ তৈরি করা, বাড়ি বানানো, গাড়ি বানানো, রাস্তা বানানো, পাজল সমাধান করা, শব্দ তৈরি ছাড়াও বুদ্ধি দিয়ে খেলতে হয় এমন খেলাগুলো শিশুদের বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশ ঘটায়।

২. আর শিশুরা যখন তার সমবয়সিদের সঙ্গে খেলে, তখন তার সামাজিক বিকাশ ঘটে। সে সামাজিক হাসি হাসতে শেখে, শেয়ার করতে শেখে, সহযোগিতা শেখে, দলবদ্ধভাবে খেলতে শেখে এবং এভাবেই ভবিষ্যতে সে সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলতে শেখে।

৩. এবার জেনে নিই শারীরিক বৃদ্ধির ব্যাপারে। শিশুরা যখন মাঠে বা বাইরে নিজের সব অঙ্গ সঞ্চালনা করে খেলাধুলা করে, যেমন : লাফানো, সাইকেল চালানো, দৌড়াদৌড়ি, ফুটবল ও বাস্কেটবল। এগুলোয় তার হাড়, পেশির বৃদ্ধি ও শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে, তার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়।

৪. এর সব ধরনের খেলা শিশু যখন খেলে, তখন সে মানসিকভাবে প্রফুল্লবোধ করে। তার অবসাদ কমে এবং সে মানসিকভাবে সুস্থ থাকে।

ছোটবেলায় যখন শিশুদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা হয় বা ট্রেজারহান্টের মতো কোনো খেলা খেলা হয়, তখন সে প্রবলেম সলভিং বা সমস্যার সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চারা খেলার মাধ্যমে যা শেখে, তা দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকে। তাই আধুনিক শিক্ষাব‍্যবস্থায় শিশুদের ক্লাসে গেমিফিকেশন বা খেলার মাধ্যমে শিক্ষার ওপরে বেশ জোর দেওয়া হয়েছে।

child

এছাড়া বাবা-মা যদি দিনে একটা সময় বের করে বাচ্চাদের সঙ্গে দলগত খেলা খেলেন, যেমন : লুডু, উনো, সাপ লুডু, বাগাডুলি, শব্দ তৈরির খেলা, তবে বাচ্চাদের মধ্যে টার্ন টেকিং, যেমন একজনের পরে একজন খেলবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেÑএই দক্ষতাগুলো তৈরি হয়। আর যে বাবা-মা শিশুদের সঙ্গে এভাবে দলগত খেলা খেলেন, তাদের বাচ্চারা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতে গিয়েও সহনশীল আচরণ করে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে। মারামারি ধাক্কা, দেওয়াÑএগুলো থেকে বিরত থাকে।

শিশুদের খেলার চাহিদা থাকবেই। আগে শিশুরা সারাদিন বাড়ির আঙিনায় খেলতে পারত। এখন ওরা চার দেয়ালে বন্দি। তাই ওদের জন‍্য কিছু খেলার সামগ্রী আমরা বাসায় কিনে দিতে পারি। যেমন : লেগো, বয়স অনুযায়ী পাজল ইত‍্যাদি। অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে শিশুর বয়স দেখে কিনতে হবে, না হয় শিশু উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। কারণ অনেক গবেষণা করে খেলনাগুলো বাচ্চাদের বয়স উপযোগী করে বানানো হয়। আবার সব খেলনা যে খুব দামি তাও কিন্তু নয়। অনেক কম দামেও বেশ ভালো খেলনা কিনতে পাওয়া যায়।

আর খেলায় শিশুকে আগ্রহী করা গেলে তার গেজেটের প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। আমরা যদি অন্য কোনো খেলায় শিশুকে আগ্রহী করতে না পারি, তবে তার খেলার চাহিদা পূরণ করার জন্য সে গেজেটের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

শিশুদের যত বেশি খেলায় আগ্রহী করা যাবে, ততই তার ঘুম বাড়বে, ক্ষুধা বাড়বে এবং স্ক্রিনটাইম কমে যাবে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সুন্দর স্মৃতি তৈরি হবে, বন্ধন (বন্ডিং) ভালো ও মজবুত হবে। তাই আমাদের সবারই শিশুদের বয়স অনুযায়ী খেলাধুলার বিষয়ে অত‍্যন্ত সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

নাঈমা ইসলাম

সাইকোলজিস্ট

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ‍্যান্ড কলেজ এবং টিসিসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত