আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

ভরা মৌসুমেও নেই শীত, নেপথ্যে বাড়তি উষ্ণতা

স্টাফ রিপোর্টার
ভরা মৌসুমেও নেই শীত, নেপথ্যে বাড়তি উষ্ণতা

সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসেই সারা দেশে শীত জেঁকে বসে। কিন্তু এবার অগ্রহায়ণ পেরিয়ে পৌষ মাস শুরু হলেও এখনো তেমন ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে না। এমনকি আগামী কয়েকদিনেও তাপমাত্রা সেভাবে কমারও তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে চলতি বছর তীব্র আকারের কিংবা দীর্ঘমেয়াদি শীত পড়ার মতো সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে তাপমাত্রা বেড়ে পৃথিবীব্যাপী এর প্রভাব পড়ছে।

গবেষকরাও বলছেন, শীতের মৌসুমেও তাপমাত্রা না কমার কারণ জলবায়ু পরিবর্তন, যা বিশ্বজুড়ে শীতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব কমিয়ে দিচ্ছে, সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বাতাসের আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনের কারণে শীতের স্বাভাবিক অনুভূতি ব্যাহত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ভরা মৌসুমেও এখনো কেন শীত পড়ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক সোমবার রাতে আমার দেশকে বলেন, সাধারণত বছরের এই সময়ে উত্তরের দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কথা; কিন্তু সেটা নেই। এছাড়া উপরের দিকের ঠান্ডা বাতাসের প্রবাহ বাংলাদেশের ওপরে বইছে না। এ কারণে চলতি বছর এ পর্যন্ত সেভাবে ঠান্ডার অনুভূতি নেই। আগামী এক সপ্তাহেও সে ধরনের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনে চলতি বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে; বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দেশজুড়ে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় শীতের আমেজ থাকার কথা। কিন্তু এবার এখনো তা নেই; আগামী এক সপ্তাহেও এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বায়ুদূষণসহ নানা কারণে উপরের দিকের ঠান্ডা বাতাসের প্রবাহও বাংলাদেশের ওপরে বইছে না। এসব কারণে সেভাবে শীত অনুভূত হচ্ছে না।

চলতি বছর তীব্র শীত পড়ার মতো তেমন কোনো লক্ষণও নেই। তবে আগামী জানুয়ারিতে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় শীত অনুভূত হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি শীত নাও পড়তে পারে বলে জানান এই আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ।

গত কয়েকদিনের তাপমাত্রা বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় দিনের তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রির নিচে নামছে না। সেই সঙ্গে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়েও ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। এতে এ সময় দেশে যেখানে কনকনে শীত থাকার কথা সেই অনুভূতি এখনো হচ্ছে না। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন তেঁতুলিয়ায় ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সারা দেশে শীত তেমন অনুভূত না হলেও উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে টানা পাঁচদিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে। রাত ও ভোরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় শীত বাড়লেও দিনে ঝলমলে রোদ। তবে ভোর ও রাতে সেখানে শীত অনুভূত হচ্ছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস জানায়, এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার ও শনিবার ৯ দশমিক ৩, শুক্রবার ৯ দশমিক ৫, বৃহস্পতিবার ৮ দশমিক ৯, বুধবার ও মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭ এবং আগের সোমবার ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেবে বর্তমানে তেঁতুলিয়া এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় গণমাধ্যমকে বলেন, জেলায় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শীতের অনুভূতি আরো বাড়ছে। পরিস্থিতি আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং রাত ও ভোরে শীতের তীব্রতা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন