আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে বিশেষজ্ঞদের আহ্বান

নদী বাঁচাতে ভূমি কেন্দ্রিক কূটনীতি থেকে বের হতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ০৩

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখতে এবং প্রবাহ ঠিক রাখতে ‘ভূমি কেন্দ্রিক কূটনীতি’ থেকে বের হয়ে ন্যায্য পানি বণ্টন কূটনীতিতে জোর দেওয়া উচিত। একইসাথে বাংলাদেশের চিন্তা ও অবস্থান আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় হওয়া উচিৎ। এখানে বহুমাত্রিক সুযোগ রয়েছে। সেজন্য দেশের নীতি, গবেষণা এবং বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং উদ্ভাবনী চিন্তা করতে হবে।

রোববার পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটায় শুরু হওয়া ‘১০ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

এবার ‘পানির ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্রের ভবিষ্যৎ’প্রতিপাদ্যে সম্মেলনের আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশসহ আন্ত:সীমানায় পানি ও নদী নিয়ে চলমান ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্রের বিদ্যমান সংকট, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত হয় এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা এতে বক্তব্য রাখেন।

একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।

সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফারাহ্ কবির। আগতদের স্বাগত জানিয়ে তিনি সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, নদী হচ্ছে একটি সত্ত্বা। তা এখন কঠিন সংকটে রয়েছে। সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে নদী অব্যবস্থাপনার বিরূপ প্রভাব আরও ভয়ংকর হতে পারে। নদী কারও একার অধিকার নয়। পানি আর নদীর অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে আন্ত:সীমান্ত দেশগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে। পানি ও নদী বিনিময়ে ন্যায্যতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই নদী বাঁচবে। জীবন-জীবিকায় ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা পাবে।

আয়োজনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিশ্বায়নের ফলে সবকিছু পরিবর্তন হলেও এখানে চিন্তার পরিবর্তন হয়নি। আমাদের চিন্তা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় হওয়া উচিৎ। এখানে বহুমাত্রিক সুযোগ রয়েছে। বহুমাত্রিক পৃথিবীতে আমাদের আবারও ‘ঔপনিবেশিক’ অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই, সেজন্য আমাদের নতুন করে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে, কাজ করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের পানি, জ্বালানি এবং জলবায়ু বিষয়ক লিড স্পেশালিস্ট ড. জন ডোর বলেন, এক্ষেত্রে ন্যায্যতার নীতিতে যাওয়া উচিত। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ব্রম্মপুত্র এবং তিস্তা নদীর অভিন্ন পানি প্রবাহ নিশ্চিতে ম্যাকং নদী কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আমলে নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে গবেষণা এবং যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করা যেতে পারে।

সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীসমূহের ভবিষ্যৎ’, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় উদ্ভাবন’, ‘জলবায়ু ভবিষ্যৎ, পানি অর্থায়ন এবং পানি কূটনীতির ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা হয়।

সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ এবং প্রস্তাবগুলো পরবর্তীতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতি-নির্ধারণী ফোরামে তুলে ধরা হবে।

বিষয়:

নদী দূষণ
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত