৭২-এর সংবিধানের সমাজতন্ত্র ছিল একটি প্রতারণা: সলিমুল্লাহ খান

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ২৭

৭২-এর সংবিধানের সমাজতন্ত্র ছিল একটি প্রতারণা। এখনও সেটা জারি রাখবো কি-না সেটাই প্রশ্ন রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশানের অটোবি সেন্টারের সেলিব্রিটি কনভেনশন হলে জাতীয় নাগরিক কমিটি ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত 'ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের' লক্ষ্যে থানা প্রতিনিধি সভায় অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

এসময় তিনি বলেন, আমরা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার আগে সংবিধান লিখিনি। মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার পর আমরা সংবিধান লেখার দায়িত্ব বা ক্ষমতা পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আমরা অপব্যবহার করেছি। ৭২ সালে যে সংবিধান লেখা হয়েছিল, বর্তমানে সেটা ঘুমিয়ে পড়েছে। এর যে সমস্যাটা আছে সেটা একটা স্কুলের বাচ্চাও বুঝতে পারবে।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ৭২-এর এই সংবিধানের দুইটা ভাগ। একটি হচ্ছে জনগণের অধিকার যা প্রস্তাবনা আকারে আছে। এবং অন্যটি হচ্ছে আমলাতন্ত্রের শাসন যার নাম দেয়া হয়েছে নির্বাহী বিভাগ। সেখানে প্রধান আমলা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি। ৭২ সালের আমাদের সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার নামে যে ভাগ করা হয়েছে তা আইনে বলবৎ যোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে না পারলে সংস্কারের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হবে না। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হলে মার্কেট সিস্টেমের অবিচার দূর করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখানে ভালো মন্দ যা হচ্ছে তা মার্কেট সিস্টেমের কারণে হচ্ছে। বর্তমানে মার্কেট সিস্টেমের যে অবিচার, সেটাকে দমনের জন্য আপনারা কি করবেন। জনগণের মধ্যে যারা সব থেকে অর্থনৈতিকভাবে নিম্ন আয়ের বা গরিব তাদের মজুরি ঠিক করা ছাড়া বৈষম্য দূরের যে ব্যবস্থা তা বাস্তবায়ন হবে না। আর এদের সন্তানরাই আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছেন। এ সকল মানুষের নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন না করতে পারলে আমরা যে সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছি তা বাস্তবায়ন হবে না।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, সার্বভৌমত্ব কখনও এক বা দুই ব্যক্তির হয় না। বাংলাদেশের সমস্ত ১৮ কোটি জনগণ মিলেই হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। আর আমরা সার্বভৌমত্ব এতদিন এক ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। এটা হচ্ছে আমাদের ঐতিহাসিক ভুল বা ব্যর্থতা। সার্বভৌমত্ব কিন্তু একজনের হাতে তুলে দেয়া যায় না। সংবিধান প্রণয়ন করা হচ্ছে জনগণের কাজ।

জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের বিষয়ে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন। এখন বলা হচ্ছে তারা একটি ঘোষণাপত্র দিতে পারবে কি-না। এখানে ঘোষণাপত্র হচ্ছে যে কাজ করেছি তার রিপোর্ট পেশ করা। এখানে অনেকে মনে করছে ঘোষণা করে বিপ্লব হবে। কিন্তু অনেকে বিপ্লব করে ঘোষণা করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই আগস্টের গণহত্যার ওপর প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে কোটা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ অবধি প্রতিদিনের ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম প্রমুখ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত