টিসিবির ট্রাকে হুড়োহুড়ি-বিশৃঙ্খলা

দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায়ও মিলছে না পণ্য

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১: ০৩
টিসিবির পণ্য বিক্রি, ফাইল ছবি

পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে এবং নিম্ন আয়ের ভোক্তাদের চাহিদা বিবেচনায় টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির পরিধি বাড়ছে। এরই মধ্যে তিনটি বিভাগীয় শহরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় শুরু হয়েছে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই সব বিভাগীয় সদর ও ৫টি দরিদ্র পীড়িত এলাকাসহ মোট ১৩টি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে টিসিবি।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার খুলনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় রমজানে ট্রাকসেলে অতিরিক্ত ৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। সব বিভাগীয় সদর ও ৫টি দরিদ্র পীড়িত এলাকাসহ ১৩টি এলাকায় ১২ লাখ পরিবারের মাঝে ট্রাকসেলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করছে সরকার।

এদিকে এক মাস ৯ দিন বিরতি দিয়ে মাহে রমজান সামনে রেখে গত সোমবার থেকে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ছোলা, খেজুরসহ পাঁচ পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি শুরু করেছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। গতকাল বুধবার তৃতীয় দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে অনেককেই।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় টিসিবির সরবরাহ করা পণ্য একেবারেই অপ্রতুল। যেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মতো মানুষ পণ্য কিনতে লাইনে অপেক্ষা করছেন, সেখানে মাত্র ২৫০ জনকে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। এরপরও টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রির জন্য কোনো নিয়মনীতি না থাকায় হুড়োহুড়ি হচ্ছে। এতটাই বিশৃঙ্খলা যে, বয়স্ক ও অসুস্থরা লাইনে দাঁড়ানোর সুযোগই পাচ্ছেন না। সবমিলিয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রিতে ব্যাপক হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

টিসিবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের বিশৃঙ্খলা এড়াতে ট্রিপল নাইনে কল করেও পুলিশের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না।

অভিযোগ উঠেছে, নিম্ন আয়ের লোকেরা এ পণ্য কিনতে পারছে না, পণ্য বিক্রিতে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মনীতি না থাকায় মুহূর্তের মধ্যেই চলে যাচ্ছে সুবিধাবাদী সিন্ডিকেটের হাতে। তবে এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন টিসিবি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ভোগ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে হিমশিম খাওয়া মানুষের কাছে টিসিবি পণ্যের ওপর আগ্রহ বাড়ছেই। আগে শুধু স্বল্প আয়ের মানুষ টিসিবির পণ্য কিনলেও এখন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সবাই এখান থেকে পণ্য কিনছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনতে ভোগান্তি জেনেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন এসব মানুষ।

অভিযোগ উঠেছে, ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনের ব্যবস্থাপনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য থাকেন না। ফলে অনেকেই একাধিকবার পণ্য কিনে তা বেশি দামে বিক্রি করছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশনের নিচে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের খবর পেয়ে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কাজীপাড়া এলাকা থেকে কলেজপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে পণ্য কিনতে আসেন শেফালী আক্তার। তিনি নিজে সেলাইয়ের কাজ করেন। স্বামী কারওয়ান বাজারেই ফলের ব্যবসা করেন। পাঁচজনের অভাব অনটনের সংসার। শেফালী বলেন, এ সময় টিসিবির পণ্য পেলে কিছুটা হলেও সাশ্রয় হয়, তাই মেয়েকে নিয়ে বেলা ১১টায় এসে বিকাল ৪টার দিকে পণ্য কিনতে পেরেছেন। তবে তার সঙ্গে আসা আরো কয়েকজন পণ্য কিনতে পারেননি।

এভাবে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা তামান্না, মুন্নি, মনোয়ারা, মনিকা, তাহমিনা, নাজনীন, জুলহাস মিয়া, কালাম ও ঈমান আলীসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য কিনতে পারেননি। তাদের মতো এখান থেকে আরো ১৫০ জনের মতো নারী-পুরুষ খালি হাতে ফিরে গেছেন।

জুলহাস মিয়া বলেন, বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশের সহায়তায় টিসিবির পণ্য বিক্রি করলে নিম্ন আয়ের লোকেরা পাবেন। তা না হলে সরকারের এই মহৎ কাজের সুফল পাবে না সাধারণ মানুষ। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এটা সবার জন্য উন্মুক্ত, ফলে কেউ কিনতে চাইলে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, টিসিবি ৬৩ লাখ পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহ করছে সরকার। স্মার্ট কার্ড রূপান্তরের কাজে খুলনা অঞ্চলের সাফল্যের হার সবচেয়ে বেশি। চলতি মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে বাকি কার্ড এক্টিভেশন অর্জিত হবে এবং এর মাধ্যমে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়বে। এই সংখ্যাকে আরও বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ১২ লাখ পরিবারকে রমজান মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ট্রাকসেল কার্যক্রম চালু থাকবে। এর বিনিময়ে বাজারে পণ্যমূল্য আরো সহনশীল হবে। অতিরিক্ত ৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য ট্রাকসেলে মাধ্যমে বাজার নিম্নগামী হবে, বাজার সহনশীল হবে। প্রান্তিক মানুষের জীবনে স্বস্তি আসবে বলে আশা করছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগ্ম পরিচালক (অফিস প্রধান) হুমায়ুন কবির বলেন, কার্ডধারী সুবিধাভোগীর বাইরে এই ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৫০টি ট্রাকের প্রতিটিতে ২৫০ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এরপরও চাহিদা থাকতে পারে। তবে পণ্য বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে স্পটের শিডিউল করা হয়। ফলে এত দ্রুত এ নিয়ে অনিয়মের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ২/১ দিনের মধ্যেই সব বিভাগীয় সদর ও ৫টি দরিদ্র পীড়িত এলাকাসহ মোট ১৩টি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে টিসিবি।

প্রসঙ্গত, যে কোনো ভোক্তা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি করে মসুর ডাল ও ছোলা, এক কে‌জি চিনি এবং ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম রাখা হবে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা, মসুর ডাল ও ছোলা ৬০ টাকা এবং খেজুর ও চিনি ১৫৫ টাকা দামে বিক্রি করবে টিসিবি।

এমএস

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত