কুমিল্লা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কম রংপুরে

আসন পুনঃবিবেচনায় ইসিতে জমা পড়েছে ১৭৬০টি আবেদন

গাজী শাহনেওয়াজ
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২১: ২৪

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃবিবেচনার জন্য গতকাল রোববার পর্যন্ত ১ হাজার ৭৬০টি আবেদন জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। ‎ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার তৈরি করা এক প্রতিবেদন থেকে এতথ্যটি জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার সংক্ষুদ্ধরা আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে এনে মানববন্ধন করছে। রোববার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর ঢাকা-২ আসনের সংক্ষুদ্ধ কয়েকশ মানুষ একত্রিক হয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে ইসিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। অভিযোগে জানানো হয়, কামরাঙ্গীরচর থানার ৫৫, ৫৬, ও ৫৭ এই তিনটি ওয়ার্ডের জনসংখ্যা ২০ লাখ এবং তিনটি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ। এই ওয়ার্ডগুলো ঢাকা-২ আসনের সঙ্গে ছিল। কিন্তু এবার সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাসের প্রকাশিত খসড়াতে ৫৫ নং ওয়ার্ডকে ঢাকা-১০ এবং ৫৬ ও ৫৭ নং ওয়ার্ডকে ঢাকা-৭ এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিভাজন কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইসিকে ওয়ার্ড তিনটি পুনঃবিবেচনার দাবি জানিয়েছেন সংক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। এর আগে গত ১০ আগস্ট ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৫ এ দুটি আসনের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক অসুবিধা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও ভোটার সংখ্যার বৈষম্য নিরসনের জন্য আসন পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আবেদন জানিয়েছেন ঢাকা-৪ আসনের মো; জুম্মন মিয়া গংরা।

তাদের দাবি, কদমতলি থানাধীন সিটির ৬০ ও ৬১ নং ওয়ার্ড দুটি ঢাকা-৪ আসনের অধীভুক্ত এলাকা। কিন্তু অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিগত কমিশন তাদের ইচ্ছাধীন পলাতক আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত জনপ্রতিনিধিদের সুবিধার জন্য ৬০ ও ৬১ নং ওয়ার্ড দুটি ঢাকা-৫ এর অধীন করে সীমানা বিন্যাস করেছিল। এর ফলে মানুষের ভোগান্ত্রি বেড়েছে। এমনকি ভোটার সংখ্যাতে বড় তারতম্য রয়েছে। অভিযোগে আরও জানানো হয়, ঢাকা-৪ আসনে ৪৭, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৮ ও ৫৯ মোট ৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ২২৮জন।

একই ভাবে, ঢাকা-৫ আসনটি ৪৮, ৪৯, ৫০, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯ ও ৬৯ মোট ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনের ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৪ হাজার ৭ জন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এই পরিবর্তনের সরকার ও কমিশন দায়িত্ব পালন করছে মানুষের স্বস্তি ও বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে। তাই ঢাকা-৪ আসনের সঙ্গে কদমতলী থানাধীন ৬০ ও ৬১ নং ওয়ার্ডটি যুক্ত করা হলে যেমন প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় থাকবে এবং পাশাপাশি ভোটার সংখ্যাতে ভারসাম্য বজায় থাকবে। ঢাকা-০৪ ও ঢাকা-০৫ আসনের ভোটার সংখ্যা হবে যথাক্রমে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫৯০জন ও ৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৪৫জন। ইসির প্রতি এলাকাবাসীর দাবি, রাজনৈতিক চাপে নয় সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে আবেদনের প্রেক্ষিতে আসনটি পুনর্বিন‌্যাস করা হলে প্রশাসনিক ভিত্তি তৈরি হবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, মোট ৮৩টি সংসদীয় আসনের পরিবর্তনে আবেদনগুলো জমা পড়েছে। সর্বোচ্চ আবেদন জমা পড়েছে কুমিল্লা অঞ্চল থেকে; যার সংখ্যা ৬৮৩টি । আর সবচেয়ে কম আবেদন জমা পড়েছে রংপুর অঞ্চল থেকে অর্ধশতটি।

সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে একক আসন হিসেবে কুমিল্লা-১ আসনে, ৩৬২টি। পিরোজপুর-১, পিরোজপুর-২ ও পিরোজপুর-৩ আসন থেকে আবেদন পড়েছে ২৮৭ টি। সিরাজগঞ্জ ৫ ও সিরাজগঞ্জ ৬ আসন থেকে আবেদন পড়েছে ২২০টি। এদিকে ঢাকার মধ্যে ঢাকা-১ আসনে আবেদন পড়েছে সবচেয়ে বেশি ৭৯টি।

গত ৩০ জুলাই ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ৬টি করা হয়। এবং বাগেরহাটের আসন ৪টি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়।

এ ছাড়া পরিবর্তন আনা হয় ৪০টি আসনে। এগুলো হলো-পঞ্চগড় ১ ও ২; রংপুর ৩; সিরাজগঞ্জ ১ ও ২; সাতক্ষীরা ৩ ও ৪; শরিয়তপুর ২ ও ৩; ঢাকা ২,৩,৭,১০,১৪ ও ১৯; গাজীপুর ১,২,৩,৫ ও ৬; নারায়ণগঞ্জ ৩,৪ ও ৫; সিলেট ১ ও ৩; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৩; কুমিল্লা ১,২,১০ ও ১১; নোয়াখালী ১,২,৪ ও ৫; চট্টগ্রাম ৭ ও ৮ এবং বাগেরহাট ২ ও ৩ আসন।

‎ইসির প্রকাশিত ওই খসড়ার তালিকার ওপর ১০ আগস্ট পর্যন্ত আপত্তি আহ্বানও করা হয়। দাবি-আপত্তি থাকলে তা শুনানি শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত