তীব্র খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে দেড় কোটি মানুষ

ইমদাদ হোসাইন
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৬: ৫৭

চলতি বছরের মে থেকে ‍ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশের এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের (আইপিসি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

খাদ্য সংকট বাড়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি ২০২৪ সালের জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের কারণে আরো তীব্র হয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

খাদ্য সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার বিষয়ে আইপিসি বলছে, গত বছরের ঘূর্ণিঝড় রেমালের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব, বিশেষ করে সারা দেশে ব্যাপক বন্যা এর বড় কারণগুলোর একটি। তা ছাড়া স্থায়ী সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং টেকসই জীবিকা ছাড়াই কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীর (এফডিএমএন) বিশাল জনসংখ্যাও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতিকে আরো ঝুঁকিতে ফেলেছে। এর মধ্যে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আগমন এবং তহবিলের ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করছে।

প্রতিবেদনে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পাঁচটি পর্যায় উল্লেখ করে আইপিসি। প্রতি বছর সংস্থাটি এ ধরনের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। আইপিসি প্রথম পর্যায় বলতে বোঝায় যেসব জনগোষ্ঠী কোনো ধরনের খাদ্য সংকটে নেই। মে থেকে ডিসেম্বরÑএ ৯ মাসে দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় থাকবেন প্রায় চার কোটি ৬৪ লাখ জনগোষ্ঠী। আইপিসি দ্বিতীয় পর্যায় বলতে বোঝায় যাদের খাদ্য সংকট নেই, কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কিছুটা চাপে আছেনÑএমন জনগোষ্ঠী। আইপিসি দ্বিতীয় পর্যায় বা খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা চাপে থাকবেন এমন জনগোষ্ঠী তিন কোটি ৪২ লাখ ৫৭ হাজার।

আইপিসি তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে থাকা জনগোষ্ঠীই সবচেয়ে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকবেন। আইপিসি তৃতীয় পর্যায় বলতে বোঝায়, যেসব জনগোষ্ঠী তীব্র খাদ্য সংকটে রয়েছে। সংস্থাটির হিসেবে, মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে এক কোটি ৫৬ লাখ ১৮ হাজার। আর আইপিসি চতুর্থ পর্যায় বলতে বোঝায়, যারা এমন খাদ্যসংকটে রয়েছেন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তারা খাদ্যের ঘাটতি এবং তীব্র অপুষ্টির শিকার হবেন। ৯ মাসে এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারেন দেশের তিন লাখ ৬১ হাজার মানুষ। অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে মোট এক কোটি ৬০ লাখ জনগোষ্ঠী রয়েছেন। পঞ্চম পর্যায় হচ্ছে দুর্ভিক্ষ। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয়।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাঈদুল আরেফিন আমার দেশকে বলেন, আমাদের এ মুহূর্তে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এজন্য অবশ্যই সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলগুলোতে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে এ বিশ্লেষক বলেন, আমাদের দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। তাছাড়া খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে কর্মসংস্থান বাড়ানোরও কোনো বিকল্প নেই। এটি সরকারেরও দায়িত্ব, পাশাপাশি সব নাগরিকেরও দায়িত্ব রয়েছে। এটি একা কেউ সমাধান করতে পারবে না।

আইপিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৮টি দুর্যোগপ্রবণ জেলায় পরিচালিত সাম্প্রতিক পুষ্টি মূল্যায়নে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সি আনুমানিক ১৬ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বা ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑপ্রায় এক লাখ ৪৪ হাজার তীব্র অপুষ্টি এবং প্রায় ১৪ লাখ মাঝারি তীব্র অপুষ্টি । একই সময়ে প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তাছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার শিকার হতে পারে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হচ্ছে, কক্সবাজার এবং ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির প্রবণতা রয়েছে। এ জনগোষ্ঠীর আনুমানিক ৮১ হাজার ৫৪৫ জন শিশু এবং পাঁচ হাজার গর্ভবতী নারী তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছেন বা ভুগবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংস্থাটির পূর্বাভাস দেওয়া সময়কাল (মে-ডিসেম্বর) বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং আঞ্চলিক সমন্বিত বহুবিপদ পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থার তথ্যানুসারে, নিরপেক্ষ পর্যায়ে কক্সবাজারের মতো কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া সারা দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে। তবে তিন-চারটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খাদ্য সংকট বাড়ার আরেকটি শঙ্কার কথা উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। মূলত বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দাতা সংস্থাগুলো তাদের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক মানবিক তহবিল ব্যবস্থার সংকোচন এবং দাতাদের আগ্রহের পরিবর্তনের ফলে আগামী সময়ে মানবিক সহায়তার পরিমাণ কমে যেতে পারে। দেশের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান সংঘাত, সামাজিক অস্থিরতা, সীমান্তজুড়ে অস্থিতিশীলতা এবং ঘূর্ণিঝড় ও আকস্মিক বন্যার মতো জলবায়ুগত ধাক্কা দেশের খাদ্য সংকটকে আরো তীব্র করবে বলে মনে করে তারা।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত