প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আলোচনা সভা

রুহুল আমিন গাজীকে একুশে পদক দেওয়ার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৯
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ১১

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকে একুশে পদক দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। ২৪ এর জুলাই আন্দোলনে অকুতোভয় সৈনিকের মতো ভূমিকা এবং ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবসময় তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিএফইউজে এবং ডিইউজের যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। এরপর রুহুল আমিন গাজীর রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।

আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন।

আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, মুরসালিন নোমানী, ডিইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিক মুহাম্মদ, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল বাশার, দপ্তর সম্পাদক আবু বকর, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মহসিন, উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক লাবিন রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ পলি, সিনিয়র সাংবাদিক হারুন জামিল, মুন্সীগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি বিপ্লব হাসান।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, রুহুল আমিন গাজী ছিলেন নির্যাতিত ও মজলুম সাংবাদিক। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে তাকে বিনাবিচারে, বিনা-অপরাধে ১৭ মাস কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। সে সময় তাকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়নি, এমনকি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও খাবার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বহু সাংবাদিক ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেছিলেন কিন্তু রুহুল আমিন গাজী কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেননি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আমার দেশ'র নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, রুহুল আমিন গাজী ছিলেন দেশপ্রেমিক, নির্ভীক সাংবাদিক। তার মৃত্যুতে আমরা আসলেই একজন অভিভাবক হারিয়েছি। আজকে আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি গাজী ভাইয়ের শূন্যতা। আজকে গাজী ভাইয়ের যে প্রয়োজন ছিলো, আমরা যারা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আছি, আমরা তা উপলব্ধি করতে পারছি। ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে তিনি ছিলেন অন্যান্য। তার মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এখন খুব প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২৪’র জুলাই আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলনে তার ভূমিকা অপরিসীম। ১৫ বছরের গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের আন্দোলনে গাজী ভাই ছিলেন মুখ্য চরিত্র। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজীকে একুশে পদক দেয়ার আহ্বান জানাই। তিনি (রুহুল আমিন গাজী) এ পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন রুহুল আমিন গাজী।

তিনি বলেন, দৈনিক আমার দেশ যখন বন্ধ করে দেয়া হয়, তারপর আমরা গাজী ভাইসহ সিরিজ বৈঠক করেছি, সমাবেশ করেছি। প্রতিটি সমাবেশে গাজী ভাই উপস্থিত ছিলেন। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে তিনি সোচ্চার ছিলেন।

নজরুল গবেষক ও যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, রুহুল আমীন গাজী মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পেছনে কে আছেন সেটি খেয়াল রাখেননি। সবসময় সাহস নিয়ে চলেছেন। সাংবাদিকদের যেকোনো দাবি আদায়ে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভীরু মানবেরে প্রবল করিতে চাহেন যে দুনিয়াতে, তারেই (তাকে) ইমাম, নেতা মানি আমি প্রেম মোর তার সাথে।’ এই ভীরু মানবে প্রবল করা, আড়ষ্ট মানবকে বলিষ্ঠ করা ছিলো রুহুল আমিন গাজীর কাজ।

বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, রুহুল আমিন গাজী ছিলেন সৎ, নির্ভীক ও সাহসী সাংবাদিকতার প্রতীক। সাংবাদিকতা জীবনে তিনি কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করেননি। ‘রুহুল আমিন গাজী মানুষ হিসেবে সজ্জন ছিলেন। আপাদমস্তক একজন সাংবাদিক হিসেবে সব সময় সত্যের পক্ষে কথা বলার সাহস জুগিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা তা লালন করি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসেন বলেন, রুহুল আমীন গাজীর শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। তিনি এমন এক সময় চলে গিয়েছেন যখন তার প্রয়োজন ছিল। সাংবাদিক ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর আদালতের একটি বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেসময় রুহুল আমিন গাজী যেভাবে আদালতে সাহসিকতার সঙ্গে একজন আইনজীবীর মতো ক্ষুরধার যুক্তি তুলে ধরেছিলেন, তা এক কথায় অবিস্মরণীয়।

মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, সততা, বিশ্বস্ততা এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন সাংবাদিক সমাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বাধিক এবং সর্বমহলে। গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য সবসময় কাজ করেছেন। রুহুল আমীন গাজী দেশের গণমাধ্যমে সাহসী ভূমিকা এবং সাংবাদিকতা পেশায় অনন্য অবদান রেখেছেন। গণতন্ত্র রক্ষায় আজীবন সামনের সারি থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন।

খুরশীদ আলম বলেন, রুহুল আমীন গাজী স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের জন্য লড়াই করেছেন। দল মতের ভিন্নতা থাকলেও জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সাংবাদিকদের মধ্যে অটুট বন্ধন দরকার। এই বন্ধনের ক্ষেত্রে রুহুল আমিন গাজী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন, দুই মেয়ে এবং স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আফফান আবরার আমিন তার পিতার কথা স্মরণ করে আবেগঘন বক্তব্য দেন।

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত