কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে: এহছানুল হক মিলন

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ৪১

সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড.আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেছেন, শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম হলো কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। যা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক দক্ষতা বাড়ায়, সৃজনশীলতাকে বিকশিত করে।

কারিগরি শিক্ষাকে সামাজিকভাবে নিম্নতর শিক্ষা মনে করার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়। আনুষ্ঠানিক হোক বা অনানুষ্ঠানিক রূপে হোক, এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে একীভূত করা দরকার। প্রয়োজনে এ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বা পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

তত্ত্বের বাইরে গিয়ে আমাদের তরুণদের চাকরির বাজার এবং শিল্প ও সমাজের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। এজন্য চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় থাকা দরকার। চাহিদামুখি শিক্ষা কেবল একটি পাঠ্যক্রম নয়। এটি একটি পদ্ধতি। যা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ সামলানোর সামর্থ্য তৈরি করে দেয়। মুখোমুখি হওয়ার জন্য স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করে। শিক্ষা জাতীয় প্রবৃদ্ধির জন্য একইসঙ্গে একটি বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতামূলক হাতিয়ার।

শনিবার সকালে এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই) উদ্যোগে খামারবাড়িতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এর মূল মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা,সমস্যা ও সম্ভাবনা’বিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে প্রাধন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি’র) চেয়ারম্যান প্রফেসর এসএমএ ফায়েজ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ,বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)-এর উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সাঈদ ফেরদৌস,বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রফেসর এ কে আজাদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরআই এর সদস্য সচিব সৈয়দ রেজওনুল কবির।

সেমিনারের মূল-প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামরুল আহসান। মূল প্রবন্ধে ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়ার সমন্বয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এছাড়াও সেমিনারে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার, শিক্ষাবিদ, নীতি নির্ধারক ও গবেষকবৃন্দ অংশ নেন।

চাহিদামুখি শিক্ষা কেবল কর্মী তৈরির জন্য নয় উল্লেখ করে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, এটি সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বাড়াবে, উদ্ভাবক ও নেতা তৈরি করবে। এর পাঠ্য তৈরি হবে প্রকৃত শ্রমবাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে। এর এর সুফল পেতে প্রয়োাজন হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিল্পের সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় ও প্রয়োজনীয় তহবিল।

এসবের সঙ্গে মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। তাহলে শিক্ষা কেবল আর গ্রেডের জন্য দৌড় থাকবে না, হবে অর্থপূর্ণ কর্মসংস্থান ও জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তি। সুনির্দিষ্ট দক্ষতা ছাড়া শিক্ষিত জনগোষ্ঠী কম্পাস ছাড়া জাহাজের মতো। কিন্তু চাহিদামুখী শিক্ষা চর্চায় আমরা একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।

তিনি সাংবিধানিকভাবে একটি শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও মেধার যথার্থ মূল্যায়নের জন্য তিনি ট্যালেন্টপুল গঠনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, মানব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার না করতে পারলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, দেশকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে নিডফুল এডুকেশন বা চাহিদা ভিত্তিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। এ ধরনের শিক্ষাই কেবল দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ চাহিদাভিত্তিক শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে বলেন, আধুনিক শিক্ষা কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। বিগত ৫২ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের কোনো গুণগত উন্নতি হয়নি। আমরা বাংলাদেশে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতেও বার্থ হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের অবস্থা একসময় বাংলাদেশের মতই ছিল কিন্তু আজ সেই দেশগুলোর মাথাপিছু আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর জন্য চাহিদা ভিত্তিক শিক্ষার একটি বড় অবদান রয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য সিলেবাস পরিবর্তন এর কাজ হাতে নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও চাহিদাভিত্তিক করে গড়ে তোলার জন্য কারিগরি, প্রযুক্তিগত ও পেশাভিত্তিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে গবেষণা সহযোগিতা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শিল্প-আকাডেমিয়া সংযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তারা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত