এবার ঈদে স্বস্তির যাত্রা

মাহফুজ সাদি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২: ৫৭

এবারের ঈদযাত্রার প্রথম তিনদিনে সড়ক, রেল ও নৌপথে অন্যবারের চেয়ে স্বস্তি দেখা গেছে। ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষের ঢাকা ছাড়ার ক্ষেত্রে তেমন চাপ লক্ষ করা যায়নি। এমনকি তেমন কোনো ঝক্কিঝামেলায়ও পড়তে হয়নি যাত্রীদের। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পাঁচ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় গতকাল বুধবার। যাত্রীদের চাপ এ তিনদিন (সোম থেকে বুধবার) কম থাকলেও আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে উত্তরের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কেও ২৬ পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা করা হচ্ছে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। যদিও এই দুই মহাসড়কে প্রতিটি ঈদযাত্রা ছাড়াও দীর্ঘ যানজট প্রায় নিয়মিত বিষয়।

গত তিনদিন রাজধানীর বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের চাপ তুলনামূলক কম রয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তিরও তেমন একটা অভিযোগ মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

এ তিনদিন যাত্রীদের চাপ কম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বুধবার স্বাধীনতা দিবসের সরকারি ছুটি থাকায় আগের দুইদিনের চেয়ে যাত্রীদের চাপ একটু বেড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়বে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার এই চাপ আরো বাড়বে, যা ঈদের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অনলাইনে ট্রেনের টিকিটের বিষয়ে যেসব অনিয়ম ছিল সেগুলোর অনেকটাই কমে গেছে। রেলের কোনো কর্মকর্তা টিকিট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। অলরেডি ২২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ঈদের সময় কোনো ট্রেনে সিট খালি থাকে না। ঈদের সময় প্রতিটি ট্রেনে ২৫ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হয়।

এর আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকা রেলস্টেশনের ভিআইপি রুমে ঈদে ট্রেন ও যাত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক বৈঠক শেষে রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার থেকে রেলযাত্রায় মূল ভিড় শুরু হবে। এই ভিড় চলবে গার্মেন্টস ছুটির দিন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।

এদিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলীসহ বাস টার্মিনালগুলোয় গতকাল যাত্রীদের তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম বলেন, যারা ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও চাঁদাবাজি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি অভিযোগ করে, যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদ বকশিশ বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় চলছে।

এদিন ঈদযাত্রায় গণপরিবহনে যাত্রীদের ভোগান্তি রোধে রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, ফুলবাড়ীয়া ও মহাখালী বাস টার্মিনালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে প্রতিটি কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায় এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে নীলাচল পরিবহনকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে তিন হাজার টাকা, কামারপাড়ায় গাইবান্ধাগামী নিউসাফা পরিবহনকে চার হাজার টাকা, মিরপুর ডি লিংক, নীলাচল পরিবহনে ভাড়ার চার্ট/তালিকা না থাকায় চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে অভিযান পরিচালনাকালে দোলা পরিবহন, গোল্ডেন লাইন ও এমাদ পরিবহনে ভাড়ার তালিকা না থাকায় ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া মিরপুরের রাইনখোলায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে লাবিবা পরিবহনকে ১০ হাজার টাকা, সোনারতরী পরিবহনকে ১০ হাজার টাকা, সেবা গ্রীন লাইন পরিবহনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা নিশ্চিতে বিশেষ উদ্যোগের কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী গৃহীত বিশেষ ব্যবস্থা তুলে ধরা হয়। সে অনুযায়ী ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-সিলেটসহ সব জাতীয় মহাসড়কে ঈদের সাতদিন আগে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ঈদের সময় সাতদিনের জন্য সব উন্নয়নকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

সদরঘাট, মহাখালী, সায়েদাবাদ, গাবতলী ও ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে সিসিটিভি ও সার্চলাইট স্থাপন করা হয়েছে এবং পুলিশ কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ঈদের সময় বিভিন্ন মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও লক্কড়ঝক্কড় যান চলাচল বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন বাস টার্মিনালে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

বিআরটিসি বিশেষ ঈদ সার্ভিস চালু করেছে এবং ৭৭৫টি বাস ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় পরিচালনা করা হচ্ছে।

ঈদযাত্রার সময় যাত্রীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বিআরটিএ কন্ট্রোলরুম সার্বক্ষণিক চালু থাকবে। যোগাযোগের জন্য বিআরটিএ কন্ট্রোলরুমের মোবাইল নম্বর—০১৫৫০০৫১৬০৬, ০১৫৫০০৫৬৫৭৭ এবং ০১৫৫২১৪৬২২২।

বিষয়:

ঈদযাত্রা
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত